শৈত্যপ্রবাহ শুরু শীতার্তদের পাশে দাঁড়ান

60

কবি সুকান্ত লিখেছিলেন, পৌষের রোদমাখা মিষ্টি সকালের এমন লোভনীয় বর্ণনা। কনকনে শীত এবং শৈত্যপ্রবাহকে সঙ্গীন করেই যেন পৌষ তার আগমনের বার্তা দিয়ে যাচ্ছে। শুরুতেই চট্টগ্রামসহ সারাদেশে শীতের দাপট শুরু হয়েছে। আমরা দেখি গ্রামীণ জনপদে আক্ষরিক অর্থে মাঘ মাস আসে শীতের দাপট নিয়ে। সেইজন্য বলা হয়, ‘মাঘের শীতে বাঘ ডাকে’ কিন্তু এবার পৌষেই যেন সেই ডাক শোনা যাচ্ছে দেশের সর্বত্র। গণমাধ্যম সূত্রে গত কয়েকদিন দেশের উত্তরাঞ্চলে তীব্র শীতের কথা আমরা জানলেও চট্টগ্রামের আদ্রতা মোটামুটি সহনীয় পর্যায়ে ছিল। কিন্তু বুধবার সন্ধ্যা থেকে শীতের তীব্রতা বাড়তে থাকে সাথে প্রচণ্ড বেগে বয়ে যাচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ। হাড় কাঁপুনি শীতে বিশেষ করে গরিব ও সহায়-সম্বলহীন মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। তারা আক্রান্ত হচ্ছে সর্দি-কাশি-হাঁচি-জ্বর, হুপিংকাশিসহ শীতকালীন ডায়রিয়ায়। এখন থেকে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিসহ বিত্তবানদের শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর প্রয়োজন বলে আমরা মনে করছি। আবহাওয়া দপ্তর বলছে, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার থেকে নগরীতে শীত আরো বাড়বে। এছাড়া দেশের উত্তরাঞ্চলে বড় ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাবে। সেই শৈত্যপ্রবাহের প্রভাবে দেশব্যাপী বইবে হিমেল হাওয়া। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি হ্রাস পেতে পারে। বেশকয়েকটি জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদপত্র সূত্রে জানা যায়, দেশের দক্ষিণ-পূর্ব ও উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে কনকনে শীত ও হিমেল হাওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে। গত কয়েকদিন ধরে মাঝে মাঝে সূর্য উঁকি মারলেও গতকাল বৃহস্পতিবার দিনের অর্ধেকজুড়ে সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। কোথাও কোথাও রাতে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি পড়েছে। এতে শীতের তীব্রতা আরো বেড়ে যাওয়ায় শীতবস্ত্রের অভাবে দুস্থ ও অসহায় মানুষ বিপাকে পড়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের অবস্থা কাহিল হয়ে পড়েছে। শীত মোকাবেলায় স্থানীয় প্রশাসনের প্রস্তুতি খুব সামান্য থাকে। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র না থাকায় দুস্থ মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে যায়। বিশেষ করে নদী, পাহাড় ও সাগর পাড়ের অববাহিকায় ও চরের মানুষ গরম কাপড়ের অভাবে তীব্র শীত কষ্টে ভুগে। পার্বত্য জেলাগুলোতে অনুভ‚ত হচ্ছে শীতের তাÐব। প্রকৃতির এ বিরোপ আবহাওয়া প্রতিরোধ করা আমাদের সম্ভব নয়; তবে শীতার্তদের পাশে থেকে শীতবস্ত্র বিতরণসহ রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা করতে পারলে সাধারণ গরিব ও অসহায় মানুষের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হবে।
আকস্মিক তাপমাত্রার হ্রাস-বৃদ্ধিসহ শৈত্যপ্রবাহের জন্য অনেকাংশে দায়ী বৈশ্বিক আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তন। উপমহাদেশেও আবহাওয়ার ভাবগতি বিশেষ সুবিধার নয়। আফগানিস্তান, পাকিস্তান, হিমাচল প্রদেশসহ উত্তরখণ্ডে চলছে শীতের তাণ্ডব। হিন্দুকুশ ও হিমালয় পর্বতমালা থেকে ধেয়ে আসছে ঘন কুয়াশামালা, তীব্র হিমেল প্রবাহ। এ দেশও এ হিমেল প্রবাহ থেকে মুক্ত থাকবেনা।
আমরা শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য জনপ্রতিনিধিদের তেমন সোচ্চার হতে দেখি না, দু-চারজন ব্যতিক্রম ছাড়া। হতদরিদ্র মানুষকে শীতবস্ত্র সরবরাহ সরকারের সামর্থ্যরে বাইরে নয়, তবে দরকার সময়োচিত উদ্যোগ গ্রহণ এবং এর যথাযথ বাস্তবায়ন। দেশে অনেক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তারাও পারে শীতার্ত দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়াতে। ওষুধ কোম্পানিগুলো ও চিকিৎসকদের সংগঠনগুলোও বিভিন্ন স্থানে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প করে বাড়িয়ে দিতে পারে সহযোগিতার হাত। বিত্তবানদের যৎসামান্য ভালোবাসা ও সহানুভূতিই পারে শীতার্ত মানুষের হৃদয়ে উষ্ণতার পরশ বুলিয়ে দিতে। আসুন আমরা স্ব-স্ব অবস্থান থেকে শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াই।