শিশু চুরি করে সন্তানহীনের কাছে বিক্রি করেন তারা!

38

ব্যস্ত রাস্তায় কোলে শিশুকে নিয়ে ভিক্ষা করছেন ‘মা’। তাকে টার্গেট করে ভালো জামা বা টাকা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে অন্যত্র সরিয়ে নেন। তারপর কৌশলে শিশু নিয়ে উধাও! কয়েকদিন নিজেদের কাছে পরিচর্যা করে বিক্রি করে দেন সন্তানহীন কোনো মায়ের কাছে। তবে চুরি করা শিশুগুলো বিক্রি করার সময় মৃত মায়ের অসহায় সন্তান বলে পরিচয় দেন তারা। নগরীর পরতে পরতে এমনই একটি শিশু চোর চক্র কাজ করে আসছে। একটি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে এই চক্রের সন্ধান পেয়েছে নগর পুলিশ।
গতকাল রোববার কোতোয়ালী থানায় সংবাদ সম্মেলন করে শিশু চোর চক্রের বিষয়ে জানান চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এসএম মেহেদী হাসান। গ্রেপ্তার তিনজন হলেন- মো. আফসার প্রকাশ জাফর সাদেক (৩৫), পারভীন আক্তার (৩০) এবং ন্যাশনাল হাসপাতাল ও সিগমা ল্যাবে কর্মরত রেডিওলজি বিভাগের টেকনোলজিস্ট সুজিত কুমার নাথ (৪৫)। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নগরের কাজীর দেউড়ি মোড় থেকে ৫ মাস আগে এক ভিক্ষুকের শিশু চুরির মামলা তদন্ত করতে গিয়ে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালকে কেন্দ্র করে শিশু চোরদের সংঘবদ্ধ একটি চক্রের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। এসএম মেহেদী হাসান জানান, শিশু চোর চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন সড়কে ও ফুটপাতে থাকা ভাসমান নারীদের শিশু চুরি করে নিঃসন্তান দম্পতিদের কাছে বিক্রি করেন। এছাড়া বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে কৌশলে শিশু চুরি করেন। বিক্রির সময় ওই শিশুকে মৃত আত্মীয়স্বজনের সন্তান হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি জানান, গ্রেপ্তার আফসার প্রকাশ জাফর সাদেক এ চক্রের মূল হোতা। পারভীন আক্তার চুরি করা শিশু বিক্রির আগ পর্যন্ত লালনপালন করেন। সুজিত কুমার নাথ শিশু বিক্রিতে সহায়তা করেন। কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহম্মদ মহসীন জানান, ২৭ মে কাজীর দেউড়ি মোড়ে দুই মাসের শিশু নিয়ে ভিক্ষা করছিলেন শেফালী বেগম। এক যুবক তাদের ভালো কাপড় কিনে দেওয়ার কথা বলে রেয়াজউদ্দিন বাজারে নিয়ে সেখান থেকে কৌশলে শিশুটিকে চুরি করেন। পরে শেফালী বেগম কোতেয়ালী থানায় মামলা করেন। এ মামলা তদন্ত করতে গিয়ে গত শনিবার কক্সবাজার থেকে আফসার প্রকাশ জাফর সাদেককে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যে মেহেদীবাগ থেকে সুজিত কুমার নাথ ও বায়েজিদ এলাকা থেকে পারভীন আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যে নগরের দামপাড়ায় পল্টন রোডে জনৈক পবন কান্তি নাথের বাসা থেকে চুরি যাওয়া শিশুটিকে উদ্ধার করা হয় বলে জানান ওসি মোহম্মদ মহসীন। আদালতের মাধ্যমে উদ্ধার হওয়া শিশুকে মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ আইয়ুব উদ্দিন জানান, ইপিজেড থানার একটি শিশু চুরির মামলায় গ্রেপ্তার মো. ইকবাল হোসেনকে কোতোয়ালী থানার মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ইকবালের কাছ থেকে চুরির বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়। পরে কক্সবাজার থেকে শিশু চোর চক্রের মূল হোতা আফসার প্রকাশ জাফর সাদেককে গ্রেপ্তার করা হয়। চুরির সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তার করে দামপাড়া এলাকার একটি বাসা থেকে চুরি হওয়া শিশুটি উদ্ধার করা হয়।