শিলক উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ঝুঁকি নিয়ে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম

69

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার শিলক বাজার এলাকায় তিনকক্ষের একটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র। যেখানের তিনটি কক্ষের প্রত্যেক দেয়ালেই রয়েছে বিশাল ফাঁটল। ভবনের দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়েছে। জানালাও ভাঙাচোরা। স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির নেই কোন বিদ্যুৎ এবং টয়লেট ব্যবস্থা। এমনকি স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির বাইরে লাগানো সাইনবোর্ডটিও সামান্য বাতাসে নষ্ট হয়ে গেছে। অন্যদিকে ষাটের দশকে বিশাল এলাকা নিয়ে স্থাপিত এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই প্রতিদিন গড়ে শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। পুরা স্বাস্থ্যকেন্দ্র জুড়ে এমন বেহাল পরিস্থিতি, যেকোন সময় ধসে পড়ে বড় দুর্ঘটনার আশংকা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সরেজমিনে দেখা যায়, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের তিনটি কক্ষসহ বারান্দার দেয়াল থেকে পলেস্তরা খসে পড়ে ভেতরের রড বের হয়ে গেছে। সবগুলো দরজা-জানালা ভেঙে গেছে। মরিচা পড়ে টিনের চাল ভেঙে গেছে এবং কোথাও কোথাও ফুটো হয়ে গেছে। একটু বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে। এসময় চিকিৎসা-সরঞ্জামসহ কাগজপত্র নষ্ট হয়ে যায়। দেয়ালে শেওলা পড়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। অথচ এ অঞ্চলের লোকজনের চিকিৎসার জন্য কেন্দ্রটি টিকে থাকা খুব জরুরি বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। এলাকার বাসিন্দারা জানান, স্থানীয়দের দান করা জমিতে ১৯৫৫ সালে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের একতলা টিনসেট ভবনটি নির্মিত হয়। নির্মাণের পর থেকে এই ভবনেই এখন পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। কোন ধরণের সংস্কার না থাকায় বর্তমানে সম্পূর্ণ ভবনটি জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এরপরও বিকল্প না থাকায় এখানে রোগীদের নিয়মিত সেবা দেওয়া হচ্ছে। উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসক উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তা মাসকুরা বেগম বলেন, জরাজীর্ণ ভবনের কথা আমি দীর্ঘদিন ধরে জানিয়ে আসছি। কিন্তু সাড়া পাচ্ছি না। এখানে বিদ্যুতের সংযোগ ও শৌচাগারও নেই। এরপরও চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি ৩৫ রকমের ঔষধ বিনামূল্যে দেওয়া হয় বিধায় চিকিৎসা নিতে রোগীরা প্রতিদিন ভীর জমালেও অনেক সময় হিমশিম খেতে হয়।’ স্থানীয় মাহমুদুল হাসান বাদশা জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি এ এলাকা থেকে অনেক দূরে। কর্ণফুলী পার হয়ে কিংবা গোডাউন ব্রিজ দিয়ে সড়ক পথে যেতেও দীর্ঘ পথ পেরুতে হয়। এ কারণে এই গ্রামের মানুষ এখানেই চিকিৎসা নিতে আসেন। জনস্বার্থে এটি সংস্কার করা খুব জরুরি বলে জানান তিনি। শিলক ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ভবনটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। নির্মাণের পর থেকে এটি আর কোন সংস্কার না করায় দিন দিন তা আরও খারাপ অবস্থার দিকে যাচ্ছে। কিন্তু এই অবস্থার মধ্যেও জনস্বার্থে চিকিৎসা কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। যেকোন সময় ভবনটি ধসে গিয়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। একজন নারী চিকিৎসক সকাল ৯টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত চিকিৎসা দিচ্ছেন এলাকার শতাধিক রোগীদের। অথচ এখানে নেই কোন টয়লেট কিংবা বৈদ্যুতিক সংযোগ। স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি সংস্কারের জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে আমি বেশ কয়েকবার বলেছি। এমনকি ২০১৩ সালে তৎকালীন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনও এই কেন্দ্রটি পরিদর্শন করে গেছেন। কিন্তু এরপরেও এটি সংস্কারে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নিসর্গ মেরাজ চৌধুরী জানান, এই উপজেলায় আমি নতুন যোগদান করেছি। যোগদান করেই আমি শিলক সহ উপজেলার সবগুলো উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র সংস্কারের বিষয়ে ইতোমধ্যেই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। আশা করি দ্রæত সংস্কার কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।