শুভ বড়দিন মানবপ্রেম ও মানবসেবাই হোক আজকের প্রত্যয়

146

আজ শুভ বড়দিন। খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের সবচাইতে বড় ধর্মীয় উৎসব । এই দিনে কুমারী মরিয়মের (মরিয়ম আ.) গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন খ্রিষ্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিষ্ট (ইসা আ.)। খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, পৃথিবীতে শান্তির ললিত বাণী ছড়িয়ে দিতে এবং মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করার জন্য এই ধরাধামে আগমন ঘটেছিল মহান যিশুর। তিনি প্রচার করেন সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমা। বিখ্যাত লেখক হোমার স্মিথ তার ম্যান অ্যান্ড হিজ গডস গ্রন্থে লেখেন, “২৫ ডিসেম্বরের এই স্থানীয় উৎসব গ্রিক সৌর উৎসব ‘হেলিয়া’র সঙ্গে মিশিয়ে রয়েছে। ডিসেম্বরের ২১-২২ তারিখে সূর্যের উত্তরায়ণ শুরু হয়, ঠাণ্ডায় জমে যাওয়া ইউরোপের মানুষের নিকট বছরের কঠিনতম সময়ের অবসান ঘটে, বাকি শীতটা পার করিয়ে দেয়া যাবে এই স্বস্তি হতেই শীতের উৎসব শুরু হয়েছিল” যা বড়দিনের মাধ্যমে নবরূপ লাভ করে। খ্রিষ্টধর্ম মতে, যিশুখিষ্ট এই পুণ্যময় দিনে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে বেথলেহেমে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর অনুসারীরা মনে করেন যে, দুই সহস্রাধিক বছর পূর্বে এই পৃথিবী যখন তমসাচ্ছন্ন ছিল, মহামতি যিশু আলোর দিশারী হয়ে পথ দেখিয়েছেন মানবজাতিকে। অত্যন্ত দীনবেশে, একটি গো-শালায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। আজীবন দীনবেশে জীবনাচরণ করে তিনি দুঃখী দরিদ্র মানুষের পক্ষে এবং সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় কাজ করে গেছেন । জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার কবিতায় মহান যিশুর সেই দারিদ্র্যের সেই দীনতার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘হে দারিদ্র্য, তুমি মোরে করেছ মহান। তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রিষ্টের সম্মান।’
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, খ্রিষ্টধর্মের মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে গভীর ‘ভালোবাসা’। ‘ঈশ্বর’ ও ‘ভালোবাসা’ মহান যিশুর কর্মকাণ্ডের জন্য পরিপূরক হয়ে উঠেছে। বিশ্বের কোটি কোটি খ্রিষ্টান ধর্মানুসারীর নিকট যিশু হলেন ঈশ্বরপুত্র। মাত্র ৩৩ বছর বয়সে তিনি ক্রুশবিদ্ধ হন। কিন্তু ক্রুশে বিদ্ধ অবস্থাতেও তিনি ছিলেন ক্ষমাশীলতায় উদ্ভাসিত। ইটিও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ যে, যে সাতটি বাণী ক্রুশবিদ্ধ অবস্থায় মহাত্মা যিশু উচ্চারণ করেছিলেন, তার প্রথম কথাটিই হল ক্ষমা। জীবনাচরণে তিনি প্রেম, সেবা ও সৌহার্দ্যরে প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন। যিশুর ধর্ম-কর্ম-জীবন যুগ যুগ ধরে পৃথিবীর বিপুল সংখ্যক মানুষকে অন্ধকার হতে আলোর পথে পরিচালিত করেছে, অসত্য হতে সত্য পথের দিশা দিয়াছে যা আজও প্রবহমান। আমরা জানি, সকল ধর্মের মৌলিক সত্য ও সারসত্য হল মানবকল্যাণ। খ্রিষ্টধর্মও তার ব্যতিক্রম নয়। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে প্রায় সোয়া দুই শতাধিক কোটি মানুষ খ্রিষ্টধর্মের অনুসারী। বাংলাদেশে রয়েছে সকল ধর্মের-স¤প্রদায়ের মানুষের অপূর্ব সহাবস্থান। যদিও প্রায় ১৬ কোটি জনসংখ্যার এই দেশে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা খুব বেশি নয়। তবে এই উপমহাদেশে খ্রিষ্টান সমপ্রদায়ের ইতিহাস চারশত বছরের অধিক। বাংলাদেশে খ্রিস্টান সম্প্রদায় সংখ্যায় কম হলেও তাদের শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থান আমাদের জন্য দৃষ্টান্ত। এদেশে পুর্তগীজদের আগমনের পরপর খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বসবাস শুরু হয়। চট্টগ্রামের ফিরিঙ্গীবাজার, পাথরঘাটা, এনায়েত বাজার, জামালখান, আনোয়ারা দেয়াংপাহাড়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের বসতিসহ শিক্ষা-সংস্কৃতির কেন্দ্র রয়েছে। বিশেষ করে, দেখার বিষয় যে, যেখানে খ্রিস্টান সম্প্রদায় তাদের বসতি ও গীর্জা গড়ে তুলেছে, সেখানে তারা ন্যূনতমপক্ষে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। যে প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের শিক্ষা প্রসারে ব্যাপক ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। আজ বড়দিনে দেশের সব গীর্জায় ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টানসম্প্রদায় প্রার্থনা ও মানবের কল্যাণ কামনায় নিজেদের আত্মনিয়োগ করবেন। বড়দিনের বড় মাহাত্ম্য হতে হবে, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় মানবপ্রেম ও মানবসেবায় ব্রত হওয়া। আজকের এ শুভদিনে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্য রইল প্রীতি-শুভেচ্ছা। শুভ বড়দিন।