সকালে উচ্ছেদ বিকেলে দখল

125

নগরীর বায়েজিদ এলাকার বাংলাবাজারে রাস্তা দখল করে দোকান নির্মাণ করে বাজার বসায় দিদার-মহিউদ্দিন-পানি জসিম চক্র। দীর্ঘদিন ধরে সে বাজার থেকে এককালীন অগ্রিম টাকা ও দৈনিক চাঁদা আদায় করে আসছে তারা। শুধু তাই নয়, বাজারকে মাদকের আখড়া হিসেবে গড়ে তুলেছে চক্রটি।
গত সোমবার সিটি কর্পোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনাকালে ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। এ সময় চারজন পুলিশ সদস্য আহত হন। গতকাল মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিন অভিযান চালিয়ে ৫০টি দোকান উচ্ছেদ ও রাস্তার উপর বসানো ২৮টি দোকান মালিককে মোট ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবে সকালে ম্যাজিস্ট্রেট উচ্ছেদ-জরিমানা করলেও বিকেলে পুনরায় দখল করে অর্ধশতাধিক দোকান বসায় পানি জসিম। এমনকি ম্যাজিস্ট্রেট ও স্থানীয় কাউন্সিলরকে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছে বলেও জানা গেছে।
এ ব্যাপারে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন পূর্বদেশকে বলেছেন, উচ্ছেদ অভিযানের পর পুনরায় দখল করাটা কখনও কাম্য নয়। এর নেপথ্যে যেই থাকুক ফের উচ্ছেদ করা হবে। জড়িত সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাস্তা দখল করে হকারগিরি এই নগরীতে আর চলবে না। এসব কর্মকান্ডের নেপথ্যে কে কাজ করছে তাকে খুঁজে বের করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
চসিক সূত্র জানিয়েছে, বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন বাংলাবাজার এলাকায় রাস্তার ওপর অবৈধভাবে দোকান বসিয়ে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করায় গতকাল প্রায় ৫০টি ভাসমান দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে। সকালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফিয়া আখতার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। অভিযানকালে দোকান বর্ধিত করে রাস্তা দখল করায় বাংলাবাজার এলাকার ২৮টি দোকানের প্রত্যেক মালিককে ৫ হাজার টাকা করে মোট ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযানের সময় উপস্থিত ছিলেন জালালাবাদ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. শাহেদ ইকবাল।
তিনি পূর্বদেশকে বলেন, প্রথম দিনে ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি ভাঙচুর করেছে। দ্বিতীয় দিনের অভিযানে এসব অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে। তবে বিকেল গড়াতেই আবার দখল করেছে পানি জসিম। স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে এই কাউন্সিলর আরও বলেন, দোকান বসানোর সময় পানি জসিম প্রকাশ্যে হুমকি দেয় যদি আবার ম্যাজিস্ট্রেট আসে তাহলে দেখে নেবে। কাউন্সিলর বা ম্যাজিস্ট্রেট কাউকে ওই এলাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাস্তা দখল করে দোকান ভাড়া দেওয়া এ এলাকায় নিত্যনৈমত্তিক ঘটনা। মহিউদ্দিন-দিদারের পালিত সন্ত্রাসী বাহিনীর নিয়মিত আড্ডা বাংলাবাজার এলাকায়। সূর্য ডুবলেই সেখানে চলে মাদকের রমরমা ব্যবসা। তাছাড়া বাংলাবাজার মোড়ে রয়েছে অবৈধ গ্রাম সিএনজি অটোরিকশার স্ট্যান্ড। যেখানে প্রায় তিনশ সিএনজি অটোরিকশা রয়েছে। সবগুলো থেকে দৈনিক ভিত্তিতে চাঁদা আদায় করে পানি জসিম।
কে এই পানি জসিম এমন প্রশ্নের জবাবে এলাকাবাসী জানিয়েছেন, জসিম একসময় ভ্যানে করে পানি বিক্রি করতেন, তাই তার নাম পানি জসিম। জানা যায় সে বিএনপি সক্রিয় ক্যাডার ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে মহিউদ্দিন দিদারের অন্যতম সহযোগী হিসেবে গড়ে তোলেন ত্রাসের সাম্রাজ্য। যেখান থেকে নিয়মিত সুবিধা পাওয়ায় নিরব থেকেছে বায়েজিদ থানা পুলিশ। যুবলীগ নামধারী দিদার মহিউদ্দিনের (প্রকাশ ধামা মহিউদ্দিন) অন্যতম সহযোগী হিসেবে প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করেন পানি জসিম ও মিল্টন বড়ুয়া এমন অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
শুধু চাঁদাবাজি নয়, তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। বায়েজিদ এলাকায় ভবন নির্মাণ সংশ্লিষ্ট ট্রাক ও শিল্প অঞ্চলের ট্রাক এবং সিএনজি চালিত পরিবহন থেকে চাঁদা আদায় করে থাকে। ভ‚মিদস্যুদের সাথে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বায়েজিদ থানাধীন আরেফিন নগর, চন্দন নগর, শেরশাহ, টেকনিক্যাল, বাংলাবাজার এলাকায় অবৈধভাবে পাহাড় কেটে জায়গা ভরাট করছে। স্থাপনাবিহীন জায়গা সুযোগ বুঝে টাকার বিনিময়ে দখল করে। স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক পরিচয়ে মাদক ও অবৈধ অস্ত্রশস্ত্র কেনাবেচার সাথে জড়িত বলে জানা গেছে। এতো অপরাধের সাথে জড়িত থাকার পরও পুলিশসহ স্থানীয়রা ওদের কাছে অসহায়। ভয়ে কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলছে না।
এ বিষয়ে বায়েজিদ থানার ওসি আতাউর রহমান খন্দকার পূর্বদেশকে বলেন, গতকাল (সোমবার) নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে সিটি কর্পোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেট বাংলাবাজার এলাকায় অভিযান চালায়। রাস্তার উপর গড়ে ওটা অবৈধ দোকানগুলো উচ্ছেদ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন সিটি কর্পোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেট। এ সময় অবৈধ দখলদারীরা তাদের উপর হামলা চালায়। এতে চার পুলিশ সদস্য আহত হন। এ ঘটনায় পানি জসিমকে প্রধান আসামি করে অজ্ঞাত দুইশজনকে আসামি করে মামলা করেছে বায়েজিদ থানা পুলিশ। দ্বিতীয় দিনের অভিযানের পর বিকালে পুনঃদখলের বিষয়ে তিনি বলেন, সকালে অনেক কড়াভাবে অভিযান চালানো হয়েছে। সেখানে আবার পুনঃদখল করা হয়েছে বিষয়টি জ্ঞাত নয়। তবে আমি খবর নিয়ে দেখছি। রাস্তার উপর যাতে কোনো দোকান ফের বসাতে না পারে সেজন্য আমরা সতর্ক রয়েছি।