শিক্ষার্থীদের সামনে সবই অনিশ্চিত

34

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে বিশেষভাবে উদ্যোগ নিয়ে এবারের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা সম্ভব হলেও শিক্ষার্থীরা আবার কবে ক্লাসে ফিরতে পারবে, এইচএসসি পরীক্ষা কবে নেওয়া সম্ভব হবে- সবই এখনও অনিশ্চিত।
ইংরেজি বছরের শুাং থেকে শেষ দিন পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষাবর্ষ হিসেবে ধরা হয়। তবে কোভিড-১৯ সঙ্কটে অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রয়োজনে এবারের শিক্ষাবর্ষের ব্যাপ্তি বাড়ানোর ভাবনাও সরকারের রয়েছে।
তবে রোববার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তন থেকে ফেইসবুক লাইভে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরার সময় সাংবাদিকের প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, সব কিছুই নির্ভর করবে পরিস্থিতির ওপর।
এবার শিক্ষাবর্ষের হিসাবে কোনো পরিবর্তন আসবে কি না, এমন প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বছরের শুরুর আড়াই মাস শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে পেরেছে। এবার আর কতদিন ক্লাস করতে পারবে এখন কারো পক্ষেই বলা সম্ভব না। কাজেই আমরা সব রকম বিষয়ই বিবেচনায় রাখছি।
‘এবার অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার সময়ই নেই। বার্ষিক পরীক্ষা হবে কি না, হলে কবে হবে, কোন সিলেবাসের উপরে, কতটুকু সিলেবাসের উপরে হবে, পরীক্ষাটি এই ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে নাকি শিক্ষাবর্ষ আগামী বছরের কয়েক মাসের মধ্যে নিয়ে গিয়ে এগুলো সমন্বয় করার প্রচেষ্টা চালাব, সেটা নির্ভর করবে এই মহামারী পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার মত অবস্থায় যখন পৌঁছাতে পারি তখন।’
দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে শুরু করলে গত ১৭ মার্চ থেকে সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
এরপর রোববার থেকে সব অফিস খুলে যানবাহন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনও খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি। সরকার বলছে, পরিস্থিতির উন্নতি হলে তবেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার কথা ভাবা হবে।
দীপু মনি বলেন, অর্থনৈতিক কর্মকাÐকে সচল রাখতে, মানুষের জীবিকার প্রয়োজনে সতর্কতার মধ্যে কিছু অফিস খোলা হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুব সহসা খোলার মত পরিস্থিতি এখনও নেই, যখন অনুকূল পরিস্থিতি হবে তখন সিদ্ধান্ত নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেব।
‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা যেন পিছিয়ে না পরে সেজন্য বহু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে,এগুলোকে আরও উন্নত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই সময় যে ক্ষতি হয়েছে প্রতিষ্ঠান খোলার পর তা পুষিয়ে দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।’
সংসদ টিভির মাধ্যমে যে ক্লাস দেখানো হচ্ছে, তা যে দেশের সব শিক্ষার্থী দেখতে পারছে না, তা স্বীকার করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে সর্বোচ্চ যতটুকু করা সম্ভব আমরা ততটুকু করার চেষ্টা করছি। স্কুল খোলার পর বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা করে ক্ষতি পোষাণোর চেষ্টা করব।
গত ১ এপ্রিল থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর কথা থাকলেও করোনাভাইরাস সঙ্কটে তা পিছিয়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরে দীপু মনি বলেন, সকল প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকে অনেক শিক্ষার্থী হওয়ায় পুরোপুরি গণপরিবহন চালু না হলে এই পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে না।
‘এমন পরিস্থিতিতে পরীক্ষাকেন্দ্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয়। বহু সংখ্যক পরীক্ষা কেন্দ্র বাড়ালেও পরীক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে যাবে। সেই ঝুঁকি এই মুহূর্তে নেওয়া সম্ভব নয় বলেই আমরা মনে করি।
‘সে কারণে পরিস্থিতি আরও অনুকূল না হওয়া পর্যন্ত আমরা এইচএসসি পরীক্ষা নিতে পারছি না। যখনই আমরা মনে করব পরীক্ষা নেওয়ার মত পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে তখন দুই সপ্তাহের একটা সময় দিয়ে পরীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
স্কুল কলেজের শেষ পরীক্ষায় জিপিএ-৫ নিয়ে যে উন্মাদনা অভিভাবকদের মধ্যে রয়েছে, সেটিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন না শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি বলেন, পরীক্ষার্থীরা যার যার মেধা অনুযায়ী সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেবে এবং সে অনুযায়ী ফলাফল পাবে। জিপিএ-৫ না পেলে সবাই মিলে মনে করবেন জীবন বৃথা হয়ে গেল এটা শিক্ষার্থীদের বিকাশের জন্য, তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অনুকূল নয়।
‘আমি আশা করি জিপিএ-৫ নিয়ে এই উন্মাদনা করবেন না। অভিভাবকদের অনুরোধ করব, প্রস্তুতি অনুযায়ী সন্তানরা ভালো ফল করল কি না, সেটা দেখবেন।’ খবর বিডিনিউজের