শেখ হাসিনার সাফল্যের কিঞ্চিত বিবরণ

23

আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রধানতম প্রত্যাশা ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ উন্নত দেশের কাতারে কাতারবদ্ধ হবে। তাঁর এ ভাবনা অমূলক নয়। তাঁর শাসনকাল অনুকুল এবং প্রতিকুল পরিস্থিতির সংমিশ্রণে সৃষ্টি। তাঁর সাহসিকতা ও দৃঢ় মনোবল বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে এটা দ্বিধাহীন চিত্তে আশা করা যায়। আমাদের অর্থনীতির যাত্রাপথ শুরু হয় স্বাধীনতা উত্তরে ১৯৭২ সাল থেকে। তখন নব্য স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য প্রথম বাজেট ১৯৭২-৭৩ ঘোষিত হয় সরকারে অর্থমন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দিন আহমেদ সাহেবের মাধ্যমে ১৯৭২ সালের ৩০ জুন। বাজেটের আকার ছিলো ৭৮৬ কোটি টাকা। ২০০৬-২০০৭ বিএনপির শেষ বাজেট ৬৯,৭৪০ কোটি টাকা, মঈন. ইউ এর মদদপুষ্ট সরকারের মির্জা আজিজ সাহেবের শেষ বাজেট ৯৯,৯৬২ কোটি টাকা , ২০১৭-১৮ আওয়ামী লীগের অধিনে এ.এম.এ. মুহিত ৪,০০,২৬৬ কোটি টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে বাজেটে আকার ৫০০,০০০ কোটি টাকার কাছাকাছি। সাইফুর রহমানের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ছিলো ২৬০০০ কোটি টাকা। পক্ষান্তরে এম.এ. মুহিত সাহেবের উন্নয়ন কর্মসূচি ছিলো ১,৫৩,৩৩১ কোটি টাকা। ২০০৬ দেশে কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা ছিলো ৪ কোটি ৭৪ লাখ, ২০১০ সালে কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ কোটি ৪১ লাখ। স্বাধীনতা উত্তরে খাদ্য মজুদ ছিলো শূন্য। শুরুতেই ১০ লক্ষটন খাদ্য ঘাটতি তৎমধ্যে ৭ লক্ষ ৫০ হাজার টন খাদ্য সংগ্রহ করতে হয় শুধু ভারত থেকে। আজ আমাদের খাদ্যগুদামে উদ্বৃত্ত মজুত খাদ্য আয় ২৩ লক্ষ টনের উপরে। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিলো শূন্যের কোটায় তখন বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ চুক্তি, বাটার সিস্টেম, ওয়েজ আর্নার সিস্টেম এবং পিএল-৪৮০ অধীনে পণ্য আমদানি করতে হয়েছে। বর্তমানে আমাদের বৈদেশিক রিজার্ভের পরিমাণ ৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, প্রতিদিন মুদ্রাস্ফীতির জালে আমরা আবদ্ধ ছিলাম। এখন দ্রব্যমূল্য স্থীতিশীল মানুষের ক্রয়ক্রমতার সঙ্গে সঙ্গতি পূর্ণ।


আমাদের একসময় প্রায় সবকিছু আমদানি করতে হতো এবং রপ্তানি পণ্য ছিলো শুধু পাট, চা, চামড়া। বর্তমানে আমরা প্রায় ৭০০ এর অধিক পন্য রপ্তানি করছি। যার জন্য বাণিজ্য ঘাটতি অনেক হ্রাস পেয়েছে।
১। অত্যন্ত সুখবার্তা হচ্ছে বর্তমান সরকার ১০টি ম্যাগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে তৎমধ্যে ৬.১৫ কি.মিটার ধীর্ঘ পদ্মা সেতু। যা নিজস্ব অর্থায়নে ৩০,১৯৩.৩৮৮ কোটি টাকা ব্যায়ে বাস্তবায়িত হতে চলেছে। এতদ্ব্যাপরে চায়না মেজর ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানীকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। এ সেতুর মাধ্যমে বাংলাদেশ দক্ষিণাংশের ২১টি জেলার সংগে সংযুক্ত হবে। এ সেতুর অধিকারিক নাম পদ্মা বহুমুখী সেতু।
২। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র যার নির্মাণ ব্যয় ১২.৬৫ বিলিয়ন ডলার। এতে রাশিয়া যোগান দেবে ১১.৩৮ বিলিয়ন ডলার আর বাংলাদেশ দেবে ১.২৭ বিলিয়ন ডলার, এর বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১২০০ মেগাওয়াট।
৩। পায়রা সামুদ্রিক বন্দর। এতে মোট ব্যয় ১৫০ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে ৩০% অর্থায়ন করবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
৪। মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এতে অর্থায়ন হবে ৩৫,৯৮৪ কোটি টাকা। যাতে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে।
৫। মেট্রো রেল প্রকল্পে ব্যয় হবে ৫৩,০০০ কোটি টাকা।
৬। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ১০২ কি.মিটার রেলপথে ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয় ২১২ বিলিয়ন ডলার।
৭। রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যয় ধরা হয় ১.৬৮ বিলিয়ন ডলার যাতে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে।
৮। সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর। এতে ১২০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় ধরা হয়।
৯। কর্ণফুলী ট্যানেলে ব্যয় ধরা হয় ৩২৫০ কোটি টাকা।
১০। বাংলাদেশে ৩৭টি অর্থনৈতিক জোন স্থাপিত হবে। যাতে সমস্ত অপ্রচলিত রপ্তানি মুখী শিল্প প্রতিষ্ঠিত হবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এসব সাফল্যের পাশাপাশি অত্যন্ত দ্রæততম সময়ের মধ্যে রাস্তাঘাট, সেতু কালভার্ট এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো। এর পাশাপাশি প্রতিরক্ষা খাতে অকল্পনীয় উন্নতি সাধিত হয়েছে। এতো উন্নতির পাশাপাশি অজস্র দুর্নীতিও দৃশ্যমান। তাও তাঁকে শক্তহাতে সামাল দিতে শুদ্ধি অভিযান চালু করতে হচ্ছে। প্রথমে স্বীয় দল থেকে তিনি শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছেন। এতে তিনি কাউকেও ছাড় দেবেন না বলেছেন। ব্যাংকে যথেষ্ট অনিয়ম চলছে, দেশে খেলাপী ঋণের পরিমাণ ৩ লক্ষ কোটি টাকার উপরে। ব্যাংকে তারল্য সংকট বিদ্যমান। এ সংকট নিরসন করতে না পারলে ব্যাংকের ওপর জনগণের আস্থাহীনতা দেখা দিতে পারে। এ আর্থিক খাতে যদি পুঁজি বাজারের মতো ধস নামে তবে দেশের ব্যবসা বাণিজ্যেও ধস নামবে। দেশে প্রশাসনিক দুর্বলতার জন্য খুনখারাবি, হত্যা, ছিনতাই, র‌্যাগিং, ইভটিজিং মাত্রাতিরিক্তভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ছাত্ররাজনীতির নামে টেন্ডার বাজি, চাঁদাবাজি, মাস্তানী বৃদ্ধি পেয়েছে। দলের নাম ভাঙ্গিয়ে এসব অপকর্ম করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আরো কঠোর হওয়া উচিত। নচেৎ আমাদের অর্জিত সাফল্য ব্যর্থতায় পর্যবশিত হবে।

লেখক : কলামিস্ট