শ্রদ্ধা, স্মরণ ও কিছু কথা

53

মোঃ নাজিম উদ্দীন

যান্ত্রিকতার যুগে এই গত কয়েক দশক আগে থেকেই ব্যাপক ডামাডোলের মধ্যেও হাজার প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে বরাবরই উজ্জ্বল সাফল্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন, তৃণমূল পর্যায় থেকে প্রায়ই সাফল্যের চুড়ায় অবস্থান করতে সক্ষম হওয়া এক সফল শিল্প গ্রুপের নাম ‘এস.আলম গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজ’! একইসাথে পটিয়া উপজেলার আপাদমস্তক প্রতিটি জনগণের হৃদয়ে যে কখন থেকে বসত গড়লো, তাও এক আশ্চর্য রকম মানবতার বিশুদ্ধ পঙক্তিমালার মধ্য দিয়েই। আজ পটিয়া উপজেলার প্রতিটি ঘরে ঘরে যেনো বেকারত্ব শব্দটি তাচ্ছিল্যের হাসি। চলছে অনগ্রসর পরিবারের যে সন্তানটি ক্লাশের পেছনের বেঞ্চের অবহেলিত থাকতো, সেই ছেলেটি ও যার পর নাই প্রতিযোগিতায় লিপ্ত, তাকে এগিয়ে যেতে হবেই। প্রায়ই প্রতিটি ঘরে ঘরে বিবিএ, এমবিএ কখন কমপ্লিট করবে হন্তদম্ব অবস্থা। কারণ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তার কর্মস্থল নিশ্চিত করে প্রতিটি ঘরে অন্ন, বস্ত্র, নিরক্ষরতা ই দূর করেন নি, সাথে এলাকায় হতদরিদ্র, ক্ষুধার্ত, নিতান্তই পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের আসমানী দের খুঁজে বের করে তাদের জন্য মৌলিক অধিকার পুরোপুরি নিশ্চিতই করেন নি, তাদেরকে পবিত্র হজ্বব্রত পালন করিয়েছেন নিজ খরচে।
এস.আলম গ্রুপ আমাদের নয়,আমার। শুধু আমি ব্যক্তি নাজিম এর নয়, পুরো পটিয়া উপজেলার সর্বস্তরের অধিবাসীদের, সেই অধিকারটি’তে ভীষণভাবে ধাক্কা খেলো, হারানো এই অভিভাবক এর শহীদ ইন্তেকালের মধ্য দিয়ে। প্রকৌশলী মোর্শেদ সাহেব এর সাথে জানাশুনা না থাকলেও, অপর ভ্রাতা প্রকৌশলী শহিদ সাহেব এর মাধ্যমে এ পরিবারের সাথে সম্পর্ক ও চেনাজানা। প্রকৌশলী জনাব শহিদ সাহেব এর সাথে ঘন ঘন ফোনালাপ বা চুটিয়ে মাখামাখি না থাকলেও আমার সাথে আজো রয়েছে আত্মিক সম্পর্ক। সেই পোর্ট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে (সম্ভবত: ২০০৯ সাল) নদীতে নোঙর করা লাইটার জাহাজ থেকে চিনির কাঁচামাল লুট বন্ধে আমার বিশেষ ভূমিকা ও তৎপূর্বাহ্নে লুটকৃত মালামাল ট্রাক ভর্তি পাচারকালে আটক, উদ্ধার এবং আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ ইত্যাদিতে পর্দার আড়ালে আমার নির্দেশনা, একই সাথে প্রতিপদে সম্পৃক্ততা এবং এক্ষেত্রে কোনোরূপ সৌজন্য সম্মানী গ্রহণ না করে লজ্জিত বদনে ফিরিয়ে দেয়াই, বোধ হয় এই মহৎ মানুষটি আমার প্রতি বিষ্মিত হয়ে আকৃষ্ট হয়েছিলেন। যদিও অভ্যাসগতভাবে আমি বিত্তশালী দের সাথে একটু দূরত্ব বজায় রাখতে স্বস্তিবোধ করি।
আনোয়োরা উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, সমাজ হিতৈষী ব্যক্তিত্ব নিখিল বাবুর মাধ্যমে তিনি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মোবাইল ফোনে বিষ্ময়প্রকাশ এবং পটিয়ার ছেলে হিসেবে আমাকে নিয়ে গর্ব প্রকাশ করেছিলেন। সাথে এক কাপ চায়ের দাওয়াত দিয়ে যথাসময়ে আসছি কিনা খবর নিয়ে রিসিপশনে বলে রেখেছিলেন, যা আমাকে দায়িত্বপরায়ণতা ও পরমর্যাদা শীলতার শিক্ষা দেয়। রিসিপশনে সৌভাগ্যবশত: দেখা হয়েগেলো আমাদের পটিয়ার গণমানুষের আরেক অভিভাবক জনাব ইদ্রিস মিয়া (সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান) সাহেব এর সাথে। তিনি কূশল বিনিময়ের সাথে রিসিপশনিস্টকে তাগিদ দিলেন “এই উনি আমাদের লোক, সাথে সাথে উত্তর- স্যার আগেই বলে রেখেছেন স্যার, এবং তিনি অপেক্ষা করছেন। যা একইসাথে আমাকে বিষ্মিত এবং লজ্জিতও করে। আমাকে যথারীতি একজন নিয়ে গেলেন প্রকৌশলী শহীদ সাহেব এর রুমে। তার অভ্যর্থনা আতিথেয়তা, আবেগ, আলোচনা সারল্যতা পুনঃপুনঃ বিষ্মিত করে চলেছিলো আমায়। আলাপ চারিতায় লক্ষণীয় ছিলো মাতৃভক্তি, হৃদ্যতাপূর্ণ ভাতৃত্ববন্ধন শিক্ষণীয় ও আবেগ ঘন করতে বাধ্য যেকোনোও মানুষ কে। মাদার ভ্যেসেল অর্ডারের নকশা প্রণয়নরত এই মহান প্রকৌশলী এক মুহূর্তের জন্যও অমনোযোগী হননি আপাদমস্তক সামনে বসা আমার প্রতি। এমনকি অন্য কোনোও আগন্তুককে প্রবেশ এর অনুমতিও দেন নি, আমাদের আলাপচারিতার মধ্যিখানে। এ সকল আন্তরিক ও স্বশ্রদ্ধ বৈশিষ্ট্য আমার বিনয়ের নতুন সংজ্ঞায় পরিচয় করিয়ে দেয়। সম্ভবত তখনো পর্যন্ত তাঁরা ব্যংকিং সেক্টরে প্রবেশ করেন নি, কেননা, এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলছিলেন, আল্লাহ্’র অশেষ মেহেরবানী তে আমাদের শিল্প কারখানা এখন এগারো টি। ব্যাংক ঋণের বিষয়ে তিনি বলেন আল্লাহ্’র অশেষ মেহেরবানী তে আমাদের এখনো কোনো ব্যাংক ঋণ নেই। তৎ প্রেক্ষিতে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, একান্তই পেশাদারিত্বের সঙ্গে সততা ও নিষ্ঠার সমন্বয়ে গড়ে তোলে প্রকৌশলী ভাতৃদ্বয়ের চৌকস মেধা, মাতৃ শিক্ষা, বংশীয় ও সূত্রগত বৈশিষ্ট্যের ক্ষুরধার শৈল্পিকতার শিষ্টাচার এই শিল্প গ্রæপের উত্থানের প্রধান উপলক্ষ।
চলমান করোনা তাÐব এর নিশ্চিত পরিণতি চেয়ে থাকতে পারেন নি এই ভাতৃদ্বয়। আল্লাহ্ পাকের এ এক নেয়ামত রূপে যেনো অবতীর্ণ হতে যুৎসই ক্ষণেই বরাদ্দ করে গড়পড়তা পরিবার প্রতি নগদ অর্থ (৩,০০০/=) তিন হাজার। প্রসঙ্গত সেদিন মা’কে দেখতে গিয়ে পথে পথে চোখে পড়ে কিছু মানুষ মানুষের জটলা। পরিচিত অপরিচিত মিলিয়ে দেখাতে একটি যায়গায় গাড়ি থামালাম। ধীর গতিতে এগিয়ে যেতেই যেনো হুমরী খেয়ে প্রায়ই একই সাথে ঝাপটে ধরে সে কী কান্নার রোল, আচমকা সৃষ্ট আবেগ ঘন পরিবেশে নিজেকে সামলে নিতে পারলাম না। এ দৃশ্যের অবতারণা কালে অবলোকনকারী হেন কোন লোক অশ্রæসিক্ত বৈ গোচরে আসেনি আমার। ঠিক যেন আপন পরিবারের কর্তা ব্যক্তিটি বিগত হয়েছেন, সাথে