শিশুচোর চক্রের কার্যক্রম বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি

30

আজকের শিশু আগামীর নাগরিক। মানুষ বেঁচে থাকে তার সন্তানের মধ্যে। নশ্বর এ জগতে প্রত্যেকে তার উত্তরাধিকারী রেখে যেতে চায়। নবী রসুলরাও সন্তানের জন্য আল্লাহর কাছে সবিনয়ে আরজ করতে দেখা গেছে। মানুষের মৃত্যুর পর তার সকল আমল বন্ধ হয়ে গেলেও কোন সু-সন্তান রেখে যেতে পারলে সে সন্তান পিতামাতার নাজাতের উসিলা হয়। সদকায়ে জারিয়া তথা জন কল্যাণমূলক কাজ, জ্ঞান এবং সুসন্তান মানুষের পরকালীন মুক্তির জন্য খুবই জরুরি। এজন্য মানুষ বংশ পরিচয় এবং পরবর্তী কল্যাণের আশায় সন্তানের জন্য সবসময় উদগ্রীব। যাদের সন্তান নেই তারা কত কি করে একটি সন্তানের জন্য তাদের আকূতি প্রকাশ করতে দেখা যায়। ধনি, দরিদ্র নির্বিশেষে সবাই তাদের ঔরসজাত সন্তানের প্রতি দুর্বল। প্রত্যেক মা-বাবা তাদের সন্তানের মধ্যে ভবিষ্যৎ খুঁজে পায়। সুসন্তান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রত্যেক মা-বাবা সন্তানদের জন্য তাদের সামর্থ্য অনুসারে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে থাকে, সবক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হয়তো আছে। সাধারণত আমাদের সমাজের সকল মানুষ নিজ নিজ সন্তানকে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে চায়। সন্তানের অসুখ-বিসুখ ও অশুভ কিছু দেখলে মা-বাবারা অস্থিত্ব হয়ে পড়ে। নিজের রক্তের প্রতি মানুষের স্বাভাবিক দুর্বলতা সর্বজন স্বীকৃত। মানুষ শুধু চেষ্টা করলে সন্তান জন্ম দিতে পারে না। সন্তান-সন্ততি বিধাতার দেয়া একটি অসাধারণ নেয়ামত। এ নেয়ামত সন্তান চুরি করে ব্যবসা করা বা আর্থিকভাবে লাভবান হবার মতো জঘন্য কাজে লিপ্ত হচ্ছে মানুষ। এ বিষয়ে ৪ নভেম্বর ২০১৯ দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। প্রতিবেদনের সার কথা হলো একটি সংঘবদ্ধ চক্র নানা অপকৌশল অবলম্বন করে মানব সন্তান চুরি করে নিঃসন্তান ব্যক্তিদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করে ব্যবসা করে যাচ্ছে। এ সংবাদ থেকে বোঝা যায় আমাদের সমাজে মানবীয় মূল্যবোধে কী পরিমাণ অবক্ষয় ঘটেছে। এ অবক্ষয় অনেক মা-বাবার বুক খালি করে সারাজীবন বিষাদ ক্লিষ্ট করে রাখছে। পথে ঘাটে শিশু চুরির পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারী হাসপাতালেও শিশু চোর চক্র কাজ করে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ যেহেতু এ চক্রের সন্ধান পেয়েছে এবং তিনজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে তাদের আরো ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ কালে এ চক্রের আরো ব্যাপক কর্মকাÐ জানা যাবে। এক দুখিনি মায়ের বেদনাকে কেন্দ্র করে শিশুচোর চক্রের সন্ধান লাভে পুলিশ সদস্যদের যে আন্তরিকতার পরিচয় পেলাম, তার জন্য সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের অভিনন্দন জানাই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শিশুচোর দমনে কঠোর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে শিশু চুরি বন্ধে ভূমিকা রাখবেন এমন আশা সর্বসাধারণের।