শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

82

মানিকছড়ি গিরি মৈত্রী সরকারি ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন অনিময়, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগে জেলা প্রশাসক ও দুদকে দু’টি অভিযোগ তদন্তাধীন থাকার পরও চলতি এইচএসসি পরীক্ষা-১৯ এর ব্যবহারিক পরীক্ষায় বিষয়(পত্র) প্রতি গড়ে ১০০-১৫০ টাকা এবং ১ম বর্ষে বেতন বৃদ্ধির প্রতিবাদে ১৯ মে দুপুরে ছাত্র-ছাত্রীরা সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে দ্রুত পুলিশ এসে তা ভন্ডুল করে দেয়। কলেজ অধ্যক্ষের ধারাবাহিক অনিয়মের কারণে শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশংকা সৃষ্টি হয়েছে।
সরজমিনে শিক্ষার্থী সূত্রে জানা গেছে, খাগড়াছড়ির জেলার মানিকছড়ি উপজেলার একমাত্র মানিকছড়ি গিরি মৈত্রী ডিগ্রি কলেজটির সাবেক অধ্যক্ষ মো. এনামুল হক অবসরে যাওয়ার পর ১৯ জানুয়ারি ২০১৬ সালে কলেজের ৬জন সিনিয়র সহকারি অধ্যাপকের জ্যেষ্ঠতা লংঘন করে মংচাইঞো মারমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ করেন তৎকালীন গর্ভনিং বডি। ওই নিয়োগের পর হতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সরকারি কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ছাত্র-ছাত্রীদের বেতন বৃদ্ধি, একাধিক হিসাবে লেনদেন, উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ, বেতন বর্হিভূত সম্মানি গ্রহণ, উন্নয়নের নামে অর্থ হরিলুট এবং অর্থ কমিটির স্বাক্ষরবিহীন ৪ লক্ষ ৪০হাজার ৩ শত ৫৮ টাকা আত্মসাৎসহ কলেজ অধ্যক্ষের অপকর্ম, অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন কলেজ শিক্ষক-শিক্ষিকা। ফলে দু’টি অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত চলমান রয়েছে। তারপরও থেমে নেই কলেজ অধ্যক্ষের অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিসহ অধ্যক্ষের দাম্ভিকতা।
চলমান এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের নিকট থেকে কোচিং এর নামে উত্তোলিত প্রায় ৮৮৬ জন থেকে(জনপ্রতি-১ হাজার ৩ শত) প্রায় সাড়ে ১১ লক্ষ টাকা লুটপাট, চলমান পরীক্ষার শেষ পর্যায়ে ব্যবহারিক পরীক্ষার নামে বিজ্ঞান বিভাগের প্রতি ছাত্রছাত্রী থেকে সাড়ে ৯শত টাকা, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগের সাড়ে ৩শত টাকা করে গ্রহণকে ঘিরে অরাজকতা এবং ১ম বর্ষের চলমান ফাইনাল পরীক্ষা কেন্দ্রে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির শিক্ষার্থী থেকে শুধু ফি বাবদ সাড়ে ৩শত আর বাঙালি শিক্ষার্থীদের নিকট ফি ও বেতন বাধ্যতামূলক করায় ছাত্রছাত্রীরা এর প্রতিবাদ শুরু করেন। যার কারণে ১৯ মে অনুষ্ঠিত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি পরীক্ষার হলে বাঙালি ছাত্রছাত্রীরা বেতন ও ফি না দেয়ায় খাতা ছিনিয়ে নেয় শিক্ষকরা। এতে ছাত্রছাত্রীরা ক্ষিপ্ত হয়ে কলেজ ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মো. হাসানের নেতৃত্বে এ ঘটনার প্রতিবাদ করেন এবং ছাত্রছাত্রীরা চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়ক অবরোধের চেষ্টা চালায়। সড়কে ছাত্রছাত্রীদের অবস্থান টের পেয়ে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সরজমিনে উপস্থিত হয়ে রাস্তা থেকে ছাত্রছাত্রীদের সরিয়ে দেয়। এর পর সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার(অ.দা) এবং কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি (জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি) রুবাইয়া আফরোজ,অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ রশীদ কলেজ অধ্যক্ষের কার্যালয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন । সেখানে চলমান এইচএসসি পরীক্ষায় ব্যবহারিক পরীক্ষার নামে টাকা গ্রহণ এবং ১ম বর্ষের পরীক্ষার্থীদের খাতা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ ১ম বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের বেতন আদায়ে একটু কড়াকড়ির বিষয়ে জবাব দিলেও ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ৮৮৬জন থেকে আদায় করা প্রায় ৫লক্ষ টাকা আদায়ের সন্তোষজনক জবাব দিতে ব্যর্থ হয়। পরে ইউএনও কলেজ অধ্যক্ষকে ছাত্রছাত্রীদের নিকট থেকে বিধিবর্হিভূতভাবে আদায় করা টাকা ফেরতসহ ব্যবহারিক পরীক্ষা গ্রহণে বোর্ড নিদের্শনা উপস্থাপনার নির্দেশ দেন।