শোকাবিভূত মানুষ এর মুখে ধ্বণিত হচ্ছিলো, ভাই আপনিও সতর্ক থাকবেন। আপনারা আমাদের নিলেন কালের আশার আলো, আমাদের কে আর কে দেখবে ভাই। নিদারুণ এই আহাজারি ভারী হয়ে উঠছিলো আঁচ করে, সকল কে আপন আপন ঘরে অবস্থান করার বিনীত অনুরোধ জানিয়ে কোনো রকম গাড়িতে উঠে পড়েলেও, ততোক্ষণে গাড়ির চালক এর অবচেতনেই তার নয়ন জলে ভেসেছে বুক। বাক দিলে সম্বিত ফিরে পেতেই স্থান ত্যাগ করি। এহেন পরিবেশ তথা পটিয়ার ইতিহাসে নির্বাক শোকতুরতা আমার জানা মতে এ যাবৎ কালে পরিলক্ষিত হয়েছে বলে জানা যায় নি।
সমাজের ভন্ড, কীট, দালাল স¤প্রদায়ভূক্ত মানুষগুলোর তাবৎ শুভবুদ্ধির উদয় হউক চলমান মহামারী তান্ডব অবলোকনের মধ্য দিয়ে। অতি আশ্চর্যের বিষয় হলো এই যে, এতো বিশাল আকৃতির আসমানী ফয়সালা কে ও তোয়াক্কা করছে না বণী আদম সম্প্রদায়ের একটি শ্রেণী। এখনো সোস্যাল মিডিয়ার বদৌলতে আমরা লক্ষ্য করছি যে, ত্রাণের মাল লুট হচ্ছে, ঘোষণা দিয়ে কূলাঙ্গার কতিপয় চেয়ারম্যান মেম্বার বা হাইব্রিড জাতের কিছু মুজিব কোটের শ্রদ্ধভেসে নেতৃত্বে থেকে বা পর্দার আড়ালে থেকে হানাহানি মারামারি খুন ধর্ষণ লুটেরা সম্পাদনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। চালিয়ে যাচ্ছেন বেহায়াপনার চূড়ান্ত নির্মম সমম্বয়। এ মুহূর্তে খেয়ে না খেয়ে নি:স্বার্থ অবদান রাখতে গিয়ে আত্মবলী দানে লিপ্ত হওয়া আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিটি ইউনিট, সেনা,নৌ, বিমান বাহিনীর সদস্যসহ আনসার সদস্য গণের জীবনবাজি রেখে মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঠেকাতে প্রায়ই আত্মোৎসর্গ করে দিতে কুণ্ঠাবোধ করছে না, স্বগৌরবে। কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে যাওয়া অবান্তর, কেননা এ উৎসর্গের শুধু শ্রদ্ধা-স্মরণ এবং সরকারের সংলগ্ন পরিবারের সমূদয় দায় দায়িত্ব নিয়ে ও শেষ হবার নয়, এটা অবশ্যই অনস্বীকার্য। তবে আমার শংকা এখানে নয়, এ সুযোগ এ জঙ্গি সংগঠন, ধর্ম ব্যবসায়ী, মাল্টিপল ক্রুসেড গোষ্ঠী, তথা মাদকের ভয়াল বিস্তার ভিতরে ভিতরে সমূহ বিপ্লব না ঘটে, মূল ধারার এ কাজটিতে তীক্ষ্ন দৃষ্টি রাখতে সক্ষম আছেন তো সংশ্লিষ্ট মহল ! আল্লাহ্ সোবহানু তায়ালা’র মেহেরবানী’তে আমরা কেটে উঠবো তাবৎ প্রতিকূলতা। আমরা বাংলাদেশের ধৈর্য শীল জনগণ, তা ভুলে গেলে চলবে না। মনোবল চাঙ্গা রাখতে হবে। সরকারের পদক্ষেপ সমেত কল নির্দেশনা ঘুণাক্ষরেও লঙ্ঘন করা যাবেনা। পারত: পক্ষে ঘরেই অবস্থান করুন। হেফাজত করবেন পরম করুনাময় আল্লাহ্ সোবহানু তায়ালা, আমীন।

লেখক : সার্জেন্ট অব পুলিশ, সিএমপি, চট্টগ্রাম
চেয়ারম্যান, বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী খায়ের জাহান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট, তেকোটা,
ধলঘাট, পটিয়া, চট্টগ্রাম