সেদিন প্রখ্যাত এক শিক্ষাবিদ (নামটা এই মুহুর্তে মনে আসছেন) বলেছেন, শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের মন থেকে সালাম দেয়না। একেবারে খাঁটি কথাই বলেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, অনেকে দেখা হলে সালাম তো দূরে থাক গা ঘেঁষেই চলে যায় ! অথচ মানুষ গড়ার কারিগর হচ্ছেন শিক্ষক। মা-বাবা জন্ম দেয়ার পর মূলত শিক্ষকের হাতেই গড়ে উঠে সন্তান। ছাত্রকে মানুষ করার জন্য শিক্ষকের চেষ্টার অন্ত থাকে না। একজন শিক্ষক কখনো ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁর দায়িত্বে অবহেলা করেন না বলেই বিশ্বাস করি। কিছু শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে যারা বিশাল শিক্ষক সমাজের প্রতিনিধিত্ব করেনা। প্রত্যেক দেশেই শিক্ষকের সম্মান রয়েছে। রয়েছে তাদের জন্য পর্যাপ্ত সম্মানী। আমাদের দেশে এখনো পর্যন্ত শিক্ষকগণ সেভাবে সম্মানী পান না। এক্ষেত্রে বৈষম্য থেকে গেছে। বিভিন্ন সময় এই বৈষম্যসহ নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে শিক্ষকগণ রাস্তায়ও নামেন। সরব থাকেন প্রতিবাদ, বিক্ষোভে। সরকারকে শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবিগুলো নিয়ে ভাবার অনুরোধ জানাই। দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত যত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাতে হাজার, লক্ষ শিক্ষক শিক্ষকতা করে যাচ্ছেন। ছাত্রদের পাঠদানে ব্যাপৃত আছেন। আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন তাদের মানুষ করার জন্য। এরপরও নানা সময় শিক্ষকরা বিব্রতকর অবস্থার মুখোমুখি হন। সম্মুখীন হন নানা প্রতিকূলতার। মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সেই ‘শিক্ষকের মর্যাদা’ দেয়ার ঘটনাটি আমরা সবাই জানি। সম্রাট তাঁর পুত্রের শিক্ষককে যেভাবে মর্যাদা দিয়েছিলেন সে ধরণের মর্যাদা কি এখন আছে? বাদশাহপুত্র পায়ে পানি ঢালছে আর এটিকে অপরাধ মনে করেছিলেন শিক্ষক। কিন্তু সম্রাট অবাক করে দিয়ে শিক্ষককে দিলেন সম্মান।বললেন,পুত্র কেন শিক্ষকের পাও হাত দিয়ে ধুয়ে দিল না। শ্রদ্ধাবোধ কমে আসলেও সমাজে শিক্ষকদের একটি সম্মানজনক স্থান রয়েছে। সমাজে আলো ছড়িয়ে দিতে শিক্ষকগণ চেষ্টারত আছেন। পর্যাপ্ত সুবিধাদি না পেলেও তাঁরা তাঁদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। থেমে নেই তাঁদের কর্মতৎপরতা। দেশে প্রতিবৎসর পাবলিক পরীক্ষাসমূহের যে আশা জাগানিয়া ফলাফল তার কারিগর কিন্তু এই শিক্ষক সমাজ। তাদের প্রচেষ্টায়ই এই সফলতা। বছরের বিভিন্ন সময় পরীক্ষা নেওয়া,খাতা মূল্যায়নের মতো কঠিন ও স্পর্শকাতর কাজ বছরের পর বছর ধরে তারা করে চলেছেন। দেশের সকল স্তরে যারা দায়িত্ব পালন করে চলেছেন তারা সবাই কোন না কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকের ছাত্র। সে হিসেবে দেশের উন্নয়নের পেছনেও রয়েছে শিক্ষকদের অবদান। শিক্ষকগণ বছর বছর দেশের জন্য তৈরি করছেন মেধাসম্পদ। যে সম্পদ দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে সহায়ক। শিক্ষকদের প্রতি সকলের উপযুক্ত শ্রদ্ধাবোধ থাকা উচিত। এই শ্রদ্ধাবোধের মাত্রা আমাদের সমাজ থেকে দিন দিন উবে যাচ্ছে। প্রাথমিকের গণ্ডি পেরোলেই দেখা যায় অনেক ছাত্র তার শিক্ষককে যথাযথ সম্মান দেয়না। আমি বলব গুটি কয়েকজনের কথা বাদ দিলে দেশের শিক্ষকদের বেশিরভাগই তাদের দায়িত্ব পালনে অটল থাকেন। অব্যাহত রাখেন মানুষ গড়ার প্রচেষ্টা।
শিক্ষকদের জন্য আলাদা বেতন কমিশন গঠনপূর্বক উপযুক্ত সম্মানীর ব্যবস্থা করা ও যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ করা দরকার। যথাযথ প্রশিক্ষণ, আবাসন ব্যবস্থাসহ নানা সুবিধা বাড়ানো উচিত। শিক্ষকগণও তাদের দায়িত্ব পালনে আরো সচেষ্ট হবেন- এ আশা সাধারণ মানুষের।শিক্ষকদের সম্মানও সম্মানীর যেন কোন ঘাটতি না থাকে সে ব্যাপারে সকলের সচেতনতা কাম্য।
লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক