শ্রদ্ধাবোধের রাজনীতি

32

রাজনীতি পবিত্র শব্দ। রাজনীতি হলো উন্নত চিন্তা চেতনা দিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রকে উপকৃত করা। মানুষের কল্যাণ সাধন করা। রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক দেশে বহুদল থাকাটা রাজনীতির বৈশিষ্ট্য। স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক দল তাদের দাবি দাওয়ার জন্য আন্দোলন, সংগ্রাম, সভা সমাবেশ করবে। সেটা গণতান্ত্রিক দেশে সাংবিধানিক অধিকার। রাজনৈতিক দলের মধ্যে যারা জনগণের সমর্থনে ক্ষমতাসীন হবে, তারা দেশ চালাবে সেটা স্বাভাবিক বিষয়। ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে ভুলত্রæটি, নিয়ম অনিয়ম থাকবে না, হবে না সেটা কেউ গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারে না। কাজ করলে সেখানে ভুল অথবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, নিয়ম ভঙ্গ হয়ে থাকে। গণতান্ত্রিক সমাজে প্রচলিত আইনের মাধ্যমে সেসব অনিয়মের বিচারও হয়। ক্ষমতার অপব্যবহারে দুর্নীতির বিচার সেটা জনগণ রাষ্ট্রের নিকট প্রত্যাশা করে। একটি সরকারের সকলেই অনিয়ম ক্ষমতার অপব্যবহার অথবা দুর্নীতি করে না। যারা করবে তাদেরকে নিয়মের মধ্যে আনতে হবে। দুর্নীতির বিচার হতে হবে। পদ পদবী চেয়ার ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাত করলে কাউকে ছেড়ে দেয়া সুশাসন হতে পারে না। বাংলাদেশ কৃষক, দিনমজুর, খেটে খাওয়া শ্রমিকের দেশ। ৯০ভাগ খেটে খাওয়া জনগণের রক্ত ও ঘামের উপর প্রতিষ্ঠিত এদেশ। তাদের অধিকার আর অর্থ আত্মসাত করে রাষ্ট্রীয় পদে থেকে কেউ যদি রাতারাতি হাজার কোটি টাকার অধিকারী হয়, তবে তার উপযুক্ত বিচার হতে হবে। সেটা হয়তো বা সারা বছর জনগণ দেখে না।

