শিশু তুহিন হত্যার কারণ উদঘাটন করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক

52

খুন-খারাবি, ধর্ষণ, শিশু ও নারী নির্যাতনসহ নানা অমানবিক ও অনৈতিক ঘটনার খবর এখন আমাদের নিত্য পাঠে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন দৈনিক পত্রিকাসহ ইলেকট্রিক মিডিয়াগুলো মূলত এসব খবর প্রকাশ ও প্রচার করে পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করছে। গণমাধ্যমের কাজই হচ্ছে মূলত এটি। কয়দিন আগে বুয়েটের এক নৃশংস ঘটনা বাংলাদেশসহ দুনিয়ার অনেক দেশের কর্তা ও মানবতার বিবেককে নাড়া দিয়েছে। এঘটনার রেশ না কাটতেই সুনামগঞ্জের পাঁচবছরের শিশু তুহিনকে নৃশংসভাবে হত্যাকাÐের ঘটনা টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে।
কেন এ নৃশংসতা? নিজের বাবা কর্তৃক নির্মমভাবে নিহত শিশু তুহিন! সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নভুক্ত কেজাউড়া নামের একটি গ্রামে এ সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার রাতে এমন একটি ঘটনা ঘটেছে, যা মানবসভ্যতাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দেয়। এ গ্রামে তুহিন নামে পাঁচ-ছয় বছরের একটি শিশুকে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে এতটাই নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে, যা কল্পনাকেও হার মানায়। শিশুটিকে গলা কেটে হত্যা করে তাদের বাড়ির অদূরে একটি গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখে তার পেটের মধ্যে হত্যাকাÐে ব্যবহৃত দুটি ছুরি ঢুকিয়ে রাখা হয়। শুধু তাই নয়, শিশুটির পুরুষাঙ্গ ও কান কেটে ফেলা হয়। এর মধ্যে একটি কান পাওয়া গেছে পাশের সড়কে। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় আমরা শুধু একটি কথাই বলতে পারি- ধিক এ বর্বরতা! এতটুকু একটি শিশুকে কে বা কারা এমন পাশবিকভাবে হত্যা করল সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। কারও শত্রু হওয়ার মতো বয়স শিশুটির হয়নি। তবে বড়দের শত্রুতার বলি হতে হয়েছে তাকে, এমনটি ধারণা করা যায়। অবশ্য এ হত্যাকাÐের ব্যাপারে পুলিশ যে ভাষ্য দিয়েছে, তা শিহরিত হওয়ার মতো। শিশু তুহিনকে এমন নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় নাকি তার পরিবারের সদস্যদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে! তুহিনের বাবা এলাকার একটি হত্যা মামলাসহ কয়েকটি মামলার আসামি। মামলার কারণে তাদের পরিবারের লোকজন এমন কাজ করে থাকতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ তথ্য যদি সত্য হয়, তাহলে তা আরও চিন্তার বিষয় বৈকি। প্রশ্ন জাগে, কোথায় গেছে মানুষের বিবেক ও মূল্যবোধ! মনুষ্যত্ব হারালে মানুষের আর থাকে কী! মানুষ কি মানুষকে এভাবে মারতে পারে? তাও নিজ পরিবারের শিশুকে? তারপরও আমরা বলব, ঘটনাটির আরও তদন্ত হোক। প্রকৃত অপরাধীকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হোক। দেশে শিশু হত্যা, ধর্ষণ আর অপহরণের ঘটনা ক্রমাগত বাড়ছে। অতি তুচ্ছ ঘটনা থেকে শুরু করে নানা কারণে অসহায় শিশুরা যেভাবে ঘাতকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে, তা সত্যিই উদ্বেগজনক। সংঘবদ্ধ অপহরণকারী চক্র, প্রতারক, প্রবঞ্চক, দুর্বৃত্ত দল, এমনকি গর্ভধারিণী মায়ের হাতেও নিষ্পাপ-নিরপরাধ শিশুরা আর নিরাপদ নয়।
কেন ঘটছে এসব ঘটনা, এ প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে সমাজের সর্বত্র। তবে কি দেশের জনগোষ্ঠীর একটি অংশ বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছে? অনেকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কথা বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতিই অপরাধ বৃদ্ধির কারণ বলে থাকেন অনেকে। আসলেই কি শুধু দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পারে এ ধরনের অপরাধ দূর করতে?
বস্তুত আমরা মনে করি, সমাজটা এখন এমন জায়গায় চলে গেছে, যেখানে শুধু বিচারব্যবস্থা কোনো কাজে আসবে না। পুরো বিষয়টি এক বড় গবেষণার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। এখন দরকার সমাজতত্ত¡বিদ, মনোবিজ্ঞানীসহ বিশেষজ্ঞদের সুচিন্তিত গবেষণা, যা মানুষের অপরাধপ্রবণতার কারণগুলো উদ্ঘাটন করে প্রতিকার-ব্যবস্থার সুপারিশ করতে পারবে। এটি দীর্ঘসূত্রতার বিষয়, তার আগে আমরা মনে করি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অপরাধপ্রবণদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর অবস্থানে যেতে হবে। তবে যেসব অপরাধ শুধু আইনের যথাযথ প্রয়োগ দ্বারা প্রতিরোধ করা যায় না, সেসবের প্রতিকার করতে হবে সামাজিক ও পারিবারিকভাবে। এ দিকটিতে দৃষ্টি দিতে হবে সবাইকেই। আমরা মনে করি, সুনামগঞ্জের নির্মম এ ঘটনার সাথে যারাই জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আশা করি প্রশাসন এক্ষেত্রে কোনরকম গাফিলতি করবে না।