শিক্ষকের বাসা-শ্রেণিকক্ষই কোচিংয়ের নিরাপদ স্থান!

55

আজ থেকে টানা ২২ দিন সারাদেশের ন্যায় নগরীর সকল কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকার নির্দেশনা রয়েছে। জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) এবং জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা উপলক্ষে এমন নির্দেশনা প্রদান করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত কয়েক বছর ধরে প্রশ্নফাঁস রোধ ও পরীক্ষার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে আসছে মন্ত্রণালয়টি। এছাড়াও এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জেলা প্রশাসন।
এমন পরিস্থিতিতেও কৌশলে কোচিং চালিয়ে যান কিছু প্রতিষ্ঠান। এই নিষিদ্ধ সময়ে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে বাইরে তালা লাগিয়ে ভেতরে কোচিং পরিচলানা করা, শিক্ষকদের কোয়ার্টার ও বেসরকারি কলেজের শ্রেণিকক্ষকে নিরাপদ স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছেন কিছু অসাধু কোচিং সেন্টারের মালিক। তবে সবখানে কঠোর নজরদারি ও অভিযান পরিচালনার কথা বলেছেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আবু হাসান সিদ্দিক।
জানা গেছে, গত ১৩ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর আগে জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে আয়োজনে জাতীয় নিরাপত্তা-সংক্রান্ত কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। জেএসসি-জেডিসি আগামী ২ নভেম্বর শুরু হয়ে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। এই পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে ২৫ অক্টোবর থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত টানা ২২ দিন দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন শিক্ষামন্ত্রী। প্রশ্নফাঁস রোধে গত কয়েকবছর প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার এমন নির্দেশনা দিয়ে আসছে মন্ত্রণালয়টি। তবে বাস্তবে কতুটুক কোচিং বন্ধ থাকে? এমন প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধানে উঠে আসে বিভিন্ন কৌশলের কথা। নিষিদ্ধ এই সমটায় কিছু কোচিং সেন্টার মালিক ক্লাস পরিচালনা করেন শিক্ষকদের বাসায়। এরজন্য শিক্ষকদের আলাদা ভাড়াও দেন তারা।
নগরীর চকবাজার কোচিং সেন্টারের জন্য সবচেয়ে বিখ্যাত। এখানে প্রায় সবকটি কোচিংয়ের শাখা রয়েছে। বলা হয়ে থাকে চকবাজার কোচিং বাণিজ্যের রাজধানী। এই এলাকায় কোচিং বন্ধ রাখা অসম্ভব মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কোচিং পরিচালনা করা হয় শিক্ষকদের আবাসিক ভবনে। এরজন্য চট্টগ্রাম কলেজের কতিপয় শিক্ষকের বাসভবন সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় বলে জানা গেছে। বিভিন্ন কোচিংয়ের পরীক্ষা ও কোচিং সংশ্লিষ্ট কলেজ শিক্ষকরা নিরাপদে পড়ান এখানে। এছাড়াও চকবাজারে বিভিন্ন বেসরকারি কলেজের শ্রেণিকক্ষের চাহিদা তৈরি হয় আলাদাভাবে। কারণ শ্রেণিকক্ষে কোচিং চলতে পারে, সেটা সাধারণ কারো বোধগম্য হবে না। তাই কৌশলের অংশ হিসেবে বেসরকারি কলেজের শ্রেণিকক্ষে চলে কোচিং সেন্টারের নিয়মিত কার্যক্রম। আবার অনেকে বাইরে তালা লাগিয়ে বিকল্প দরজা ব্যবহার করে কোচিং পরিচালনা করেন। চকবাজার ছাড়াও জিইসি, মুরাদপুর, জামালখানের কিছু কিছু কোচিং সেন্টার এই কৌশল অবলম্বন করে বলে জানা গেছে।
এমন পরিস্থিতি নিয়ে নামে প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কোচিং সেন্টার মালিক পূর্বদেশকে জানান, আমরা সরকারকে ভ্যাট দিয়ে কোচিং সেন্টার পরিচালনা করছি। এখন বছরে তিনমাস যদি কোচিং বন্ধ রাখতে হয়, তাহলে তো আমাদের এই ব্যবসা ছেড়ে দিতে হবে। অনেকে বেকার হতে বাধ্য হবে। তারা দাবি করেন, প্রশ্নফাঁস রোধে যদি কোচিং বন্ধ রাখা হয়, তাহলে শিক্ষকদের ব্যাচ ও বিভিন্ন বিদ্যালয়ে নিয়মিত চলা কোচিং বন্ধ করা হবে না কেন ? তাছাড়া এই পর্যন্ত প্রশ্নফাঁসে কোনো কোচিং সেন্টার জড়িত বলে প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বরঞ্চ শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের সংশ্লিষ্টতার কথা জেনেছি। তাহলে কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখলে কি প্রশ্নফাঁস বন্ধ হবে ? এমন প্রশ্ন তোলেন তারা।
চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষকদের আবাসিক ভবনে কোচিং সেন্টার পরিচালিত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ মুজিবুল হক চৌধুরী বলেন, আগে কিভাবে চলেছে তা আমার জানা নেই। তবে এবার যাতে কোনোভাবে এমন কার্যক্রম চলতে না পারে, তার সব ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করবো। তিনি নিজেই কঠোর নজরদারি করবেন বলে জানান।
চট্টগ্রাম কোচিং এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রউফ সোহেল পূর্বদেশকে বলেন, সরকারের সবধরনের সিদ্ধান্ত মান্য করবে আমাদের সদস্য কোচিং সেন্টারগুলো। আমাদের প্রায় অর্ধশত কোচিং সেন্টার সদস্য রয়েছে। সরকার এসএসসি, এইচএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার পূর্বে একমাস করে কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখে। সেক্ষেত্রে আমরা শতভাগ প্রস্তুত সরকারকে সহযোগিতা করতে। তবে তা কতটুকু বাস্তবসম্মত সেটা ভাববার সময় এসে গেছে। যারা প্রশ্নফাঁসে জড়িত তাদের শাস্তির আওতায় আনা হোক। ঢালাও সিদ্ধান্তের কারণে আমাদের ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে। অনেকে পোষাতে না পেরে কোচিং সেন্টার বন্ধ করে দিচ্ছেন। সাথে কমছে কর্মসংস্থান। তাই সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলের প্রতি আমার আহব্বান, মূল জায়গাটি অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। ঢালাওভাবে যাতে কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া না হয়।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আবু হাসান সিদ্দিক সরকারে সিদ্ধান্ত অমান্য করে কোনো কোচিং সেন্টার পরিচালনা করা যাবে না। এজন্য অভিযান পরিচালনা করা হবে। কঠোরভাবে এই সময়টা পর্যবেক্ষণ করা হবে। তবে কেউ যদি আদেশ অমান্য করে কোচিং পরিচালনা করেন বা করতে সহায়তা করেন তাহলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।