‘শিক্ষকদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে দুদক’

110

সরকারি বেসরকারি স্কুল কলেজের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধে, ২০১২ সালে সরকার কর্তৃক প্রণীত নীতিমালার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে কয়েকটি পৃথক রীট হয়। সেই রীটের চ‚ড়ান্ত শুনানী শেষে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ, গত ৭ ফেব্রুয়ারী উক্ত রীটের রায় বা চুড়ান্ত নিষ্পত্তি করতে গিয়ে শিরোনামে উল্লেখিত মন্তব্যটি করেছেন। উল্লেখ্য গত কয়েক সপ্তাহ যাবৎ দুদক চেয়ারম্যান চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। এই সময় বেশ কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক দেরীতে আগমন দৃষ্টিগোচর হয়। যদিও বিষয়টি বিভিন্ন পত্রিকায় বিভিন্ন জনে শিক্ষক অনুপস্থিত হিসাবে উল্লেখ করেছেন। এখানে অনুপস্থিতি এবং বিলম্বে উপস্থিতি’র মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। অনুপস্থিত মানে হচ্ছে কর্মস্থলে একেবারেই না আসা। তবে অনুপস্থিতি হোক আর বিলম্বে উপস্থিতি হোক দুটিই গণকর্মচারী শৃঙ্খলা (নিয়মিত উপস্থিতি) অধ্যাদেশ, ১৯৮২ অনুযায়ী অপরাধ।
যা বলছিলাম, কোচিং বাণিজ্য সম্পর্কিত রীটের রায় প্রদানের সময় আদালত নিজস্ব পর্যবেক্ষণে বলেছেন, ব্যাংকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হচ্ছে, আর শিক্ষকদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে দূর্নীতি দমন কমিশন। আইনজীবিদের উদ্দেশ্য করে আদালত আরো বলেন, দূর্নীতির সঙ্গে জড়িত বড় বড় রাঘব বোয়ালদের ধরে এনে ছেড়ে দিয়ে, শুধুমাত্র স্কুল শিক্ষকদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে দুদক। যেখানে ব্যংকের হাজার হাজার কোটি লুটপাট হয়ে যাচ্ছে, সেখানে প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষকরা স্কুলে সময়মত যাচ্ছেন কী যাচ্ছেন না, তা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে দুদুক। আদালত পযর্বেক্ষনে আরো বলেন, ছোট দূর্নীতির আগে বড় দূর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন। তবেই দূর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব।
আদালতের পর্যবেক্ষণ এবং এই মন্তব্য এই সময়ে তাৎপর্য বহন করে। যদিও প্রত্যেক শিক্ষক বিদ্যালয়ে যথা সময়ে উপস্থিতি নিশ্চিত করা জরুরী। তবে কিছু কিছু বিদ্যালয়ে কিছু কিছু শিক্ষকের কারণে সমগ্র শিক্ষক জাতি কালিমা বহন করতে পারেনা। যারা বিদ্যালয়ে নিয়মিত ভাবে বা অভ্যাসগতভাবে দেরীতে আসেন কিংবা অনুপস্থিত থাকেন, তাদের অবশ্যই শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধি অনুযায়ী শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। যদিও এই সংখ্যা লক্ষ লক্ষ শিক্ষকের মধ্যে অতি নগণ্য বলা যেতে পারে।
দুদক কর্তৃক প্রথম পর্যায়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন, প্রাথমিকভাবে অস্বাভাবিক মনে হলেও হয়ত দুদক এর নিজস্ব একটি রোড ম্যাপ রয়েছে। যেমন- প্রথম দিকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য এই জাতীয় অতি গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর গুলো দিয়ে কার্যক্রম শরু করেছে। এই দিক থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য সেক্টরগুলোর দিকে দৃষ্টি দিবে। আর তাই যদি হয়, তবে কিছু দিন অপেক্ষা করে দেখার প্রয়োজন রয়েছে পরবর্তী পদক্ষেপ কি হতে পারে।
আমাদের এসডিজি-৪ অজর্নের জন্যে যা কিছু প্রয়োজন তা অবশ্যই করতে হবে। আর তা হতে হবে সুষম ভাবে। কারণ একটি বিভাগ অন্য একটি বিভাগ ওতপ্রোত ভাবে জড়িত, যা অনেকটা শিকলের মত। তাই কোন একটি বিভাগ বা সেক্টরে দূর্নীতি দমনে শৈথিল্যতা পরিলক্ষিত হয়ে থাকলে, সামগ্রিকভাবে দূর্নীতি দমন সফল হওয়া সমম্ভ নয়। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ খাত সমূহ চিহ্নিত করে, সঠিক পরিকল্পনার ভিত্তিতে রাজনৈতিক চাপ উপেক্ষা করে জিরো টলারেন্স এর মাধ্যমে দূর্নীতি দমনে এগিয়ে যেতে হবে। একই সাথে পর্যায়ক্রমে সকল স্তরের দূর্নীতি সমান ভাবে নির্মূল করতে হবে।
বলাবাহুল্য তারপরেও উল্লেখ্য যে, শিক্ষার গুনগত মান উন্নয়নে অনেকখানি নির্ভর করে শিক্ষকের আন্তরিকতার উপর। এখানে টেনে এনে ক্লাসে প্রবেশ করিয়ে শিখন শেখানোর মাধ্যমে মানসম্মত শিক্ষা অর্জন করা সম্ভব নয়, যদি আন্তরিকতা না থাকে। কারণ বিদ্যালয়ে শিখন শেখানোর ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে একজন আন্তরিকপূর্ণ শিক্ষক।
তাই শ্রেণি কার্যক্রমে সফলতা আনতে শিক্ষকদের আন্তরিকতা সৃষ্টি জরুরী হয়ে পড়েছে। এই বিষয় শিক্ষকদের কিভাবে আন্তরিকতা সৃষ্টি করা যায়, কিভাবে প্রেষণা সৃষ্টি করা যায় তা নিয়েও ভাবতে হবে।