শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে ফাঁসাতে যুবককে হত্যা!

47

শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে মামলায় ফাঁসাতে গত ১৮ সেপ্টেম্বর মো. আরিফ নামে গরুর ফার্মের এক কর্মচারীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে কোরবান আলী প্রকাশ বেলাল হোসেন (২৮)। এ ঘটনায় গতকাল বুধবার ভোরে হাটহাজারী পৌরসদরের সবজি বাজার থেকে পুলিশ বেলালকে আটক করে। আটকের পর বেলাল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরিফকে হত্যার দায় স্বীকার করেন বলে জানায় পুলিশ।
বেলাল ফটিকছড়ির মানিকপুর মাইজপাড়া খন্দকারপাড়া বদিউল মেম্বার বাড়ির বদিউল আলমের পুত্র। বর্তমানে তিনি হাটহাজারীর চৌধুরীর হাট রেলস্টেশনের পশ্চিমে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন’র ১ নম্বর ওয়ার্ড দক্ষিণ পাহাড়তলী কুতুব চৌধুরী বাড়ির জামশেদের ভাড়া বাসায় বসবাস করেন বলে জানা গেছে।
পুলিশ জানায়, গত শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৩টার দিকে হাটহাজারীর ধলই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড সফিনগর গ্রামের আবদুর রহমান টেন্ডল বাড়ির উত্তর পাশে তৈল্যবিল (ধানক্ষেত) থেকে পুলিশ ১৮ বছর বয়সী অজ্ঞাত যুবকের লাশ উদ্ধার করেছিল। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা (নম্বর-৩১) করে। মামলার সূত্র ধরে গতকাল বুধবার ভোরে হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মাসুমের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল পৌরসদরের সবজি বাজার থেকে বেলালকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বেলাল অজ্ঞাতনামা ওই যুবকের নাম মো. আরিফ (১৮) বলে জানান। বেলাল আরও জানান, তার সাথে দীর্ঘদিন ধরে স্ত্রী রোকসানা বেগমের কলহ লেগে ছিল। বছর খানেক আগে স্ত্রী বাপের বাড়িতে চলে যান। এ কারণে বেলাল স্ত্রী, শ্বশুর-শাশুড়ি ও শ্যালকসহ ওই পরিবারের অন্য সদস্যদের মামলায় ফাঁসাতে আরিফকে শ্বশুরবাড়ির তৈল্যবিলের পাশে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেন। এদিকে আরিফের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় এখনও পাওয়া না গেলেও তিনি চৌধুরী হাট রেলস্টেশনের পশ্চিমে কুতুব চৌধুরী বাড়ির জনৈক জানে আলমের গরুর ফার্মের কর্মচারী বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হাটহাজারী মডেল থানা পুলিশ পরিদর্শক (ইন্টেলিজেন্স) রাজিব শর্মা জানান, শ্বশুরের পরিবারকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসাতে গত বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ৯ টায় ঘাতক বেলাল শ্বশুর বাড়িতে দাওয়াত খাওয়ানোর কথা বলে আরিফকে সিএনজি ট্যাক্সিযোগে ওই এলাকায় নিয়ে যায়। ওই সময় বেলালের কোমরে একটি ধারালো দা ছিল। বেলাল পরে আরিফকে জানান, শ্বশুরবাড়িতে যাওয়া যাবে না, লোকজন আছে। এখানে (ধানক্ষেত) একটু বসো। তার কথায় আরিফ ধানক্ষেতের আইলে বসে পড়েন।
তিনি আরও জানান, এলাকায় মানুষের চলাচল কমে গেলে রাত অনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে বেলাল দা বের করে গলায় দুইটি কোপ দিলে আরিফ মাটিত লুটিয়ে পড়ে এবং ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। এরপর বেলাল ঘটনাস্থল থেকে চলে আসে এবং চিরকুটের ফটোকপি করে বিভিন্ন জায়গায় বিলি করে।
এদিকে গতকাল বুধবার দুপুরে বেলালকে আদালতে প্রেরণ করা হয় এবং আদালতের কাছে তার রিমান্ড আবেদন করা হয় বলে জানানো হয়।
উল্লেখ্য, গত শনিবার (২১ সেপ্টম্বর) হাটহাজারীর ধলই ইউনিয়নের সফিনগর গ্রামের তৈল্যবিল (ধানক্ষেতে) থেকে অজ্ঞাত হিসেবে আরিফের গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওইদিন বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ চমেক হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়।