শেষবারের মতো প্রিয় জায়ানের কাছে প্রধানমন্ত্রী

99

শ্রীলংকায় বোমা বিস্ফোরণে নিহত আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের নাতি জায়ান চৌধুরীর দাফন সম্পন হয়েছে। গতকাল বুধবার বাদ আছর রাজধানীর বনানী ক্লাব মাঠে জানাজার পর বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের পাশে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে বনানী ক্লাব মাঠে জায়ানের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। দু’দিন আগে থেকেই জানাজার জন্য মাঠ প্রস্তুত করা হয়। জানাজায় জায়ানের আত্মীয়-স্বজন ছাড়াও আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।
জানাজা পড়ানোর আগে শেখ সেলিম নাতি জায়ান এবং তার আহত বাবার জন্য সবার কাছে দোয়া চান। এসময় তিনি জায়ানের মৃত্যুতে শোক সন্তপ্ত পরিবারের পাশে থাকার জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্ববি মিয়া, কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আব্দুল মতিন খসরু, কর্নেল (অব) মুহম্মদ ফারুক খান, সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান ও জাহাঙ্গীর কবির নানক, শেখ ফজলে নুর তাপস, আকবর খান পাঠান, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, ডা. এনামুর রহমান, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন এবং ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম প্রমুখ। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
এর আগে আট বছরের জায়ানের মরদেহ বহনকারী শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্সের ইউএল-১৮৯ ফ্লাইটটি দুপুর পৌনে ১টায় ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দরের টারমার্কে নাতি জায়ানের মরদেহ গ্রহণ করেন শেখ সেলিম। সেখান থেকে রওনা হয়ে দুপুর দেড়টায় জায়ানের মরদেহ বহনকারী গাড়ি শেখ সেলিমের বনানীর বাসায় পৌঁছায়।
এদিকে শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলায় নিহত প্রিয় জায়ান চৌধুরীকে শেষবারের মতো দেখলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুপুর ২টা ৩৫ মিনিটে বনানীতে জায়ানের নানা ফুপাত ভাই শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বাসায় যান শেখ হাসিনা। এক সময় যে জায়ানের পদচারণায় বনানীর ২/এ সড়কের ৯ নম্বর বাড়িটি মুখরিত থাকত সেখানে এখন বিরাজ করছে শোকের ছায়া।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাসায় প্রবেশের পর সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। শেখ সেলিমসহ আত্মীয়-স্বজনরা এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিহত জায়ানের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সান্ত¡না দেন। পরে বিকাল ৩টা ৫০ মিনিটে সেখান থেকে বের হন প্রধানমন্ত্রী।
শিশু জায়ান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছেও ছিল অনেক প্রিয়। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ফেসবুকে লিখেছেন, জায়ান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও বেশ প্রিয় ছিল। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হলেই দাদু বলে জড়িয়ে ধরত।
আট বছর বয়সী শান্তশিষ্ট জায়ান উত্তরার সান-বীম স্কুলের দ্বিতীয় গ্রেডে পড়ত। সে ছিল ক্রিকেট পাগল আর সাকিব আল হাসানের ভক্ত।
শেখ সেলিমের বাসায় জায়ানকে শেষবারের জন্য দেখতে আসেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজ্জামেল হক, জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ, উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম প্রমুখ।
গত রবিবার (২১ এপ্রিল) শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ বোমা বিস্ফোরণে সেখানে সপরিবারে বেড়াতে যাওয়া শেখ সেলিমের মেয়ে জামাই মশিউল হক চৌধুরী গুরুতর আহত এবং তার নাতি জায়ান চৌধুরী নিহত হয়।
উল্লেখ্য, শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ সিরিজ বিস্ফোরণে এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৫৯ জনে দাঁড়িয়েছে। বুধবার (২৪ এপ্রিল) লঙ্কান পুলিশের মুখপাত্র রুয়ান গুনাসেকারা নিহতের এ সংখ্যা জানিয়েছেন।