শীতের তীব্রতায় জেগে উঠেছে রক্তাক্ত স্মৃতির ক্ষতচিহ্ন

59

শীতের বিপন্নতায় অন্য আরেক বিপন্নতা আচ্ছন্ন করে পেশাওয়ার নিত্যকার যাপন-বাস্তবতাকে। ডিসেম্বর এলেই চার বছর আগের এক রক্তাক্ত স্মৃতি সেখানে জেগে ওঠে পুরনো ঘায়ের মতোন করে। শীতের হিম বাতাসে হৃদয়ের অতল থেকে জেগে ওঠে ২০১৪ সালের রক্তাক্ত তালেবান হামলার ক্ষতচিহ্ন। রক্তাক্ত স্মৃতির সেই ভয়াবহ হামলায় কেঁপে উঠেছিল সেখানকার এক স্কুল। মৃত্যু হয়েছিল বহু বহু শিশুর। ২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের ইতিহাসে দ্বিতীয় ভয়াবহ হামলা সংঘটিত হয় পেশাওয়ারের আর্মি পাবলিক স্কুল। তালেবানের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে হামলার দায় স্বীকার করে বলা হয়েছিল, সেনা পরিচালনাধীন হওয়ায় স্কুলটিকে লক্ষ্যবস্তু করেছিল তারা।
হামলায় নিহতের সংখ্যা ছিল অন্তত ১৪৮, যাদের বেশিরভাগই শিশু। রবিবার ছিল ভয়াবহ পেশওয়ার হামলার চতুর্থ বর্ষপূর্তি। চারটি বছর পার হয়ে গেলেও মা-বাবার হৃদয়ে সন্তান হারানোর সে ক্ষত এখনও শুকোয়নি।
এখনও অনেক মা-বাবারই মনে হয় এতো বুঝি ‘রবিবারই ঘটলো’ এসব। আর ভয়াবহ সে ঘটনায় বেঁচে যাওয়া শিক্ষার্থীরাও বয়ে বেড়াচ্ছে হামলার আতঙ্ক।
চার বছর আগের সেই হামলায় ১৫ বছর বয়সী ছেলে আসফান্দকে হারিয়েছেন আজুন খান। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বর্ণনা করেছেন সেই দুঃসহ স্মৃতি। জানিয়েছেন, ছেলে আসফান্দের স্কুলে থাকবার বেশিরভাগ সময়ই ঘুমিয়ে কাটাতেন। তবে ঘটনার দিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে গিয়েছিলেন। বড় ছেলে আসফান্দের সঙ্গে কথা হয়েছিল লাহোরে পারিবারিক এক বিয়ের দাওয়াতে যাওয়ার ব্যাপারে। “ও আমাকে বললো, ‘বাবা বিয়ের জন্য আমার নতুন জুতা লাগবে’। আমরা ঠিক করেছিলাম, ওইদিন ও স্কুল থেকে ফেরার পর দুইজন মিলে বাজারে যাব।” জানান আজুন খান। তবে সেদিন স্কুলে যাওয়ার পর আর বাড়ি ফেরা হয়নি আসফান্দের। ভয়াবহ হামলায় নিভে গিয়েছিল তার জীবনপ্রদীপ।
ঘটনার দিন এক শুনানিতে অংশ নিতে আদালতে ছিলেন আজুন। আসফান্দ স্কুলে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মাথায় তার এক আত্মীয় ফোনে বিস্ফোরণের খবর দেন। এ নিয়ে নিশ্চিত হতে তেমন একটা সময় লাগে না। দ্রুতই জানা যায়, হামলা হয়েছে ছেলে আসফান্দের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, আর্মি পাবলিক স্কুলে। স্মৃতি হাতড়িয়ে আজুন তুলে আনেন সেদিনের শ্বাসরুদ্ধকর বাস্তবতা। হামলার পর সমস্ত সড়ক বন্ধ করে দেওয়ায় ছেলের খোঁজে তাকে ওই স্কুলে যেতে হয়েছিল পায়ে হেঁটে। যেন এক অনন্ত যাত্রা ছিল এটি, মনে হচ্ছিলো, এ পথ যেন ফুরোবার নয়। স্কুলে পৌঁছে আজুন দেখেন, এরইমধ্যে নিরাপত্তা অভিযান শেষ হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্সে করে হতাহতদের হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। হেঁটে হেঁটেই প্রথমে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে পৌঁছান আজুন। জীবিত-অর্ধমৃত আর এরইমধ্যে প্রাণ হারানো রক্তাক্ত দেহগুলোর মধ্যে খুঁজে ফেরেন নিজ সন্তানকে। সন্ধান মেলে না। পরের গন্তব্য লেডি রিডিং হাসপাতালে। সেখানেও মেলে না সন্তান অথবা তার মরদেহের খোঁজ। এরইমধ্যে সকালে হামলার খবর দেওয়া আত্মীয়ের ফোন আসে। জানা যায়, আসফান্দ নয়, তার মরদেহ পাওয়া গেছে। ছেলের মৃত্যুর খবর নিয়ে বাড়ি ফেরেন আজুন খান।