সচিব চাইলেন ক্যাসিনো, অর্থমন্ত্রী বললেন ‘ইলিগ্যাল’

47

বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহিবুল হক বলেন, এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোনে বিদেশিদের জন্য ক্যাসিনো থাকবে। আর বিকালে বিষয়টি অবহিত হয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বললেন, ক্যাসিনো হচ্ছে একটা জুয়া। জুয়া তো টোটালি ইলিগ্যাল। আমাদের দেশে কোনও প্রকারে কোনোভাবেই জুয়া চলে না।
এদিন বিকালে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত এক সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী একথা বলেন।
বিমান মন্ত্রণালয়ের সচিবের বক্তব্য অনুযায়ী বিদেশিদের আকৃষ্ট করতে কক্সবাজারে ক্যাসিনো করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের বাইরে যে নিয়ম-কানুন আছে, সেগুলো তো আমাদের দেশে চলবে না। ক্যাসিনো তো চলতেই পারে না। অবৈধ কাজ তো সরকার আইন করেও বৈধ করবে না।
অর্থমন্ত্রী বলেন, এখানে কেউ অবৈধভাবে টাকা অর্জন করলেই এনবিআর এসে টাকা নিয়ে যাবে না। নেওয়ার কোনও আইন নাই। এনবিআর এ বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় এগোবে। এর বাইরে যাবে না।
ক্লিনিং যে অপারেশন হচ্ছে এটা গুড ওয়ার্ক। আমার মনে হয় দেশের সব মানুষ এটাকে সাপোর্ট করছে। ক্যাসিনোতে যেসব বিদেশি কাজ করছে তাদের বিষয়টা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেখবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী। খবর বিডিনিউজ ও বাংলা ট্রিবিউনের
এর আগে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলীকে পাশে নিয়ে সচিব মহিবুল হক সংবাদ সম্মেলনে জানান, দেশের ক্লাবগুলোতে জুয়ার আয়োজনের বিরুদ্ধে অভিযান চললেও কক্সবাজারে প্রস্তাবিত বিশেষ পর্যটন অঞ্চলে ক্যাসিনোসহ আধুনিক সব আয়োজন থাকবে। তবে সেসব ক্যাসিনোতে দেশের মানুষরা ঢুকতে পারবেন না; শুধু বিদেশিরা পাসপোর্ট দেখিয়ে সেখানে প্রবেশাধিকার পাবেন।
মহিবুল হক বলেন, ক্যাসিনো পর্যটকদের জন্য দরকার। মালয়েশিয়াতে ক্যাসিনো আছে, যেগুলোতে পাসপোর্ট দিয়ে ঢুকতে হয়। আমরা তো তাদের জন্য এধরনের কোনো সুযোগ-সুবিধা দিতে পারছি না। আমরা যেখানে এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন করব, সেখানে বিদেশিদের জন্য এসব সুযোগ-সুবিধাগুলো থাকবে।
সচিব বলেন, তবে ক্লাবগুলোতে যেসব ক্যাসিনো চলছে তা সম্পূর্ণ অবৈধ। ক্যাসিনো থাকবে শুধু বিদেশিদের জন্য।
ব্যাংককের মতো বিদেশিদের জন্য নাইট ক্লাবও থাকবে কিনা জানতে চাইলে পর্যটন সচিব বলেন, অন্য মুসলিম দেশগুলোতে বিদেশি পর্যটকদের জন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান আছে, বাংলাদেশে এক্সক্লুসিভ জোন হলে সে ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিতে তো অসুবিধা নাই।
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় প্রায় একহাজার একর জমিতে ‘সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক’ নামে বিশেষ এ অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। সেখানে একাধিক হোটেল, কটেজ, বিচ ভিলা, নাইট ক্লাব, কনভেনশন হল, অ্যামিউজমেন্ট পার্কের মতো সুযোগ-সুবিধা থাকবে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে পর্যটন সেবাদাতাদের কাছ থেকে জমি বরাদ্দের আবেদনও চাওয়া হয়েছে।
কক্সবাজারে এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন করার পাশাপাশি তিন পার্বত্য জেলাতেও পর্যটকদের জন্য কী সুযোগ-সুবিধা দেয়া যায় তা নিয়ে গবেষণা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
বেসরকারি ট্যুর অপারেটরদের জন্য কোনো আইন এবং ট্যুর গাইডদের জন্য কোনো নীতিমালা নেই জানিয়ে সচিব বলেন, আমরা এগুলো তৈরি করেছি। আশা করছি, নভেম্বরের ভেতরে গেজেট নোটিফিকেশন হয়ে যাবে।
সম্ভাবনাময় পর্যটন এলাকা থাকলেও সেগুলোকে আকর্ষণীয় পণ্য হিসেবে তুলে ধরার ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করেন মহিবুল।
তিনি বলেন, সুন্দরবন কিন্তু পৃথিবীতে দ্বিতীয়টা নেই। কিন্তু আমরা কি সেখানে পর্যটকদের জন্য কোনো ব্যবস্থা করতে পেরেছি? পারিনি। সেই কারণেই আমরা খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরায় স্পট বাছাই করে নিয়েছি। বিদেশি পর্যটকদের জন্য সেখানেও এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন করব।