শুরু হলো পবিত্র মাহে রমজান

169

পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখা গেছে গতকাল সোমবার। তাই আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হলো সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র মাহে রমজান। গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশের আকাশে রমজান মাসের নতুন চাঁদ দেখা যাওয়ার খবর পাওয়া যায়। সন্ধ্যায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কার্যালয়ে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠক শেষে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
সন্ধ্যা ৭টায় (বাদ মাগরিব) রাজধানীর বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে এ সভায় সভাপতিত্ব করেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভাপতি শেখ মো. আব্দুল্লাহ।
এ হিসেবে আগামী ২৬ রমজান (১ জুন) শনিবার দিবাগত রাতে সারাদেশে পবিত্র শবে কদর উদ্যাপন হবে বলেও জানান তিনি।
নতুন চাঁদ দেখা যাওয়ায় গতকাল দিনগত শেষ রাতে সাহরি খেয়ে রোজা রাখেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। একই সঙ্গে গতকাল এশার নামাজের পর দেশের মসজিদে মসজিদে শুরু হয় তারাবি নামাজের জামাত।
এদিকে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে রমজান শুরু হয় সোমবার। এছাড়া সৌদি আরবের মতো সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান, মিসর, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং সিঙ্গাপুরেও সোমবার থেকে রোজা শুরু হয়। এসব দেশে রবিবার থেকে তারাবি শুরু হয়। খবর বাংলানিউজের
চাঁদ দেখা সম্পর্কে কোরআন-হাদিসের নির্দেশনা : ইসলামের মৌলিক রুকন বা ভিত্তি পাঁচটি। এর মধ্যে রোজা ও হজ চাঁদ দেখার সঙ্গে সম্পৃক্ত। পবিত্র রমজান মাসের রোজা প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে, সে যেন এ মাসে রোজা রাখে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫)
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘লোকেরা আপনাকে নতুন মাসের চাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি তাদের বলে দিন, এটা মানুষের (বিভিন্ন কাজকর্মের) এবং হজের সময় নির্ধারণ করার জন্য।’ (সুরা আল-বাকারা, আয়াত : ১৮৯)
হাদিস শরিফে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখো এবং চাঁদ দেখে ঈদ করো। কিন্তু যদি আকাশে মেঘ থাকে, তাহলে গণনায় ৩০ পূর্ণ করে নাও।’ (বুখারি, হাদিস : ১৯০৯; মুসলিম, হাদিস নং: ১০৮১)
অন্য বর্ণনায় রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা (নতুন চাঁদ) না দেখা পর্যন্ত রোজা রেখো না এবং তা (নতুন চাঁদ) না দেখা পর্যন্ত রোজা ছেড়ে দিয়ো না।’ (মুআত্তা মালিক, হাদিস নং: ৬৩৫)
চাঁদ দেখা যাওয়ার ক্ষেত্রে কোন এলাকার প্রত্যেককে দেখা জরুরি নয়। বরং বিশ্বস্ত সাক্ষী দেখলেও রোজা শুরু করার অবকাশ আছে।
রমজানের চাঁদ দেখে আনন্দিত হতেন মহানবী (সা.) : আল্লাহর দয়া-অনুগ্রহ, ক্ষমা ও মুক্তির বার্তা নিয়ে আসে পবিত্র রমজান। রমজান মুমিনের জন্য সৌভাগ্যের মাস। প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মাস। প্রার্থনা ও ক্ষমাপ্রাপ্তির মাস। তাই মুমিনমাত্রই রমজানের জন্য অপেক্ষা করেন। রমজানের কল্যাণ লাভের জন্য দোয়া করেন।
প্রিয়নবী মুহাম্মদও (সা.) রমজানের জন্য অপেক্ষা করতেন। এ সৌভাগ্য প্রাপ্তির জন্য দোয়া করতেন। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রজব মাসের চাঁদ ওঠার পর থেকে রাসুলুল্লাহ (সা.) ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শাবান, ওয়া বাল্লিগনা রামাজান’ বলে দোয়া করতেন। (তাবরানি ও কানজুল উম্মাল)
অর্থ : হে আল্লাহ! রজব ও শাবান মাসে আমাদের বরকতময় করুন এবং আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।’
শাবান মাস শুরু হওয়ার পর রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের জন্য আরও ব্যাকুল হয়ে উঠতেন। তিনি শাবান মাসের দিন গণনা করতেন, চাঁদের হিসেব রাখতেন। রমজানের চাঁদের জন্য অপেক্ষা করতেন।
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসের চাঁদের যেভাবে হিসেব রাখতেন, অন্যকোনো মাসের হিসেব সেভাবে রাখতেন না। পরে চাঁদ দেখে রোজা রাখতেন।’
রাসুলুল্লাহ (সা.) উম্মতকেও নির্দেশ দিয়েছেন, শাবান মাসের চাঁদের হিসেব রাখতে। যেনো রমজানের রোজা নির্ভুলভাবে রাখা যায়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা রমজানের জন্য শাবানের চাঁদের হিসেব রাখো। (সুনানে বায়হাকি)
আকাশে রমজানের চাঁদ দেখে রাসুল (সা.) খুশি হতেন। তিনি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতেন। রমজানের চাঁদকে অভিনন্দন জানাতেন। হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী তিনি রমজানের চাঁদকে সুপথ ও কল্যাণের বার্তাবহ বলে সম্বোধন করতেন এবং রমজানের কল্যাণ ও বরকত লাভের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতেন।