শিক্ষার্থীদের কতটা কাজে আসছে ছাত্র রাজনীতি

21

আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডের পর কয়েকদিন পার হয়ে গেলেও, এখনো বুয়েটের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয় এবং ভীতি রয়েছে। ক্যাম্পাসে অব্যাহত বিক্ষোভ আন্দোলন চললেও, ছাত্র রাজনীতি নিয়ে সরাসরি কথা বলতে চান না কোন শিক্ষার্থী বা শিক্ষক। বুয়েটের শিক্ষার্থীরা বলছেন, ভয়াবহ মারধরে আবরার ফাহাদের মৃত্যু হলেও, শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের ঘটনাটি বুয়েটের হলগুলোয় নতুন নয়। তাদের আশঙ্কা, পরিস্থিতি ঠান্ডা হয়ে গেলে তারাও হামলার শিকার হতে পারেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী বলছিলেন, এখানকার প্রথম বা দ্বিতীয় বর্ষের জুনিয়র স্টুডেন্ট না চাইলেও প্রতিটা রাজনৈতিক দলের মিছিলে যেতে হয়। তা সে ওই মতাদর্শে বিশ্বাসী হোক না হোক। যেতে হবেই বাধ্য সে। কিন্তু না গেলে কি হয়? বুয়েটে হাত তোলা, এই বিষয়টা আনকমন না। চড়-থাপ্পড় দেয়া, বা স্ট্যাম্পের মার বলেন, এগুলো করা হয়। ছাদে নিয়ে মারধর করা হয়।
আরেকজন শিক্ষার্থী বলছেন, সিরিয়াস নির্যাতন যেগুলো হয়, তা হলো কাউকে পছন্দ হলো না, অথবা কারো প্রতি তার ব্যক্তিগত আক্রোশ, অথবা ফেসবুক পোস্ট, এসব কারণে যদি মারা হয়, শেষ পর্যন্ত তাকে শিবির নাম লাগিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়। যদি কেউ প্রতিবাদ করে, তাকে আবার শিবির অভিযোগ করে অন্তত হল থেকে বের করে দেয়া হবে। আর যদি হল থেকে বের করে দেয়া হয়, তাকে প্রশাসন থেকেও কেউ সাহায্য করবে না। এ কারণে এসবের কেউ প্রতিবাদও করে না।
শুধু বুয়েট না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও কথা বলে জানা গেল, বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক ছাত্র রাজনৈতিক একটি বড় অনুষঙ্গ আবাসিক হলের আসন পাওয়ার ব্যাপারটি। আসন সংকটের কারণে প্রথম বর্ষে অনেক শিক্ষার্থীর জন্যই আসন পাওয়া কঠিন আর এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে এসব শিক্ষার্থীকে গণরুম বা হলে থাকার ব্যবস্থা করে দেয় ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনগুলো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ হেল বাকী বলছেন, হলে একটা ছেলেকে রাজনৈতিকভাবেই উঠতে হবে। লিগ্যালি শুধুমাত্র বিজয় একাত্তর হল আর মেয়েদের চার পাঁচটি হলে ওঠা যায়। আর কোথাও লিগ্যালি উঠতে দেয় না। ফলে ছেলেদের হলগুলোয় যখন আপনি উঠবেন, আপনাকে বাধ্যতামূলকভাবে রাজনীতি করতে হবে, প্রোগ্রামে যেতে হবে। প্রশাসনিকভাবে কোন সিট দেয়া হয়না, রাজনৈতিকভাবেই সিট দেয়া হবে।
রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা ছাড়া প্রথম বর্ষে হলে ওঠা সম্ভব নয় বলে তিনি জানান। কেউ যদি হলে ওঠার পরে রাজনীতি না করে? তাহলে আমি হলে থাকতেই পারবো না। আমাকে মেরে বের করে দেয়া হবে। ফার্স্ট ইয়ারে আমাকে গণরুমে উঠতে হবে।
আরেকজন শিক্ষার্থী মাহাদি হাসান বলছিলেন, গণরুমে ওঠার পর বড় ভাইদের সন্তুষ্ট করতে না পারায় কীভাবে তিনি ভোগান্তির শিকার হয়েছিলেন। ফার্স্ট ইয়ারে তো ছাত্রলীগের সঙ্গে রাজনীতি করেছি। সেকেন্ড ইয়ারের ঘটনা। ওই দিনও ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি। রাত একটার দিকে হলের কিছু বড় ভাই আমাকে ডেকে নিয়ে গেল। এর কয়েকদিন আগে আমাকে একজন বড় ভাই সিগারেট আর ক্যান্টিন থেকে ভাত এনে দিতে বলেছিল। আমি তাতে রাজি হইনি। সে জন্য আমাকে ডেকে নিয়ে ফোন কেড়ে নিয়ে বাঁশের কেল্লা পেজে ওরাই লাইক দিল। এরপর আমাকে রাত একটা থেকে তিনটা রড দিয়ে স্ট্যাম্প দিয়ে পর্যন্ত মারধর করে পুলিশ ডেকে শিবির বলে ধরিয়ে দিলো। পরে ক্যাম্পাসের সহপাঠী, পরিবারের সদস্যরা এসে আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করে, তিনি বলছেন।
