সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় আবারও বেদখলের আশঙ্কা

59

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর শুরু হয়েছে কণফুলী নদী রক্ষায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম। গত চার দিনে ১৭০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এরমধ্যে ভবন, গুদাম, আধাপাকা ঘরও রয়েছে। এ অভিযানে ১০ কিলোমিটার এলাকা অবৈধ দখলমুক্ত করা হবে। উচ্ছেদের আওতায় রয়েছে ২১৮১টি অবৈধ স্থাপনা। কিন্তু সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় আবারো বেদখল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে জেলা প্রশাসন বলছে, কেউ আর দখল করতে পারবে না। সে ব্যবস্থাই করা হবে।
জানা যায়, আদালতের নির্দেশে গত সোমবার থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে জেলা প্রশাসন। প্রতিদিন সকাল ৮টার দিকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয় এবং শেষ হয় সন্ধ্যায়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় উচ্ছেদ শুরু হয়ে তা সন্ধ্যা নাগাদ চলে। এসময় ৩০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, কর্ণফুলীর নদীর মোহনা থেকে মোহরা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার তীরে গড়ে ওঠা দুই হাজার ১৮১টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। ইতোমধ্যে সদরঘাট, লাইটারেজ জেটি, মাঝিরঘাট, আনু মিয়া মাঝিরঘাট, লবণ ঘাট, ডিবি মসজিদসহ আশপাশের এলাকায় অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন পতেঙ্গা সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাহমিলুর রহমান।
জানা যায়, উদ্ধারকৃত ভূমি সংরক্ষণে কোনো প্রকার পদক্ষেপ এবং পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ না থাকায় আবারো বেদখল হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। ফলে উদ্ধার হলেও আগের চিত্র ধারণ করতে পারে। এর আগেও রেল এবং বন্দরের ভূমি উদ্ধারের পর ফের দখল হয়ে গেছে। বন্দর এবং রেলের কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশেই তা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উদ্ধার হওয়া ভূমিতে কিছু কিছু গাছ রোপণ করা হচ্ছে। কিন্তু বেশিরভাগ জায়গাই অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। যার কারণে যে কোনো সময় দখল করা সম্ভব হবে।
সূত্র জানায়, ১০ কিলোমিটার জায়গা উদ্ধারের পর সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। পুরো জায়গা স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করতে গেলে বিপুল অংকের অর্থের প্রয়োজন হবে। কিন্তু সেই বাজেট জেলা প্রশাসনের নেই। শুধু উচ্ছেদের জন্যই বাজেট দিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়।
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বলেন, উচ্ছেদের পর পরই আমরা গাছ লাগিয়ে রাখছি। এরপর কাঁটা তারের বেড়া দেয়া হবে। কেউ যাতে আবারো দখলে নিতে না পারে সেজন্য সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হবে। আশা করি দখলের সাহস কেউ করবে না। কেউ করলেই আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।
প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল কর্ণফুলী পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীটিকে রক্ষা করা। আদালতের নির্দেশে সেটা করা হচ্ছে। আমরা চাই আবারো যাতে কেউ দখল করে নিতে না পারে সেজন্য জেলা প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। উচ্ছেদ করা জায়গা সংরক্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে প্রভাবশালীরা আবারো দখল করে নেবে।
জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, তিন পর্যায়ে এ উচ্ছেদ চলবে। প্রথম পর্যায়ে সদরঘাট থেকে বারিকবিল্ডিং বাংলাবাজার ঘাট, দ্বিতীয় পর্যায়ে বাংলাবাজার ঘাট থেকে পতেঙ্গা এবং সর্বশেষ পর্যায়ে কালুরঘাট ব্রিজ থেকে মোহরা পর্যন্ত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। অনুসন্ধানে জানা যায়, দীর্ঘ ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে চলে আসছে এ দখল প্রক্রিয়া। এর সবটাই সরকারি জায়গা। বিগত বিএনপি জোট সরকারের আমলে দখল কার্যক্রম শুরু হয়।
জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট কর্ণফুলী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ৯০ দিনের মধ্যে দুই হাজার ১৮৭টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার কথা ছিল। কিন্তু ওই সময়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ তো হয়নি, উপরন্তু অবৈধ দখলদাররা আরও বেশি দখলে নিচ্ছে কর্ণফুলীকে। অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় সেসময় উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি বলে জানায় জেলা প্রশাসন।
কর্ণফুলী নদীর চাক্তাই, রাজাখালী, বাকলিয়া এলাকায় বেশি ভূমি দখল হয়েছে। এসব এলাকায় নদীর তীর দখল করে অন্তত ৭ হাজার বস্তিঘর গড়ে উঠেছে। বস্তিঘর ছাড়াও শুঁটকি আড়ত, মাছের খামার, মসজিদ, মন্দির, স্কুলসহ নানা স্থাপনাও নির্মাণ করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, কর্ণফুলী নদী ভরাট করে এসব বস্তিঘর নির্মাণ করা হয়েছে।