শোকাবহ আগস্ট

6

পূর্বদেশ ডেস্ক

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাংলার রাজনৈতিক আকাশে সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাঁর ছিল অদম্য সাহস ও মনোবল। বঙ্গবন্ধু বাঙালির স্বাধীনতা ও সার্বিক মুক্তির লক্ষ্যে করেছেন আজীবন সংগ্রাম। সহ্য করেছেন জেল-জুলুমসহ নানা অত্যাচার, নির্যাতন। তিনি তাঁর নেতৃত্বের মেধার আলো ছড়িয়ে সব বাঙালির মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন।
এখানে বঙ্গবন্ধুর রজনৈতিক জীবনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরা হল- ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করলে বঙ্গবন্ধু তৎক্ষণিক প্রতিবাদ করেন। একই বছর ১১ মার্চ রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ধর্মঘট আহŸানকালে গ্রেপ্তার হন। ওই বছর ১১ সেপ্টেম্বর ফরিদপুর থেকে আবার গ্রেপ্তার হন। ১৯৪৯ সালের ৩ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ধর্মঘটে সমর্থন জানান। ৫০ সালের ১ জানুয়ারি এ আন্দোলনের কারণে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
৫২ সালে ১৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে বঙ্গবন্ধু কারাগারে অনশন শুরু করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষার দাবিতে শহীদ হন সালাম, রফিক, বরকতসহ অনেকে। জেল থেকে বঙ্গবন্ধু এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেন। ৫৪ সালে ১০ মার্চ সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট বিজয়ী হয়। বঙ্গবন্ধু গোপালগঞ্জের আসনে বিজয়ী হন। বঙ্গবন্ধু যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভায় সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু বাঙারির মুক্তির সনদ ৬ দফা ঘোষণা করেন। ৬ দফার আন্দোলন গড়ে উঠলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পাকিস্তান সরকার তাঁর বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দেয়। এরপর বঙ্গবন্ধুর মুক্তি ও ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার দাবিতে আন্দালন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রæয়ারি তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। ২৩ ফেব্রæয়ারি সোহরাওয়ার্দি (রেসকোর্স) ময়দানে তাঁকে বিশাল সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেখানে তাঁকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ৭০ সালে জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।
১৯৭১ সালের ১ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত করেন। এতে সারাবাংলা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। বঙ্গবন্ধু ২ মার্চ ঢাকায় ও ৩ মার্চ সারা পূর্ব পাকিস্তানে হরতাল আহব্বান করেন। ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দি (রেসকোর্স) ময়দানে বঙ্গবন্ধু ইতিহাসের এক যুগান্তকারী ভাষণ দেন, ডাক দেন মহান মুক্তিযুদ্ধের। এ সময় তিনি ঘোষণা করেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”। বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণে স্পষ্ট হয়ে যায় স্বাধীন বাংলাদেশের ভবিষ্যত। এরপর শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি অর্জন করে স্বাধীনতা। সেদিন থেকে বাংলাদেশের আরেক নাম জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর স্বপ্ন-সংগ্রামের ফসল এদেশ।
এরপর শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর আরেক সংগ্রাম। তিনি দুঃখী বাঙালির মুখে হাসি ফোটাতে, ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত ও শোষণহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় শুরু করেন সর্বাত্মক কার্যক্রম। কিন্তু ৭১ এর পরাজিত গোষ্ঠী ও দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে।