শ্রীলংকায় হামলার মূলহোতা এখনও জীবিত?

31

ইস্টার সানডে-তে চালানো সিরিজ আত্মঘাতী বোমা হামলার মূলহোতা এখনও জীবিত রয়েছে বলে ধারণা করছে শ্রীলঙ্কা। গত রবিবার এসব হামলায় ৩৫৯ জন নিহত হওয়ার ঘটনার মূলহোতা হিসেবে উগ্রপন্থী ইসলামী ব্যক্তিত্ব জাহরান হাশেমিকে দায়ী করছে শ্রীলঙ্কার গোয়েন্দারা। মোহাম্মদ কাশিম মোহাম্মদ জাহরান নামেও পরিচিত এই সন্দেহভাজন হামলাকারী। মঙ্গলবার আমাক নিউজ এজেন্সি খ্যাত আইএস’র প্রচারণামাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে সাত আত্মঘাতী হামলাকারীর সাথে একমাত্র হাশেমির মুখখোলা অবস্থায় দেখা গেছে। তাকেই হামলার মূলহোতা বলে দাবি করেছে আমাক। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির সিংহলিজ সার্ভিসের খবরে বৃহস্পতিবার জানানো হয়েছে হাশেমির মৃত্যুর খবর এখনও নিশ্চিত নয়। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে, আরও হামলার আশঙ্কায় জনমনে উদ্বেগ বাড়ার মধ্যে সন্দেহভাজন অপরাধীকে খুঁজতে তল্লাশি এলাকা বিস্তৃত করেছে দেশটির পুলিশ।-খবর বাংলা ট্রিবিউনের
গত রবিবার খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের ইস্টার সানডে উদযাপনকালে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো ও তার আশপাশের তিনটি গির্জা ও তিনটি হোটেলসহ আটটি স্থানে হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৫৯ জনের প্রাণহানির খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। আহত হয়েছে ৫০০ জনেরও বেশি। শ্রীলঙ্কার পুলিশ এসব হামলার জন্য স্থানীয় উগ্রগোষ্ঠী ন্যাশনাল তাওহীদ জামাতকে (এনটিজে) দায়ী করে। তাদের আশঙ্কা আন্তর্জাতিক জঙ্গির সহায়তায় এই হামলায় চালিয়েছে এনটিজে। মঙ্গলবার কোনও প্রমাণ ছাড়াই ‘আমাক’-এ সিরিজ বোমা হামলার দায় স্বীকার করে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস। পরে এক ভিডিওতে আট হামলাকারীর ছবি প্রকাশ করে সাত হামলাকারীর হামলার বিবরণ প্রকাশ করা হয়।
আরবি ও সিংহলি ভাষায় প্রকাশিত আমাক-এ প্রকাশিত আইএস-এর ভিডিও ও ছবি বিশ্লেষণ করে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ওই জঙ্গি সংগঠনের পক্ষ থেকে সাত আত্মঘাতী হামলাকারীর হামলার বিবরণ হাজির করা হয়েছে। তাদের দাবি, কলম্বোর কোচিচিকাদের সেন্ট অ্যান্থনি চার্চে আত্মঘাতী হামলা চালায় আবু হামজা। নোগোম্বো শহরে সেন্ট সিবাস্তিয়ান চার্চে হামলা চালায় আবু খলিল। বাট্টিচালোয়ার জিওন চার্চে আবু মুহাম্মদ তৃতীয় বিস্ফোরণটি ঘটায়। এছাড়া আবু উবাইদা, আবু বারা ও আবু মুখতার চিন্নামোন শহরের সাংগ্রি লা হোটেল ও কলম্বোর কিংসবারি হোটেলে কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটায়। এছাড়া আব্দুল্লাহ পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এবং তাদের তিনজনকে হত্যা করে বলেও আইএস দাবি করেছে। তবে বিবৃতিতে মুখ খোলা ব্যক্তির হামলা প্রসঙ্গে কোনও কিছু বলা হয়নি। তাকে শুধুমাত্র এই হামলার মূলহোতা বলে দাবি করা হয়েছে।
আইএস-এর বার্তা সংস্থা আমাকে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে আইএসএর পতাকার সামনে আট হামলাকারীর মাঝে রয়েছে হাশমি। যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, একমাত্র তাকেই মুখ খোলা অবস্থায় দেখা গেছে।
শ্রীলঙ্কার সরকারের ধারণা রবিবারের হামলার পেছনে রয়েছে ন্যাশনাল তাওহীদ জামাত (এনটিজে) নামে একটি উগ্রবাদী গ্রæপ। গ্রæপটির সন্দেহভাজন নেতা হাশমি নিহত হয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়েছিল। তবে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির সিংহলিজ সার্ভিসের খবরে বৃহস্পতিবার জানানো হয়েছে এখনও তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত নয়। ডেপুটি প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুয়ান বিজয়াবর্ধনের এক বিবৃতির বরাতে ওই খবর দেয় বিবিসি। তবে সুনির্দিষ্টভাবে হাশমির ভাগ্য নিয়ে কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান ডেপুটি প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
রবিবার চালানো সিরিজ আত্মঘাতী হামলায় জাহরান হাশেমিকে শ্রীলঙ্কার গোয়েন্দারা দায়ী করার পর থেকে তার ভাগ্য এখনও অজানা রয়েছে। এর আগে খবরে প্রকাশ পেয়েছিল যে সাংরি লা হোটেলের বুফে নাস্তায় নিজেকে উড়িয়ে দেয় হাশমি। তবে পুলিশ এই খবরের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে।
ভারতের সিএনএন নিউজ ১৮ প্রথম এই হামলায় হাশমির সম্পৃক্ততার খবর সামনে আনে। সংবাদমাধ্যমটির দাবি করে কলম্বোর ভারতীয় হাইকমিশনে হামলা হতে পারে বলে লঙ্কান পুলিশকে এপ্রিলের শুরুতে সতর্ক করে দেয় ভারতীয় গোয়েন্দারা।
আইএসপন্থী সামাজিক যোগাযোগের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে গত কয়েক বছরে অমুসলিমদের বিরুদ্ধে জ্বালাময়ী বক্তব্য দিয়ে হাজার হাজার অনুসারী যোগাড় করেছে হাশমি।