শীতের অতিথি

87

দীপ্ত সবসময় হাসিখুশি থাকে। সবাই তাকে খুব ভালোবাসে। বাবা-মাকেও দীপ্ত খুব ভালোবাসে। তবে বাবাকে সে তার মনের সব কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। সারাদিন বাবার সাথে নানান প্রশ্ন-খুনসুটি আর খুনসুটি।
ছোট থেকেই পাখির প্রতি আলাদা একটা মায়া-টান দীপ্তর। পাখি দেখলেই নেচে উঠে। এটা কি পাখি! ওটা কি পাখি! শুধু প্রশ্নের উপরে প্রশ্ন। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই পাখির কিচিরমিচির শুনে অনেক আনন্দ উপভোগ করে সে।
পরীক্ষা শেষ। চোখে মুখে আনন্দের কী উচ্ছ¡াস। বাবাকে আগে থেকেই বলছে সে পরীক্ষা শেষে নানুর বাড়ি যাবে। বেড়াতে যাওয়ার দিন তারিখ হয়ে গেল।
বাড়ি থেকে নদী পাড় হাঁটা পথ। নানু বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হয়। বাবা-মা আর দীপ্ত একসাথে হেঁটে নদীর পাড়ে আসে। এমন সময় দীপ্ত নদীতে সাদা কবুতরের মত পাখি দেখে খুশিতে লাফিয়ে ওঠে। বাবাকে বলে-বাবা! বাবা! দেখো! কতগুলো সাদা কবুতর পানিতে ভাসছে।
-ওহ্ তাইতো! একসাথে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে পাখিগুলোকে।
হ্যাঁ! বাবা। পাখিগুলো কী সুন্দর করে ডানা ঝাঁপটিয়ে পানিতে খেলছে? বাবা পাখিগুলো শাদা কবুতর তো, তাই না? বাবা, আমি কবুতরের কাছে যাবো।
চলো না আমরা নৌকা করে কবুতরের কাছে যাই।
দীপ্ত এর কথা শুনে বাবা মুচকি হেসে বললো এগুলো তো কবুতর নয়।
-মানে! কি বলছো বাবা? কবুতর নয় তো কী!
-এগুলো শীতের পাখি। একটু খেয়াল করে দেখবে, এদের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের পাখি রয়েছে। নানা ধরণের এই পাখিগুলো সুদূর সাইবেরিয়া বা সাইবেরিয়ার মতো অতিরিক্ত শীতের দেশ থেকে আসে। অপেক্ষাকৃত কম শীতের আমাদের দেশে এরা চলে আসে এ সময়। এদেরকে অতিথি পাখি বলা হয়। পাখিগুলোর অবশ্য নাম আছে। সবগুলোর নাম হয়তো আমার জানা নেই। এদের মধ্যে বালি হাঁস, রাজহাঁস, রামঘুঘু, হরিয়াল, ল্যাঞ্জা, সোনাজঙ্গ, খুরুলে, জলপিপি ইত্যাদি পাখি আছে।
কেন আসে বাবা? অন্য সময় আসে না। শুধু কী শীতের সময় আসে?
হ্যাঁ শীতের সময় আসে। কারণ, ওদের দেশে শীতের তীব্রতা বেশি। আমাদের দেশে ওদের দেশের চেয়ে শীত কম পড়ে বলে তারা আরামের জন্য আসে।
আচ্ছা, বাবা ওরা কী শুধু আমাদের দেশে আসে? অন্য কোনো দেশে বুঝি যায় না?
হ্যাঁ, ওরা অন্য দেশে ও যায়। তবে আমাদের দেশেই হয়তো ওরা বেশি শান্তি পায় বলে বেশি আসে। ওরা আমাদের দেশে পুরো শীতে সমুদ্র, বিল-ঝিল, হাওড়-বাওড়ে যেভাবে নিজেরা অবস্থান করে তা সত্যিই সুন্দর এবং পরিবেশকে অপরূপ করে তোলে।
-আচ্ছা বাবা শীতের পর কোথায় যায়?
-কেন, ওদের দেশে যায়।
-ওরা কী ঠিক ঠিক নিজের দেশে যেতে পারে?
-হ্যাঁ, ওরা ঠিক ঠিক ওদের দেশ চিনে পৌঁছে যেতে পারে।
-তাই নাকি বাবা! এ তো আগে জানতাম না।
আরেকটা কথা বাবা, ওদেরকে কি ধরে বাড়িতে পোষা যাবে?
-না, বাবা। ওরা নিজে বাঁচতে এবং একটু সুখের জন্য আমাদের দেশে আসে। কেন আমরা মানুষরা ওদের উপর হস্তক্ষেপ করবো? জানো দীপ্ত! আমাদের দেশের কিছু লোভী মানুষ ওদেরকে শিকার করে। গুলি করে হত্যা করে। বাসায় নিয়ে রান্না করে খায়। যেটা খুবই অনুচিত আর অমানবিক।
-কি বলছো বাবা? পাখি হত্যা করা যে মহাপাপ এটা কি ওরা জানে না? তাছাড়া,ওরা তো আমাদের দেশে বেড়াতে আসে। কেন ওদেরকে মারবে? বাবা,তুমি এখন থেকে প্রতিবছর শীতের সময় কোন অতিথি পাখিকে মারতে দেবে না। ওরা আসে বলে আমাদের দেশটা এত সুন্দর লাগে। নতুন পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
অতিথি পাখি নিয়ে দীপ্ত আর বাবা নানা কথায় মজে যায়। হঠাৎ মায়ের ডাক শুনে বাবা, আর দীপ্ত তাড়াতাড়ি নৌকায় উঠে গেল। কারণ,তারা নানুর বাড়ি যাবে।
দীপ্তদের নৌকা ছেড়ে দেয়। যেতে যেতে দীপ্ত দেখতে পায় অনেকগুলো শীতের অতিথি পাখি পানিতে নানাভাবে ডানা ঝাঁপটাচ্ছে আর ডুব-সাতাঁরে মশগুল। এসব দৃশ্য দেখতে দেখতে দীপ্তদের নৌকা একসময় নদীর ওপাড়ের ঘাটে গিয়ে ঠেকে। এখান থেকেই গাড়িতে চড়ে নানুর বাড়ি চলে যাবে ওরা।