ঊনিশশো একাত্তরের মার্চ মাস। সমস্ত বাংলা তথা ভারত আবেগে ভাসছে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে। কলকাতার রবিবারের অলস সকাল। চায়ের দোকানের আড্ডা চলছে। আড্ডা দিচ্ছেন গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার ও সঙ্গীতশিল্পী অংশুমান রায়। তখন সংবাদপত্রে মুক্তিযুদ্ধের খবর। অংশুমানবাবু গৌরীবাবুকে বললেন, ‘গৌরীবাবু, সবাই তো মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করছে। আমাদের কোনো অবদান থাকবে না? আমরা বাঙালী শিল্পী। এই নিয়ে তো গান বাঁধতেই পারি।’ বলার অপেক্ষামাত্র। গৌরীবাবু সিগারেটের প্যাকেটের ওপর একটি গানের প্রথম কয়েকটি কলি লিখে ফেললেন। সুর করলেন অংশুমানবাবু। দুদিনের মধ্য তৈরি হল সেই অমর সঙ্গীত। গানটি ভীষণ উন্মাদনার সৃষ্টি করল। গানের রেকর্ড বিক্রির সমস্ত অর্থ গিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের তহবিলে। শিল্পী, গীতিকার একটি পয়সাও নেন নি। গানটি কি ছিল?
শোনো, একটি মুজিবরের থেকে
লক্ষ মুজিবরের কন্ঠস্বরের ধ্বনি, প্রতিধ্বনি
আকাশে বাতাসে ওঠে রণি।
বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ।।
সেই সবুজের বুক চেরা মেঠো পথে,
আবার এসে ফিরে যাবো আমার
হারানো বাংলাকে আবার তো ফিরে পাবো।
শিল্পে কাব্যে কোথায় আছে হায় রে
এমন সোনার দেশ।
শোনো, একটি মুজিবরের থেকে
লক্ষ মুজিবরের কন্ঠস্বরের ধ্বনি, প্রতিধ্বনি
আকাশে বাতাসে ওঠে রণি।
বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ।।
বিশ্বকবির সোনার বাংলা, নজরুলের বাংলাদেশ,
জীবনানন্দের রূপসী বাংলা
রূপের যে তার নেইকো শেষ, বাংলাদেশ।.
‘জয় বাংলা’ বলতে মনরে আমার এখনো কেন ভাবো,
আমার হারানো বাংলাকে আবার তো ফিরে পাবো,
অন্ধকারে পুবাকাশে উঠবে আবার দিনমণি।।
শোনো, একটি মুজিবরের থেকে
লক্ষ মুজিবরের কন্ঠস্বরের ধ্বনি, প্রতিধ্বনি
আকাশে বাতাসে ওঠে রণি।
বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ।।
পরে বুঝেছি শেখ মুজিবর রহমান কোনো ব্যক্তিবিশেষের নাম নয়। একটি অবিনাশী চেতনার নাম, একটি আদর্শের নাম এবং একটি দর্শনের নাম।
লেখক : সাংস্কৃতি ব্যক্তিত, কলকাতা