যে কোনো সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই রাতারাতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হলের নিয়ন্ত্রণও ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের হাতে চলে যায়। এরপর থেকে ওই হলের ছাত্র ওঠা থেকে শুরু করে যাবতীয় বিষয়ের নিয়ন্ত্রণ থাকে এসব সংগঠনের হাতে। অতীতে এরকম নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সংঘর্ষ, এমনকি হত্যাকান্ডের ঘটনাও ঘটেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক জোবায়দা নাসরিন বলছেন, শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, বাংলাদেশে যত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যখনি ক্ষমতার পরিবর্তন হয়, তখন দেখা যায় ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ সংগঠনগুলোর প্রথম টার্গেট থাকে বিশ্ববিদ্যালয়কে। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ন্ত্রণের জন্য তারা হলগুলোর নিয়ন্ত্রণ দখল করে। সেজন্য তারা বিরোধী দলের অঙ্গ সংগঠনগুলোকে বের করে দেয়া হয়, নির্যাতন করা হয় যেন তারা হল থেকে চলে যায়। এই নিয়ন্ত্রণের মূলে থাকে তাদের একছত্র আধিপত্য, চাঁদাবাজি, তাদের টেন্ডারবাজি, প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এক ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা। এটা একটি বড় রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ, যার পেছনে সামাজিক, সাংস্কৃতিক অর্থনৈতিক ক্ষমতার বিষয় থাকে।
হল দখলের পর এসব সংগঠনের প্রধান লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা। যাদের জোর যেমন দলের কাজে লাগানো হয়, তেমনি দলের রাজনৈতিক কর্মী বানানোরও চেষ্টা করা হয়। আর সে জন্য আবাসিক সংকট থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, ইডেন বা ঢাকা কলেজের মতো অনেক প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক অঙ্গ সংগঠনগুলোর বড় একটি অস্ত্র গণ রুম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবাসিক হলের এরকম একটি গণ রুমে দেখতে পান, মেঝেতে ঢালাও বিছানা। আশি স্কোয়ার ফিটের একটি রুমে ২০/২৫জন থাকেন বলেন জানা গেল। নিরাপত্তার কারণে এই শিক্ষার্থীর নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না।
তিনি বলছেন, অস্বাস্থ্যকর বলতে যা বোঝায়, তাই আছি। যেখানে আট দশজন থাকা যায়, সেখানে ২০/২৫ জন মিলে থাকতে হচ্ছে। ফার্স্ট ইয়ারে রুমে উঠতে গেলে বড় ভাইদের ধরেই উঠতে হবে। এর শর্ত হলো, তাদের সঙ্গে মিছিলে যেতে হবে, ভাইদের প্রটোকল দিতে হবে। ক্লাস থাকলেও ফোন দিলে, ক্লাস মিস দিয়ে হলেও আসতে হবে। কেউ না গেলে ভাইদের কৈফিয়ত দিতে হয়।
একই বর্ণনা জানা গেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো অনেক ছাত্রের কাজ থেকেই। সেই সঙ্গে প্রতিটা হলেই গেস্ট রুমের নামে টর্চার রুম রয়েছে বলে জানাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা, যেখানে নেতাদের অবাধ্য শিক্ষার্থীদের শাস্তি দেয়া হয়।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, এসব নির্যাতনের ঘটনা হলে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকটাই ওপেন সিক্রেট, সবার জানা আছে। ফলে কেউ অভিযোগ নিয়েও যায় না, সমস্যা সমাধানেও কেউ এগিয়ে আসে না।
বুয়েটের একজন ছাত্র বলছেন, অভিযোগ করার সাহসটাই অনেকের হয় না। কারণ জানে যদি অভিযোগ করা হয়, তাহলে তাকে আবার নির্যাতন করা হবে। প্রশাসন যেহেতু আমার বিপক্ষে, পুলিশ এসে যাকে মারা হচ্ছে, তাকে ধরে নিয়ে যাবে। আর আমাদের হলে থাকতে হয়, বাইরে থেকে আসি বলে হলের সিটের একটা মূল্য আছে। সেটা কেউ হারাতে চায় না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র বলছেন, কার কাছে অভিযোগ করবো। সবাই তো সব জানে। কারো কাছে বলে কিছু হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে এসব ঘটনায় প্রশ্রয় দেয়ার এবং কিছু না করার অভিযোগ করছেন শিক্ষার্থীরা। তবে এ নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি বুয়েটের প্রক্টর বা ভিসি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মো. আখতারুজ্জামান বলছেন, যেকোনো অভিযোগ পেলেই তারা আমলে নিয়ে থাকেন। তিনি বলছেন, যখন কোন অনিয়ম, দুর্নীতি, বিশৃঙ্খলা ঘটনা ঘটলে, প্রশাসনের দৃষ্টিতে আসলে সেটার বিচার করা, সুরাহা করা আমাদের নিত্য নৈমিত্তিক কাজের মধ্যেই পড়ে।
শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, যারা হলের বা শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকেন, তাদের যেন সবসময় একটা চাপের মধ্যে, ভয়ের মধ্যে কাজ করতে হয়। আসলে কি ব্যাপারটা তাই?
