পূর্বদেশ ডেস্ক
শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয় গতকাল শুক্রবার স্থানীয় সময় ভোর পাঁচটার দিকে কারফিউ তুলে নেওয়া হয়েছে। পুলিশ বলেছে, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের বাসভবনের সামনে থেকে ১ নারীসহ ৪৫ বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে। বিক্ষোভের খবর সংগ্রহ করতে যাওয়া কয়েক সাংবাদিককেও আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ, বিক্ষোভকারী, নিরাপত্তাকর্মী, সাংবাদিকসহ প্রায় ৫০ জন আহত হয়েছেন। খবর শ্রীলঙ্কার ডেইলি মিরর অনলাইনের
পুলিশের মুখপাত্র এসএসপি নিহাল থালদুওয়া বলেছেন, কলম্বোর মিরিথানায় প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভের ঘটনায় ৩১ পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মী আহত হয়েছেন। তাঁদের কলম্বো ন্যাশনাল হাসপাতাল সিএনএইচ ও সাউথ টিচিং হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বিক্ষোভের ঘটনায় তিন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া আহত আরও চারজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এএফপির খবর বলছে, দেশের চরম অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতার নিন্দা জানিয়ে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের বাসভবনের সামনে করা বিক্ষোভ স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার সহিংস রূপ নেয়। শতাধিক বিক্ষোভকারী প্রেসিডেন্টের বাসভবনে ঢোকার চেষ্টা করেন। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনী গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। বিক্ষোভের পর শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয় রাতেই কারফিউ জারি করা হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও চিত্রে বিক্ষোভকারী নারী ও পুরুষদের ‘পাগল, পাগল বাড়ি যাও’ বলে
স্লোগান দিতে দেখা গেছে। বিক্ষোভকারীরা ক্ষমতায় থাকা রাজাপক্ষের পরিবারের সব সদস্যকে দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার জন্য দাবি জানান। রাজাপক্ষের বড় ভাই মাহিন্দা রাজাপক্ষে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী। তাঁর ছোট ভাই বাছিল রাজাপক্ষে অর্থমন্ত্রী। আরেক ভাই চামাল রাজাপক্ষে কৃষিমন্ত্রী। আর রাজাপক্ষের ভাতিজা নামাল রাজাপক্ষে ক্রীড়ামন্ত্রী।
কলম্বোর মিরিহানা আবাসিক এলাকায় রাজাপক্ষের বাসভবনের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা সেনাবাহিনীর একটি বাস ও পুলিশের গাড়িতে বিক্ষোভকারীরা অগ্নিসংযোগ করেছেন। তাঁরা ভাঙা একটি প্রাচীর থেকে ইট খুলে নিয়ে সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের দিকে ছোড়েন।
স্বাধীনতার পর থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা সবচেয়ে সংকটজনক পরিস্থিতিতে রয়েছে। শ্রীলঙ্কার জনসংখ্যা ২ কোটি ২০ লাখ। দেশটির সরকারের কাছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নেই। এ কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানিসহ জরুরি পণ্য আমদানি করতে পারছে না সরকার।
ডিজেল না থাকায় গতকাল শ্রীলঙ্কায় বাস চলাচল করতে পারেনি। জ্বালানিসংকটে অনেকেই ব্যক্তিগত গাড়ি রাস্তায় বের করছেন না। জ্বালানিসংকটে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় শ্রীলঙ্কাজুড়ে গতকাল টানা ১৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। দেশটিতে এর আগে কখনোই এত বেশি সময় বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার ঘটনা ঘটেনি। বিদ্যুৎ-সংকটে পড়ে দেশটির প্রধান শেয়ারবাজারে লেনদেনও বন্ধ হয়ে গেছে। দেশটিতে হু হু করে বেড়ে গেছে নিত্যপণ্যের দাম। কাগজের সংকটে অনুষ্ঠিত হয়নি পাবলিক পরীক্ষা। বন্ধ হয়ে গেছে দৈনিক পত্রিকার ছাপা সংস্করণ। প্রয়োজনীয় ওষুধের অভাবে সরকারি বেশ কয়েকটি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার বন্ধ রয়েছে।