সংগঠনের অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে উঠছে ‘ইফতার মাহফিল’

154

অভিন্ন উদ্দেশ্যে সংঘবদ্ধ হওয়ার নামই সংগঠন। সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কাজ সম্পাদনে সমমনারা করে থাকেন বিভিন্ন সংগঠন। তবে লক্ষ্য যাই হোক না কেন? রমজান আসলেই একদিন সবাই মিলে ইফতার করা যেন সংগঠনের অন্যতম অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে। এই যেন সারাদিন সিয়াম সাধনার পর প্রিয় মানুষগুলোর সাথে একাত্ম হওয়ার সুযোগ। গত কয়েক বছর ধরে এই রীতির জনপ্রিয়তা বেড়েছে। তবে এবার নগরীর অনেক রেঁস্তোরা ২৯ রমজান পর্যন্ত অগ্রিম বুকিং দিয়ে রেখেছে বিভিন্ন সংগঠন। সংগঠনগুলোর এমন রেওয়াজের কারণে তরুণদের মাঝে একতা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ইফতারের ঘণ্টাখানেক আগে থেকে বহদ্দারহাটে ‘কাশ্মীর’ রেঁস্তোরায় একত্রিত হচ্ছিলেন তরুণরা। সবাই বাঁশখালী উপজেলার সন্তান। তবে পড়াশোনা করছেন নগরীর বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাঁশখালী স্টুডেন্টস্ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের ইফতার মাহফিল থাকায় সবাই একত্রিত হয়েছেন। রেঁস্তোরায় ঢুকতেই চোখে পড়ে বিরাজমান উৎসবমুখর পরিবেশ। সবাই অনেকদিন পর দেখা হওয়া মানুষটির সাথে আড্ডায় মশগুল। আড্ডার ফাঁকে একটি ‘সেলফি’ না হলে যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তাইতো আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে সেলফি তুলছেন সবাই। ইফতারের আধঘণ্টা আগে থেকে শুরু হয় আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন। তবে এই আয়োজনে আলোচনার চেয়ে মূখ্য হয়ে উঠেছিল অনুভূতি বিনিময়। গতকাল নগরীর ওই রেঁস্তোরায় সরেজমিনে গিয়ে এমনই চিত্রের দেখা মেলে। এটি শুধু একটি রেঁস্তোরার চিত্র নয়। গত কয়েকদিন ধরে নগরীর বেশ কয়েকটি এলাকায় ঘুরে এমনই দৃশ্যের দেখা মিলে।
কথা হয় রেঁস্তোরা ব্যবস্থাপনা পরিচালক যিকরু হাবিবীল ওয়াহেদের সাথে। তিনি পূর্বদেশকে বলেন, আমরা এবার প্রথমবারের মত রজমান ফেইস করেছি। ইতোমধ্যে ২৯ রমজান পর্যন্ত আমাদের রেস্টুরেন্ট বুক হয়ে আছে। শুধু আমাদেরটা নয়, নগরীর প্রায় ভালো রেস্টুরেন্টগুলোর একই অবস্থা।
তরুণদের কাছে বেশ জনপ্রিয় কলামিস্ট ও রাজনীতিক ড. মুহম্মদ মাসুম চৌধুরীর কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নব্বই দশকে আমরা যখন সিটি কলেজে ছাত্র রাজনীতি করছিলাম, তখন রমজানে সংগঠনের ব্যানারে ইফতার মাহফিল তেমন একটা হত না। রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলো ছোট আকারে ইফতার মাহফিল করতেন। সময়ের সাথে সাথে সংগঠনের ইফতার মাহফিলের রেওয়াজটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। যেখানে ধর্মের চেয়ে উৎসব-আনুষ্ঠানিকতা বেশি দেখা যায়। এখন তথ্য প্রযুক্তির যুগ। দূরের মানুষ ভার্সুয়ালি কাছে আসছে আর কাছের মানুষটি আরও দূরে সরে যাচ্ছে। আমাদের ভাব বিনিময়ের মাধ্যমে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। যেখানে রক্তমাংসের মানুষের সান্নিধ্য পাওয়া কঠিন। আর এই সময়ে এমন আয়োজন সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। যেখানে কোনো ভার্সুয়াল নয়, সরাসরি মানুষে-মানুষে ভাব বিনিময় হয়। যা তরুণদের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি করবে।