আখতারুজ্জামান বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনটি স্বতন্ত্র। শিক্ষকদের সুউচ্চ নৈতিক মূল্যবোধ, সেটা কোন চাপের সামনে নতি স্বীকার করে না। সেখানে কোন আপোষ কাম্য নয়।
বরাবরই আধিপত্য বিস্তার করতে দেখা গেছে, যাদের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের যোগাযোগ বরাবরই কম। এরকম কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছে জানতে চেয়েছিলাম, ছাত্র রাজনীতি তাদের জন্য কখনো কোন সুবিধা এনেছে কিনা?
একজন বলছেন, ছাত্র রাজনীতির কোন সুবিধা আমি কখনো দেখিনি। বরং দেখেছি, যাদের ক্ষমতা দেয়া হয়, তাদের দাপটে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা থাকতে পারি না।
আরেকজন বলছেন, ছাত্র রাজনীতি বন্ধের পক্ষে আমি নই, তবে রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গ সংগঠন হিসাবে নয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক রাজনৈতিক সংগঠন থাকতে পারে।
ফলে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা এখন দাবি করছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গ সংগঠন হিসাবে ছাত্র সংগঠনগুলোকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিষিদ্ধ করা হয়। যদিও এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে শিক্ষার্থী এবং বিশ্লেষকদের মধ্যেই। সম্প্রতি চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির অভিযোগে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয় আওয়ামী লীগ। এছাড়া অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, হুমকি, টেন্ডার, এমনকি ছিনতাই করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হওয়ার মতো অভিযোগ রয়েছে।
বিএনপি-জামায়াত সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেও একই ধরনের অভিযোগ উঠেছে। এসব নিয়ে সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।
সমাজবিজ্ঞানী এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক সামিনা লুৎফার কাছে জানতে চেয়েছিলাম, ছাত্র রাজনীতির বিষয়টি এমন বিতর্কিত কেন হয়ে উঠলো?
তিনি বলছেন, ছাত্র রাজনীতি মানে হলো ছাত্ররা নিজের স্বার্থে কথা বলবে, এটাই হওয়ার কথা। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন, সেটা ছাত্রলীগ বা ছাত্রদল, যারা যখন ক্ষমতায় থাকে, তারা কি সেটা করেন? এরা করেন গুন্ডামি, মাস্তানি, সন্ত্রাস। এটা তো ছাত্র রাজনীতি না।
সাবেক শিক্ষার্থীরা বলছেন, বারবার সরকার বদল হয়েছে, কিন্তু ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনগুলোর নাম বদলালেও আচরণের কোন পরিবর্তন হয়নি। যে দলই ক্ষমতায় থাকুক, সাধারণ শিক্ষার্থীদের সবসময়েই তাদের নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।
২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন সাদিয়া মাহজাবিন ইমাম, যিনি আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি, দুইটি সময়েই ছাত্র রাজনীতির চেহারা দেখেছেন। তার মতে, তারা মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ, সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে তাদের কোন পার্থক্য তার চোখে পড়েনি।
তিনি বলছেন, আমি বিএনপি এবং আওয়ামী দুই সরকারের সময়টায় ছিলাম জুনিয়র স্টুডেন্ট। গণ রুমে থাকতে হতো। সরকার বদলের আগে ও পরে, দুই ছাত্র সংগঠনের নেত্রীরা আমাদের মিছিলে যেতে বাধ্য করতেন। এমনও হয়েছে, তাদের পায়ের শব্দ শুনতে পেয়ে আমরা তিন চারজন মিলে বাথরুমে গিয়ে লুকিয়ে ছিলাম, যাতে মিছিলে যেতে না হয়।
