শোকাবহ আগস্ট

51

আগস্ট বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি শোকাবহ মাস। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরিবারসহ (দু’কন্যা ব্যতীত) শাহাদতবরণ করেন।
ঘাতক-চক্র ১৫ আগস্ট ইতিহাসের জঘন্যতম ঘটনা ঘটাতে সক্ষম হয়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মের প্রতিশোধ নেওয়া। মুক্তিযুদ্ধের উদার অসাম্প্রদায়িক মানবিক মূল্যবোধচেতনা, উগ্র-সাম্প্রদায়িক দর্শন-ভিত্তিক পাকিস্তানের বিপরীতে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম দেয়। খুনিচক্র জাতির জনককে হত্যা করলো বটে; কিন্তু এটা বাস্তব যে ‘এক মুজিব লোকান্তরে লক্ষ মুজিব ঘরে ঘরে’।
যখন সমাজ ও রাষ্ট্রে কোনো সংকট দেখা দেয়, তখন আমরা জাতির জনককে স্মরণ করি। তাঁর জীবন-দর্শনের, আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাসকে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করি। এটি নিঃসন্দেহে জাতির জনকের এক চলমান, বহমান ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রে যুগ-যুগান্তরের প্রভাব। বঙ্গবন্ধুর সমকালীন অনেক রাজনীতিবিদ বিভিন্ন বিষয়ে বিভ্রান্ত হতেন,
বঙ্গবন্ধু বিভ্রান্ত হতেন না; নিজ সুমহান মূল্যবোধে অটল থাকতেন। জাতির জনকের আন্দোলন সংগ্রামের মৌলিক বৈশিষ্ট্য ছিল সত্যনিষ্ঠ থেকে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে শ্রদ্ধাশীল থেকে সেসবের পরিচালনা বা নেতৃত্বদান। অন্ধকারের চোরাগুপ্তা পথে প্রতারণার ভূমিকায় অগণতান্ত্রিক দর্শনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোনো রাজনৈতিক কিংবা সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালনা করেননি। এটিই ব্যক্তি মুজিবের নিজস্ব নৈতিকতাসমৃদ্ধ মানবিক-চেতনায় উজ্জ্বীবিত এক শক্তিমত্তার মহীরূহ। সম্ভবত এ কারণেই এ মহামানবকে পাকিস্তান দখলদার ও হানাদার বাহিনীর সদস্যরা হত্যা করতে বা অসম্মান করতে কখনো সাহস পায়নি। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫-এ সেই কলঙ্কিত রাতেও বঙ্গবন্ধু মুজিব মৃত্যু মুখোমুখি দাঁড়িয়ে পাপিষ্ঠ ঘাতকদের বীরেরস্বরে, নায়কোচিত কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করতে পেরেছেন, ‘কী চাস্ তোরা’?
আমরা অত্যন্ত আশান্বিত যে, বর্তমান প্রজন্মে আজ লক্ষ লক্ষ মুজিব সেনা, মুজিব-ভক্ত মানুষ শহর, গ্রামের সর্বত্র বিরাজমান। তারা বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তি ও কর্মময় জীবনের নানাবিধ ঘটনা, অর্জন ও অবদান আনন্দভরে উপভোগ করে। আর শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে জান্তে-অজান্তে, কৃতজ্ঞতায় আবদ্ধ হয়। মনে হয় জীবিত ‘বঙ্গবন্ধু-মুজিবের’ চেয়ে মৃত ‘বঙ্গবন্ধু-মুজিব’ আজ অধিকতর শক্তিশালী। আর এসবের মূল কারণ বঙ্গবন্ধু কন্যা ‘মানবতার মাতা’ শেখ হাসিনার বাস্তবধর্মী জীবন-দর্শন, যেখানে ‘বঙ্গবন্ধু-মুজিবের’ প্রতিচ্ছবি মানুষ খুঁজে পায়।