শাহী জামে মসজিদে প্রতিদিন ৪ হাজার রোজাদারের ইফতার

182

সেহরির পরপরই শুরু হয় ইফতার তৈরির আয়োজন। বাবুর্চিরা কাজে নেমে পড়েন মসলাপাতি ও অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে। প্রস্তুত করা হয় আনুষঙ্গিক অন্যান্য জিনিসও। সকাল হলেই চুলায় দেওয়া হয় আগুন। ছোলা, পিঁয়াজু, জিলাপি, বেগুনি, শরবতসহ বেশ কয়েকটি আইটেম বানানোর এ কাজ চলে বিকেল চারটা পর্যন্ত। এরপর থালা-বাসনে করে সে ইফতার পরিবেশন করা হয় রোজদারদের মাঝে। প্রতিবছর রমজানে প্রতিদিন চার হাজার রোজাদারের এমন আয়োজন থাকে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদে। আর এ ইফতারে শরিক হতে দূরদূরান্ত থেকেও ছুটে আসেন অনেক রোজাদার।
চার হাজার রোজাদারের এই ইফতার মসজিদের বারান্দায় সাজিয়ে রাখা হয়। আসরের নামাজের পর থেকে শুরু হয় ইফতারের ফজিলত নিয়ে আলোচনা। রোজাদাররা আলোচনা শুনতে সারিবদ্ধভাবে বসে পড়েন বারান্দায়। লম্বা মুখোমুখি সারি। নানা বয়সী এবং শ্রেণি-পেশার মানুষ রয়েছেন এতে। ধনী-গরিব কোনো ভেদাভেদ নেই। ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসলে একে একে ইফতারির বাসনগুলো রোজদারদের সামনে দিয়ে আসেন স্বেচ্ছাসেবকরা। সবাই পাশাপাশি বসে ইফতারে শরিক হন। সম্পূর্ণ মক্কা-মদিনার আদলে এ ইফতার। মসজিদের খতিব সাইয়্যদ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন তাহের জাবেরী আল-মাদানীর ব্যক্তিগত উদ্যোগ এবং মসজিদের মুসল্লি পরিষদের সার্বিক সহযোগিতায় ২০০৮ সাল থেকে নিয়মিত এ ইফতারের আয়োজন হয়ে আসছে।
শাহী জামে মসজিদের খতিবের সহকারী হাছান মুরাদ বলেন,খতিব হুজুরের তত্ত্বাবধানে ইফতারের আয়োজন করা হয়। প্রথম কয়েকদিন দেড় থেকে দুই হাজার এবং এরপর থেকে চার হাজার রোজাদারের জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয়। সম্পূর্ণ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তৈরি করা হয় ইফতারি। টাটকা ও স্বাস্থ্যসম্মত ইফতারি যাতে সবাই খেতে পারেন সেই চেষ্টা করা হয়।
তিনি বলেন, ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সহযোগিতায় এ ইফতারের আয়োজন করা হয়। এখানে যারা সহযোগিতা করেন তারা কেউ নামের জন্য করেন না। সবাই সওয়াবের উদ্দেশে ইফতার আয়োজনে শরিক হন।
ইফতারে অংশ নেন ক্লান্ত পথিক, অবসন্ন দিনমজুর, এদ্বার ওদ্বারে ঘুরে পরিশ্রান্ত ভিক্ষুকসহ নিম্নবিত্তের মানুষ। আবার স্থানীয় অনেক ব্যবসায়ীও বৃহৎ এই জমায়েতে ইফতার করতে পছন্দ করেন। মনের তৃপ্তি আর সওয়াবের আশায় তারা শরিক হন ইফতার আয়োজনে। অনেকে দূর থেকে ইফতারে যোগ দিতে আসেন আর তারাবির নামাজ শেষ করে ফিরেন। মনের তৃপ্তি আর হাজারো লোকের সাথে একসাথে ইফতার ও নামাজ আদায় করতেই মূলত দূর থেকে মুসল্লিরা এখানে আসেন।
আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদে ইফতারে অংশ নেওয়া শাহাদাত হোসেন বলেন, চার হাজার রোজাদারের সাথে বসে ইফতার করার সুযোগ সব সময় আসে না। শাহী জামে মসজিদের এই আয়োজনে অংশ নেওয়ার জন্য আসরের নামাজের সময় চলে আসি। এখানে ধনী-গরিব কোনো ভেদাভেদ নেই। সবাই একই কাতারে বসে ইফতার করেন। ইফতার করার দৃশ্য দেখলে মন জুড়িয়ে যায়।
জানা যায়, ১৯৯৬ সালের দিকে প্রথম মক্কা-মদিনার আদলে এ ধরনের ইফতারের রেওয়াজ চালু করার বিষয়ে চিন্তাভাবনা এবং আলাপ-আলোচনা করতে থাকেন মসজিদের খতিব। ২০০৮ সাল থেকে চালু হয় ভিন্নধর্মী এ ইফতার আয়োজন। প্রতিবছর চার-পাঁচজন বিত্তবান নিয়মিত সহযোগিতা দিয়ে আসছেন বিশাল এ কর্মযজ্ঞে। তবে তাঁরা কেউ-ই চাননা নিজেদের পরিচয় জানাতে। এ ছাড়া অনেকেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন এ ইফতার আয়োজনে। কিন্তু তাও পরিচয় গোপন রেখে। প্রতিদিন সকাল থেকেই চলে ইফতার তৈরির প্রস্তুতি। মসজিদের একপাশের রান্নাঘরে বড় বড় পাতিলে রান্না পাকানো হয়। ছোলা, পিঁয়াজু, জিলাপিসহ কয়েকটি আইটেম রান্না করা হয়। আর কয়েকটি আইটেম বাইরে থেকে আনা হয়। মসজিদের নিজস্ব ডিপ টিউবওয়েল থেকে পানি সরবরাহ করা হয়। ইফতার আয়োজনে অংশ নেওয়া রোজাদাররা আসরের নামাজের পর থেকে মসজিদে অবস্থান নেন। আর মসজিদে প্রতিদিন আসরের নামাজের পর শুরু হয় রমজানের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা। চলে ইফতারের আগ পর্যন্ত। এরপর মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয় আলোচনা।