তবে ছাত্রলীগ আর ছাত্রদল, উভয়েরই দাবি তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্যই আন্দোলন করেন এবং কাউকে জোর করে মিটিং মিছিলে আনেন না। যদিও ছোটখাটো ভুল ত্রæটি হতে পারে।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান আল ইমরান বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা থেকেই বলি, এটা সম্পূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় নয়। ফলে ফার্স্ট ইয়ার সেকেন্ড ইয়ারের শিক্ষার্থীরা লিগ্যালি হলে থাকতে পারেন না। ফলে বড় রুমে চারজনের রুমে অনেকে মিলে থাকে। এটার ক্ষেত্রে প্রশাসনের সহযোগিতা থাকে, ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন, অন্য ছাত্র সংগঠনের সহযোগিতায় এটা পরিচালিত হয়। এক্ষেত্রে মাঝে মাঝে দুই একটা ক্রুটি বিচ্যুতি ঘটে। কিন্তু কাউকে জোর করে মিছিলে নিয়ে আসা, কর্মসূচিতে নিয়ে আসা ছাত্রলীগ সমর্থন করে না।
ছাত্রদল ক্ষমতায় থাকার সময় তাদের বিরুদ্ধেও একই ধরনের অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু সেগুলোকে ভুল ত্রæটি বলে বর্ণনা করছেন ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নেতা মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি বলছেন, ছাত্রদল সবসময় ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কাজ করেছে। এক্ষেত্রে আপনি দুই একটি ব্যতিক্রম বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা কম ঘটেছে। সে সময় যে অভিযোগ উঠেছে, সেটা খুবই নগণ্য। এতো বড় অভিযোগ ওঠেনি। সে সময় কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে, সেটা আমরা অস্বীকার করতে পারি না। কিন্তু বর্তমান যুগের প্রেক্ষাপটের সঙ্গে আপনি যদি সেই সময় মিলিয়ে দেখেন, আমি মনে করবো এটা আকাশ এবং পাতাল ব্যবধান।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক সামিনা লুৎফা বলছেন, ছাত্রলীগ বা ছাত্রদলের মতো ছাত্র সংগঠনগুলো যতদিন মূল সংগঠন থেকে আলাদা হতে না পারবেন, ততদিন এই অবস্থার পরিবর্তন হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
অধ্যাপক লুৎফা বলছেন, সামরিক শাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আমরা গণতন্ত্র এনেছি, কিন্তু এরপর দুই বড় রাজনৈতিক দল ছাত্রদের গুটি হিসাবে ব্যবহার করেছে। সামরিক শাসকের বিরুদ্ধে ছাত্রদের যে ভূমিকা ছিল, সেটা তারা তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের ব্যবহার করেছে। ছাত্রদের ব্যবহার করে এই জাতীয় রাজনীতি এবং শিক্ষকদের রাজনীতি, আমাদের শিক্ষাঙ্গনকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। আমি বলবো, জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে তাদের সম্পর্কিত হওয়াটাকে বন্ধ করতে হবে। তবে সেটা করতে হলেও মূল রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা জরুরি বলে মনে করেন এই বিশ্লেষক।
মেয়েদের হলগুলোয় এই প্রবণতা একটু কম হলেও, সেখানেও নানাভাবে ছাত্র সংগঠনগুলোর নেত্রীদের মাধ্যমে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। কিছুদিন আগে ডাকসু নির্বাচনেও দেখা গেছে, ভিপি পদসহ অনেক হলে বা পদে ছাত্রলীগ বা ছাত্রদলকে বাদ দিয়ে স্বতন্ত্র প্যানেলের প্রার্থীদের বেছে নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এর কারণ ব্যাখ্যা করছিলেন শামছুন্নাহার হলে স্বতন্ত্র প্যানেলের নির্বাচিত ফাতিমা তাহসিন বলছেন, ছাত্রলীগ বা ছাত্রদল বা যেকোনো ছাত্র সংগঠনের উদ্দেশ্য কি? ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব করা। আমার কিন্তু সেটা দেখিনি। বরং তারা তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য এবং তাদের সুবিধার জন্য বেশি লড়ে গেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এতে কোন অসুবিধা হচ্ছে কিনা, সেদিকে কোন খেয়াল ছিল না। তাই হয়তো তাদের মনে হয়েছে, ছাত্রলীগ বা ছাত্রদলের বাইরের কাউকে যদি তারা ভোট দিতে পারে, তাহলে হয়তো তারা সেবা পাবে। সেই আশা থেকেই তারা আমাদের ভোট দিয়েছে।
ডাকসু নির্বাচনের ওই ফলাফলে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিপুল ভোট প্রাপ্তি প্রমাণ করে দিচ্ছে যে, প্রচলিত রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠনগুলোর ওপর থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আস্থা কমে যাচ্ছে।
সেই আস্থা তারা ফেরাতে চায় কিনা, অথবা আদৌ ফেরাতে পারবে কিনা, সেটাই হয়তো এখন এসব দলের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।