শিক্ষা প্রতিষ্ঠান টার্গেট করেই তামাক পণ্যের প্রচারণা

75

খুদে শিক্ষার্থীদের টার্গেট করেই তামাক পণ্যের প্রচারণা ও বিক্রি চলছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশেই বিক্রি হচ্ছে নানান ধরনের তামাক পণ্য। প্রচারণার জন্য রঙ্গিন ফেষ্টুন ও লিফলেট শোভা পাচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশেই। খোদ নগরীর ৮৮৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একশগজের মধ্যেই রয়েছে ৫ হাজার ৫৩৬টি তামাক পণ্যের বিক্রয়কেন্দ্র।
আইনে তামাক পণ্যের ব্যবহার ও প্রচারণা সীমাবদ্ধ করা হলেও সেটি মানা হচ্ছে না। ক্ষতিকর এসব পণ্যের টার্গেটে পরিণত হয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ছোট-বড় বিক্রয় কেন্দ্র থেকে সুপার শপেও তামাক পণ্য বিক্রি হচ্ছে।
সম্প্রতি বেসরকারি এনজিও সংস্থা বিটার উদ্যোগে পরিচালিত ‘স্মোকিং ফ্রি চট্টগ্রাম’ শীর্ষক এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে। জরিপে দেখা যায়, চট্টগ্রাম নগরীর মধ্যে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয়স্থল আছে ১৬ হাজার ৫৯টি। এর মধ্যে রাস্তার পাশে তামাক পণ্য বিক্রয়কেন্দ্র ৩ হাজার ৩৯৪টি, চা বিক্রয়কেন্দ্র ৪ হাজার ৩০৫টি, ক্ষুদ্র মুদি দোকান/সাধারণ দোকান ৫ হাজার ৮৭৯টি, সুপার মার্কেট ৯২৪, তামাক দ্রব্য বিক্রয় কেন্দ্র ৬৬৭টি, রেস্টুরেন্ট ১৯৬টি এবং ভাসমান বিক্রেতা ৬৯৪টি।
তামাকজাত পণ্য বিক্রয় করা এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭১ শতাংশের কোনো লাইসেন্স নেই। লাইসেন্স না থাকা এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১১ হাজার ৪৬২টি। প্রতিবেদনে দেখা যায়, নগরীর ৮৮৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১০০ গজের মধ্যে তামাক পণ্য বিক্রি হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি তামাক পণ্য বিক্রি হওয়া কেন্দ্রের সংখ্যা ৫ হাজার ৫৩৬টি। ১৬২টি হাসপাতাল-ক্লিনিকের একশ গজের মধ্যে তামাকজাত পণ্য বিক্রি হয়।
প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয় ৭৬ শতাংশ তামাক পণ্যের বিক্রয় কেন্দ্রে দৃশ্যমান বিজ্ঞাপন ব্যবহার করা হয়েছে। দৃশ্যমান বিজ্ঞাপন ব্যবহার করা এমন বিক্রয় কেন্দ্র আছে ১২ হাজার ১৬৫টি। তামাক পণ্যের বিক্রেতাদের মধ্যে ৪ শতাংশের বয়স ১৮ বছরের নিচে। ১৮ বছরের এমন ৬৪৬ জন বিক্রেতার তথ্য আছে প্রতিবেদনে।
তামাক পণ্যের এমন ভয়াবহ চিত্রের কথা তুলে ধরলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, শুধু তামাক পণ্য নয়, নতুন প্রজন্ম যাতে মাদক ও তামাক পণ্যের দিকে ধাবিত না হয় সেজন্য আমরা নিয়মিত সভা-সমাবেশে কাউন্সিলিং করছি। আগামী প্রজন্ম যেনো ক্ষতিকর বিষয়গুলো থেকে বিরত থাকে সেজন্য আমরা কথা বলি।
তিনি বলেন, অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে তামাক পণ্য থেকে মানুষকে বিরত রাখা যায় না। এজন্য কাউন্সিলিং বেশি প্রয়োজন। আবার অভিযানের সীমাবদ্ধতাও আছে। রাতের বেলায় অভিযান পরিচালনা করা যায় না। আমাদের শহরটাই অপরিকল্পিত। কোথাও দোকানের পাশে স্কুল গড়ে উঠেছে, আবার কোথাও স্কুলের পাশে দোকান গড়ে উঠেছে এবং সেখানে তামাক পণ্য বিক্রি হচ্ছে। আবার তামাক পণ্যের আড়ালে মাদকও বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে ভ্যানের দোকানগুলোতে এগুলো বেশি হয়। আবার এসব ভ্যান এতো বেড়ে গেছে যার কারণে যানজট হচ্ছে। ভ্যানগুলোর বিরুদ্ধে আমরা একটা অভিযান পরিচালনার চিন্তা করছি।
‘স্মোকিং ফ্রি চট্টগ্রাম’ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিটার নির্বাহী পরিচালক শিশির দত্ত বলেন, ২০৪০ সালের মধ্যে তামাক বন্ধ করার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা রয়েছে। আইনে আছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১শ গজের মধ্যে কোনো তামাক পণ্যের বিক্রি ও প্রচারণা করা যাবে না। কিন্তু আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একশ গজের মধ্যে কোনো তামাক পণ্য বিক্রি হচ্ছে, বিজ্ঞাপন প্রদর্শন হচ্ছে। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা তামাকের আসক্তিতে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, আইনে তামাকের বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা থাকলেও আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো একশ গজের মধ্যে থাকা তামাকের দোকানগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আমরা মনে করি সিভিল সোসাইটি এ ব্যাপারে সচেতন ভ‚মিকা রাখতে পারে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী ড. দিপু মনি বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষক ধূমপান করলে উপযুক্ত প্রমাণ পেলে বিনা নোটিশে বহিস্কার এবং ২০ হাজার টাকা জরিমানার কথা জানান।
এছাড়া গতবছরের ২৭ মে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশেপাশের দোকানে সিগারেটসহ তামাক ও তামাকজাত পণ্য বিক্রি বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং পাঠ্যপুস্তকে আলাদাভাবে তামাকের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছিলেন। ঢাকায় অনুষ্ঠিত ওই সভায় সাবেক শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীদের হাতে যেসব পাঠ্যপুস্তক যাবে তাতে সিগারেটসহ তামাকের ক্ষতিকর দিক নিয়ে আলাদাভাবে লেখা থাকবে। বর্তমানে মাদক নিয়ে লেখা থাকলেও তামাক নিয়ে আলাদা ভাবে কোনো লেখা নেই।