ক্ষমতাসীনদের মধ্যে বোধদয় হলে সে প্রক্রিয়া জনগণ দেখে থাকে। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী দল ও ক্ষমতাকে ব্যবহার করে যারা রাতারাতি হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে তাদের বিরোদ্ধে আইনি ব্যবস্থা শুরু করেছেন। সেটা দেশ এবং বিদেশে নানাভাবে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। রাজনৈতিক, সামাজিক, কূটনৈতিক বিজ্ঞমহলের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপকভাবে এই ইস্যু আলোচিত হচ্ছে। নিঃসন্দেহে এ অভিযান সাধারণ জনগণ এবং পরিচ্ছন্ন রাজনীতির মধ্যে প্রশংসা কুড়াতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু একশ্রেণীর সুবিধাভোগী রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত যারা রাজনীতিকে অর্থকড়ি অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে তাদের গাত্রদাহ দেখা যাচ্ছে। তারা তাদের কথাবার্তায় বেসামাল হয়ে রাজনীতির শিষ্টাচারিতাও ভুলে যেতে বসেছে। তাদের চরিত্রের মূল জায়গায় যখন আক্রমণ শুরু হলো তখন তারা অভিযানকারী আদর্শিক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে অশ্রদ্ধাপূর্ণ আচরণ করতেও পিছপা হচ্ছে না। যাদের ত্যাগ ও শ্রমে একটি দল সুসংগঠিত হয়েছিল, যারা বছর বছর থেকে দলের জন্য সবকিছু বিসর্জন দিয়েছে এমন ত্যাগী নেতাদেরও কোনো প্রকারের সম্মান দিচ্ছে না ওইসব সুবিধাভোগী দুর্নীতিবাজরা। আসলে ওদের পরিচয় অনেক প্রকারের। তারা যখন যেভাবে হতে হয় শুধুমাত্র অর্থ আর ক্ষমতার জন্য তখন তারা সেভাবেই হয়ে যায়। তাদের চরিত্রের মধ্যে দেখা যাবে অর্থ আর ক্ষমতা ছাড়া কিছুই বুঝে না। ওইসব দাগি সুবিধাবাদী নেতাকর্মী সে যে পদেরই আসীন হোক না কেনো তার বিচার হওয়া চায়। এবং সেটাই এখন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নির্দেশে শুরু হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবে দুর্নীতিবাজরা এতে ক্ষুব্ধ আর বিক্ষ্ব্ধু হওয়াটা অস্বাভাবিকের নয়। চট্টগ্রামের একজন ক্ষমতাসীন দলের এমপি সম্প্রতি নিজ দলের সতীর্থদের নিয়ে যে আচার আচরণ দেখিয়েছে তাতে করে দেশের রাজনৈতিক মহলে আলোচিত হচ্ছে। একজন প্রবীণ ও ত্যাগী সতীর্থ দলের নেতার উপর এ জাতীয় ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণে সব মহলে সমালোচিত হচ্ছে। নবীন প্রবীণ শ্রদ্ধাবোধ রাজনীতিতে থাকতে হবে। দেশ শাসনের জন্য শৃঙ্খলা রক্ষায় পদ পদবী সেটা থাকবে। পদ পদবীর বাইরে থাকলে সে কখনো দলের কাছে ছোট হয় না। তার গুরুত্ব কমে যায় না। তার অতীত রাজনৈতিক দলের জন্য কর্মকাÐ সেটা অবশ্যই ইতিহাস হয়ে থাকবে। কিন্তু সে জায়গায় তার প্রাপ্ত মূূল্যায়ন না করে তার প্রতি অসম্মান অযাচিত ব্যবহার কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। রাজনীতিতে এ ধরনের কর্মকাÐ জনগণ নিন্দার সাথে দেখে। সিনিয়ার প্রবীণ আর নবীনদের মধ্যে অবশ্যই একটা মধুর সম্পর্ক ও মিলন থাকতে হবে। অন্যথায় সে দল নেতাকর্মীদের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকবে না। আর দলের মধ্যে নেতাকর্মী সিনিয়র জুনিয়র নবীন প্রবীণের মধ্যে সুসম্পর্ক না থাকলে সে দল রাজনৈতিকভাবে সফল হওয়া কঠিন হয়ে উঠবে। দলের মধ্যে শৃঙ্খলা ভঙ্গ হবে। কেন্দ্রীয় কর্র্মসূচি বাস্তবায়নে সফল হবে। রাষ্ট্রীয় শাসন আর সুফল জনগণ কাক্সিক্ষতভাবে অর্জন করতে পারবে না। এসব রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের অবশ্যই ক্ষমতার বাইরে রাখা চায়। দলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ থেকে তাদের দূরে রাখা দরকার। সুবিধাবাদী এসব নেতাকর্র্মীরা যুগে যুগে বিভিন্ন দলে ঢুকে তাদের লোভ লালসা চরিতার্থ করতে অনেক দেখেছি। সময় হয়েছে এসব দুর্বৃত্তকে ক্ষমতা ও চেয়ার থেকে বিচ্যুত করা। সেটা ক্ষমতাসীন আর বিরোধী দল সব রাজনৈতিক দলে বাস্তবায়ন থাকা চায়। জনগণ বিশুদ্ধ রাজনীতি পরিচ্ছন্ন নেতা ও শাসন দেখতে চায়। বর্তমান সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান সর্বাত্মকভাবে সফলতা দেখতে চায় জনগণ।
লেখক: প্রাবন্ধিক