শ্যাওলা বা জলজ উদ্ভিদই কী ভবিষ্যতের খাবার?

61

বাজার গবেষকরা বলছেন বহু মানুষ সুপারফুডের জন্য অগ্রিম অর্থ দিতে আগ্রহী…কিন্তু আপনি কি আসলেই শ্যাওলা খাবেন? তবে চিন্তার কারণ নেই, আপনাকে নিজে পুকুর বা বদ্ধ পানি থেকে শ্যাওলা তুলে আনতে হবে না। বরং এটি আপনার কাছে আসবে উজ্জ্বল সবুজ কাপ কেক বা স্মুদি হিসেবে, যেখানে অবশ্যই ডিপ ওশ্যান বøু শেড থাকবে।
মনে রাখতে হবে এসব যখন ঘটবে তখন বিশ্বের জনসংখ্যা দাঁড়াবে আটশ কোটিতে। কিন্তু ক্ষুদে শ্যাওলার কি বাড়ন্ত জনসংখ্যার খাবার সরবরাহে সহায়তা করতে পারবে অথবা এটি কী আরেকটি অস্বাভাবিক খাদ্য ফ্যাশনে পরিণত হবে।
মাইক্রো অ্যালজি এক কোষী, যা লবণাক্ত বা পরিষ্কার পানিতে জন্ম নেয় এবং সূর্যের আলো থেকে সালোক সংশ্লেষণের মাধ্যমে শক্তি সঞ্চয় করে যা তাদের জীবনীশক্তি তৈরি করে। অন্যদিকে সায়ানোব্যাকটেরিয়াও জলজ এবং সবুজ এই চারাগুলোও সূর্যের আলো থেকেই শক্তি সঞ্চয় করে। তবে মাইক্রো অ্যালজি ও সায়ানোব্যাকটেরিয়ার এই আলোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়া কিছুটা ভিন্ন।
বিশ্বজুড়ে মাইক্রো অ্যালজি বা জলজ উদ্ভিজ্জগুলোর অনেক প্রজাতি আছে, কিন্তু ক্লোরেলা ও স্পিরুলিনা এখনি উৎপাদন হয় এবং খাদ্যে ব্যবহৃত হয়। স্পিরুলিনার ট্যাবলেট ও পাউডার এবং ক্লোরেলা ভিটামিন, মিনারেল, আয়রন ও প্রোটিন সহকারে প্যাকেট জাত করে বাজারজাত করা হচ্ছিলো। লন্ডনের প্যাডিংটনের কাছ ইয়েটাউন কিচেনে স্পিরুলিনা ও ক্লোরেলা রান্নায় গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
সেখানেই আপনি পেতে পারেন গ্রিন স্পিরুলিনা পালেও কুকি, দুগ্ধজাত দ্রব্যমুক্ত আইসক্রিম, প্রিন স্পিরুলিনা এনার্জি বলস এবং বøু স্পিরুলিনা চিজকেক। তবে এগুলো দেয়া হয় স্টার্টার হিসেবে।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লান্ট সায়েন্সেসের প্রফেসর আলিসন স্মিথ। তিনি বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অ্যালজি বা জলজ উদ্ভিজ্জ বিষয়ক বিজ্ঞানী। তিনি বলছিলেন কীভাবে আগে থেকেই জলজ উদ্ভিদ খাওয়ার প্রচলন হয়েছে। মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই নীল সবুজ শ্যাওলা খাচ্ছে। কয়েক শত বছর আগে থেকেই দক্ষিণ আমেরিকার মানুষ তাদের পুকুর থেকে নিয়ে স্পিরুলিনাকে খাবারে সংযোজন করে আসছে।
মাইক্রো অ্যালজিতে উঁচু মাত্রার প্রোটিন আছে যা মাংসের বিকল্প হতে পারে। এ মূহুর্তে এখন অল্প পরিসরে খাদ্যে সংযোজন করা হলেও এর একটি স্বাস্থ্যগত কৌশল আছে। তবে অ্যান্ড্রু স্পাইসার, সিইও অফ আলজেনুইটি, ক্লোরেলা ভালগারিস ডিমের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে চান, বিশেষ করে কেক ও পাস্তায়। স্পিরুলিনা ব্যবহৃত হতে পারে ম্যায়োনিজের বদলে, কারণ এটি অনেকটা ডিমের কুসুমের মতো।
শেফ সাইমন পেরেজের মতে এটায় মাছ ও লোহার মিশ্রণের মতো একটি গন্ধ আছে। আর এটার রংয়েও কিছুটা সমস্যা আছে। তবে মাইক্রো অ্যালজি বা জলজ উদ্ভিজ্জের স্বাস্থ্য সুবিধা নিয়ে কিছুটা বিতর্ক আছে। স্পিরুলিনা ও ক্লোরেলায় উচ্চ মাত্রায় প্রোটিন আছে। তবে তাদের পুষ্টিগুণ নিয়ে যে দাবি করার হয় তা বিজ্ঞান দ্বারা এখনো সমর্থিত নয়।
পুষ্টিবিদ রিয়ানন ল্যামবার্ট বলছেন, স্পিরুলিনায় ৫৫ থেকে ৭০ শতাংশ প্রোটিন থাকে। এটা উদ্ভিদ ভিত্তিক খাবারের চেয়ে ভালো অ্যামিনো অ্যাসিড প্রোফাইল আছে। জলজ উদ্ভিদে ওমেগা-৩ আছে। মাছের চেয়ে এ উৎসটি অনেক বেশি সহজলভ্য। এতে আছ ভিটামিন বি১২ যা এনার্জি মেটাবোলিজম এবং আমাদের নার্ভাস সিস্টেমের জন্য খুবই দরকারি। তবে এই বি১২ কতটা কাজ করে তা নিয়ে সংশয় আছে রিয়ানন ল্যামবার্টের। এটি হজম হয় কিনা বা অন্য সূত্র থেকে পাওয়া বি১২ এর মতো কাজ করে কি-না তা নিয়েও সংশয় আছে।
জনসংখ্যা যেহেতু বাড়ছে এবং কৃষিজমি কমছে তাই উৎপাদন বাড়ানোর নতুন দিক উন্মোচন করতে হবে। প্রোটিনের অন্য সব উৎসগুলোর মতো জলজ উদ্ভিজ্জের জন্য বেশি কৃষি জমির দরকার হবে না। এগুলো সব জায়গায় হতে পারে। পানি, সাগর, পুকুর, লেক..যে কোনো জায়গায়। এমনকি এটি হতে পারে মহাকাশেও, দীর্ঘ মেয়াদে মঙ্গল অভিযাত্রায় যাওয়া নভোচারীদের খাদ্য হিসেবেও এটি দেয়া যেতে পারে।
আলজেনুইটি অবশ্য সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে দুর করার চেষ্টা করছে যাতে করে সুন্দর রং ও স্বাদের খাবার হয় শ্যাওলা বা জলজ উদ্ভিজ্জ থেকে। এর সিইও অ্যান্ড্রু বলছেন, খাদ্যের নতুন সুযোগের দিকে দৃষ্টি দেয়ার এটাই সময়।