শাহ (ক.) আল-মাইজভান্ডারীর অধ্যাপক কাজী ফরিদ উদ্দিন আখতার

149

বিশ্বনবী ইমামুল মোরছেলীন রাহমত উল্লীল আলামীন জীবনাদর্শ কেন্দ্রীক ইসলামী জগতে যতগুলো মানব কল্যাণমুখী ত্বরীকা আছে তৎমধ্যে গাউছুল আযম শাহছুফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (ক.) আল-মাইজভান্ডারী কর্তৃক প্রবর্তিত ত্বরীকা-এ-মাইজভান্ডারী একটি বিশ্বময় পরিচিত অনন্য আদর্শমন্ডিত সুফী তাত্তি¡ক জনপ্রিয় আধ্যাত্মিক প্ল্যাটফরম। এই ত্বরীকার বংশীয় ধারায় বিকশিত আধ্যাত্মিকব্যক্তিত্বগণের মধ্যে মগ্নচৈতন্যের প্রধান পুরুষ হযরত গাউছুল আযম শাহছুফী সৈয়দ গোলামউর রহমান প্রকাশ বাবাভান্ডারীকে এই ত্বরীকার প্রধানতম রূপকার বলা যায়, তাঁর দেখানো এশ্কে এলাহীর পথে জীবনোৎস্বর্গকারী মহান আধ্যাত্ন সাধকগণের মাঝে তাঁর সহোদর ভ্রাতগণ ত্বরীকার জন্য যে অবদান রেখেছেন তাঁর বর্ণনা দিতে গেলে রীতিমত একটি পুস্তিকা প্রণয়ন আবশ্যক। পত্রিকায় সীমিত কলেবরে তা সম্ভব নয় বিধায় আমি আজ বাবা ভান্ডারীর সহোদর আমিরুল আশেকিন শাহছুফী সৈয়দ মোহাম্মদ হাশেম শাহ আল মাইজভান্ডারী সম্পর্কে কিঞ্চিৎ আলোকপাত করে আমার লেখাটি সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করছি। আওলাদে রাসুল (স.) গাউছুল আযম মাইজভান্ডারী শাহছুফী সৈয়দ আহমদ উল্লা (ক.) এর ভ্রাতৃষ্পুত্র এবং গাউছুল আযম শাহছুপী সৈয়দ গোলাম উর রহমান বাবা ভান্ডারীর সহোদর ভ্রাতা তৎকালীন অখন্ড মাইজভান্ডার দরবার শরীফের মোন্তাজেমে-এ-ভান্ডার, আমীরুল আশেকীন শাহছুফী সৈয়দ মোহাম্মদ হাশেম শাহ আল মাইজভান্ডারী আনুমানিক ১৮৭০ সনে চট্টগ্রামস্থ ফটিকছড়ি উপজেলাধীন মাইজভান্ডার দরবার শরীফে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা সৈয়দ আবদুল করিম শাহ এবং মাতা মশররফজান বিবির পরিবারে এই মহানসুফী সাধক হযরত আলী (ক.) এর ২৭ তম বংশধরের এক ভাগ্যবান পুত্র সন্তান হিসেবে মহান আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে প্রেরিত হয়ে পিতামাতার যেমন মুখ উজ্জ্বল করেছেন তেমনি অসংখ্য বিপন্ন মানবসন্তানকে আলোর পথে তথা ইহুদি নেছারাতুল মোন্তাকিমের পথে পরিচালিত করে প্রকৃত নায়েব এ রাসুলে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা-দীক্ষার পাশাপাশি তিনি যুগল গাউছুল আযম অর্থাৎ হযরত কেবলা ও বাবাভান্ডারীর সরাসরি সান্নিধ্যে ধন্য হয়ে এলমে তাছাউফে স্বীয় মেধা ও সীনমোবারককে ঐশী জ্ঞানে ভরপুর করে নিয়েছিলেন। দীর্ঘসময় স্বীয় পীরের সান্নিধ্যে থাকায় তিনি বাবাভান্ডারীর অনেক রহস্যময় কর্ম ও দিকনির্দেশনার নির্ভুল ব্যাখ্যা দিতে পারতেন। স্বীয় যোগ্যতায় এবং গাউছে পাকের ফয়েজ প্রাপ্ত হয়ে তিনি সমগ্র দরবারের এন্তেজামের গুরুদায়িত্ব দক্ষতার সাথে পালনে সক্ষম হয়েছিলেন, মাইজভান্ডার দরবার শরীফ আধ্যাত্নিক হলম ও সুফী সাধনার কেন্দ্রস্থলে পরিণত হওয়ার সূচনালগ্ন থেকেই বিভিন্নসময় ব্যবস্থাপনার প্রধান দায়িত্ব পালনের মতো গুরুভার দক্ষতার সাথে বহন করতে তিনি সক্ষম হন। মাইজভান্ডারী ত্বরীকার প্রধান প্রাণপুরুষ হযরত গাউছুল আযম শাহছুফী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (ক.) জিবদ্দশায় তাঁরই মর্জিতে দরবারের সার্বিক এন্তেজামের দায়িত্ব পেয়েছিলেন এই মহান সুফী/ ১০ই মাঘের মহান ওরশ শরীফে ১৯০৭ খ্রি. থেকে ১৯২৪ সন পর্যন্ত তিনি দরবারের সার্বিক এন্তেজামের গুরু দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করেন। হযরত কেবলা এবং বাবাভান্ডারীর সময় দরবারে ছিলো না কোন আলাদা প্রচার ব্যবস্থা, ঐশী জ্ঞানে আলোকিত হযরতের ছোহবত প্রাপ্ত সবাই হযরত কেবলা ও বাবাভান্ডারীর নামের ওসিলায় খোদার প্রেমে বিশ্বমানবকে টানতে চেয়েছেন। সেই মহান চেতনায় উদ্ভুদ্ধ্য হয়ে তিনি গঠন করেন মানব কল্যাণ সমিতি নামে যুগোপযোগী ও অত্যন্ত প্রগতিশীল একটি সার্বজনীন সংস্থা, তিনি ছিলেন এই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বাবা ভান্ডারীর জেষ্ঠ্য সন্তান শাহজাদা সৈয়দ খায়রুল বশর আল হাচানী, আল মাইজভান্ডারী। এভাবে অসংখ্য গণমুখী কার্যাবলী ও আলৌকিক কারামত সমুহের বর্ণনা সীমিত কলেবরে দেয়া প্রায় অসম্ভব। উল্লেখ্য এই মহান সাধকের ঔরশে স্বনামধন্য পুত্র বংশীয় আওলাদগনের মধ্যে হযরত শাহছুফী সৈয়দ আবদুল খালেক (ক.), গ্রুপ ক্যাপ্টেন সৈয়দ আবুল ফয়েজ, সৈয়দ আবু জাফর এবং মহান অলীয়ে কামেল হযরত শাহছুফী সৈয়দ আবু তালেব শাহ আল মাইজভান্ডারী ও হযরত শাহছুফী সৈয়দ আবু আহমেদ ছাহেবের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ্যযোগ্য। এই মহান সাধক যুগে যুগে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে মৌলা মাইজভান্ডারীর প্রতিষ্ঠিত আধ্যাত্মিক ঝান্ডা তথা লেওয়ায়ে-এ আহমদীর পতাকাকে প্রবাহমান রাখার মত সুযোগ্য উত্তর পুরুষ রেখে গেছেন। যাঁদের মাধ্যমে বর্তমান ভোগউম্মাতাল বিপন্ন মানবতা মুক্তির ঠিকানা পেয়ে অগনিত মুক্তি পাগল মানুষ মাইজভান্ডার দরবার অভিমুখে আগুয়ান। আজ ২৪ জুলাই আমিরুল আশেকান হযরত শাহছুফী সৈয়দ মোহাম্মদ হাসেম ও ত্বদ্বীয় পুত্র মহান অলিয়ে কামেল সৈয়দ আবু তালেব শাহ আল মাইজভান্ডারীর স্মরণে পবিত্র ওরশ শরীফের মহাসমারোহে আমাদের ফরিয়াদ হোক “হে খোদা আমাদেরকে আপনার নেয়ামতপ্রাপ্ত বন্ধুগণের (অলিগণের) পথে চলার তৌফিক এনায়েত করুন। আমিন।