সকলের ঘরে থাকার নির্দেশনা মানা জরুরি

46

দেশে জাতীয় সংসদের সপ্তম অধিবেশন সমাপ্ত হলো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সমাপনী বক্তব্যের মধ্যদিয়ে সংসদের এ অধিবেশনের সমাপ্তি ঘটে ১৮ এপ্রিল ২০২০। মূলত এটাছিল নিয়মরক্ষার সংসদ অধিবেশন। করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সংসদসহ যে কোন জনসমাবেশ বর্জন দেশের জন্য প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সাংবিধানিক বাধ্যবাদকতার কারণে তবুও জাতীয় সংসদের এ সপ্তম অধিবেশনটি অনুষ্ঠিত হলো। বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ তথা করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বিশ্বের ২০৯টি দেশে লকডাউন চলছে। সব কিছু বন্ধ রয়েছে দেশগুলোতে। অর্থনৈতিক ও সমাজিক, রাজনৈতিকসহ সকল কর্মকান্ড বন্ধ হয়েগেছে বিশ্বময়। বিশ্বের পরাশক্তির দেশসমূহসহ ২০৯টি দেশ করোনাভাইরাস জনিত কারণে সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা কতদিন চলবে তা বলতে পারছে না কেই। সবদেশ নিজদেশের জনগণকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ব্যস্ত সময় পার করছে। সব ধরনের উৎপাদন ও অর্থনৈতিক কর্মকাÐ এক প্রকার বন্ধ প্রায় ভাইরাস আক্রান্ত দেশগুলোতে। সব মিলিয়ে বিশ্ব পরিস্থিতি বড়ই সংকটজনক।
বাংলাদেশ ও বর্তমানে বিশ্বের করোনা আক্রান্ত দেশ সমূহের ন্যায় করোনা ঝুঁকিতে রয়েছে। আমাদের দেশ প্রধাণত জনসংখ্যার দিক থেকে ঘনবসতিপূর্ণ। এদেশে সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে করোনার প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণের। কিন্তু সমস্যা হলো বাঙালি খুবই আবেগ প্রবণ জাতি। স্বাধীনচেতা ও সামাজিক ভাবে মমতার বাঁধনে বিশ্বাসী। জাতীয় সংসদের সপ্তম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উষ্মা প্রকাশ করে বলেছেন ‘মানুষ ঘরে থাকার নির্দেশনা মানতেই চায় না’। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ উষ্মা প্রকাশ অমূলক নয়। সরকারি নির্দেশনা, প্রশাসনিক প্রচেষ্ঠা, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও সেনাবাহিনীর কঠোর পদক্ষেপ কোন কিছুরই তোয়াক্কা করছেনা দেশের সাধারণ মানুষ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যথার্থই বলেছেন এদেশের মানুষ যে যেখানে অবস্থান করছে সেখানে থেকে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করছেনা। স্বাভাবিক অবস্থার মতোই আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছে। লকডাউন ঘোষণার পর কর্মক্ষেত্রে কেউ আক্রান্ত এলাকায় থাকলে সেখানে থেকে করোনার পরিস্থিতি মোকাবেলা না করে দেশের বাড়িতে চলে যাচ্ছে। ফলে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে দেশময়। অন্যদিকে ধর্মীয় অন্ধআবেগ জনিত কারণেও করোনা ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে একধরণের ধর্মীয় নামধারি শ্রেণি। ধর্মে যেখানে জানাজা পড়া ফরজে কেফায়, সেখানে পাঁচ থেকে দশজন লোক জানাজা পড়ে মৃত ব্যক্তির জানাজার বিষয়টা শেষ না করে করোনা আক্রান্ত দেশে হাজারো লোকের সমাবেশ ঘটিয়ে জানাজার আয়োজন এবং বিভিন্ন জেলা থেকে জনতার আগমন সরকার ও দেশবাসীকে বড়ো দুচিন্তায় ঠেলে দিয়েছে নিছুক ধর্মীয় ও দলীয় আবেগ। জীবন বাঁচানো ফরজে আইন। ফরজে আইন লঙ্ঘন করে ফরজে কেফায়া জানাজায় উপস্থিত হয়ে দেশকে মৃত্যুপুরী বানানোর পথ সুগম করার বিষয়কে ধর্ম বলা যায় না। ভারতে তবলিগ জামাতের বিরুদ্ধে একই ধরণের কাজের জন্য অর্থাৎ জন সমাবেশ ঘটানোর জন্য হত্যা মামলা হয়েছে।
আমরা মনে করি এদেশে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জানাজার ঘটনার জন্য সরকারি ভাবে আদালতে মামলা হওয়া জরুরি। সরকারি নির্দেশনা কেউ ইচ্ছে করে অমান্য করবে তাকে ছেড়েদেয়া উচিত হবে না বলে মনে করে দেশে বাঁচার স্বপ্নেবিভোর বিবেকবান মানুষ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন বলে মনে করে আইন বিশেষজ্ঞরাও।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করোনা পরিস্থিতি উন্নত হবার পর দেশে দূর্ভিক্ষ কিংবা খাদ্যাভাব ঠেকাতে এবং অর্থনৈতিক মন্দা ঠেকাতে নানা পদক্ষেপে গ্রহণ করছেন। সাধারণ মানুষকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলো আমলে রাখতে হবে এবং কার্যকর পদেক্ষেপে সম্মিলিতভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। কোভিড-১৯ সমস্যা সরকার কিংবা প্রশাসনের একার সমস্যা নয়, সমগ্রদেশের আপামর মানুষের বাঁচামরার সমস্যা। এদেশের মানুষকে ধৈর্য্যরে সাথে বেচে থাকতে হবে এবং খাদ্য ও অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবেলার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে এর পাশাপাশি কৃষি ও অন্যন্য সেক্টরে কৌশলে এগিয়ে যেতে হবে। বিশ্বমন্দার প্রভাব আমাদের দেশকে এড়িয়ে যাবে এমন কথা আমরা জোর দিয়ে বলতে পারি না। ‘নগর পুড়িলে দেবালয়’ এড়ায় না, এ প্রবাদ আমরা জানি। বাংলাদেশ অদূর ভবিষ্যতে একটা মহাসংকটের মুখোমুখি হতে পারে। তাই আমাদের উচিত ঘরে থাকা। প্রয়োজনে ঘর হতে বের হলেও সামাজিক তথা শারিরীক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে। শারিরীক দূরত্ব বজায় রেখে প্রয়োজনীয় কাজ সমাধা করতে পারলে এদেশে করোনা সংক্রমণ ব্যাপক হবে না।
সুতরাং আমরা যাই করি শারিরীক দূরত্ব বজায় রেখেই করি। আর সরকারি নির্দেশনা মানতে অব্যস্ত হই।