শাহাবুদ্দীন আহমদ (১৯৩৬-২০০৭)

66

বিখ্যাত নজরুল গবেষক, সাহিত্য সমালোচক, কলাম লেখক, অনুবাদক ও আবৃত্তিকার শাহাবুদ্দীন আহমদ ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বশিরহাট জেলার আরশুল্লাহ গ্রামে ১৯৩৬ সালের ২১ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। এছাড়া ফররুখ আহমদকে নিয়ে তার গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে।
আফিল উদ্দিন আহমদ এবং মোমেনা খাতুন দম্পতির সন্তান শাহাবুদ্দীন পশ্চিমবঙ্গের বাদুড়িয়া মডেল ইনস্টিটিউশন থেকে ১৯৫২ সালে মেট্রিক পাস করেন। এরপর সেন্ট্রাল ক্যালকাটা কলেজে (বর্তমানে আবুল কালাম আজাদ কলেজ) কিছুদিন পড়েন। ওই বছর পরিবারের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। ভর্তি হন খুলনার দৌলতপুর ব্রজলাল কলেজে। পারিবারিক সমস্যার কারণে আইএসসির পর ছাত্র জীবনের সমাপ্তি ঘটে। লেখাপড়া বেশিদূর না গড়ালেও নিজেকে ব্যাপক পাঠাভ্যাস ও সাহিত্য চর্চায় নিয়োজিত রাখেন। ধীরে ধীরে নজরুল গবেষক ও সাহিত্য বিশ্লেষক হিসেবে পরিচিতি ও প্রশংসা লাভ করেন। তার কাজের অন্যতম ক্ষেত্র ছিল নজরুলের সৃষ্টির মূলসুর বিশ্লেষণ, ইসলামী জীবনদর্শনের সঙ্গে সম্পর্ক, সাহিত্যের ইতিহাসে মূল্যায়ন এবং নজরুল সাহিত্যে জীবনের রহস্যের উন্মোচন। ‘শব্দ ধানুকী নজরুল’ তার উল্লেখযোগ্য একটি কাজ। ১৯৭৬ সালে প্রকাশিত ‘নজরুল সাহিত্য বিচার’ বেশ প্রশংসিত হয়। এছাড়া তিনি ফররুখ আহমদসহ সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্র নিয়ে লিখেছেন, অনুবাদ ও সম্পাদনা করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে- ইসলাম ও নজরুল ইসলাম, নজরুল সাহিত্য দর্শন, ছোটদের নজরুল, লক্ষ বছর ঝরনার ডুবে রস পায় নাকো নুড়ি, বহুরূপে নজরুল, সাহিত্য-চিন্তা, দ্রষ্টার চোখে স্রষ্টা, কবি ফররুখ: তাঁর মানস ও মনীষা, ফররুখ: ব্যক্তি ও কবি এবং চতুর্দশ শতাব্দীর বাংলা কবিতা ইত্যাদি।
তিনি ১৯৬১ সালে পূর্ব পাকিস্তান লেখক সংঘের মুখপত্র ‘লেখক সংঘ পত্রিকা’য় সহ-সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬২ সালে ‘পরিক্রম’ পত্রিকার সহ-সম্পাদক নিযুক্ত হন। ১৯৬৩ সালে পূর্ব পাকিস্তান লেখক সংঘের অফিস সেক্রেটারি নিযুক্ত হন। কিছুদিনের জন্য ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকা ‘নাগরিক’র সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য ছিলেন। ১৯৬৮-৭৩ সালে ‘নজরুল একাডেমির পত্রিকা’র সহযোগী সম্পাদক এবং ১৯৭৩-৭৮ সালে একই পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৪ সালে কিছুদিনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা পত্রিকার তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫-৭৭ সালে মুক্তধারায় খন্ডকালীন সম্পাদকের কাজ করেন। ১৯৮০ সালের মার্চে ঢাকা ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের প্রকাশনা সংস্থায় অনিয়মিত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮২ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের নিয়মিত সম্পাদক এবং পরে প্রকাশনা বিভাগের সম্পাদক নিযুক্ত হন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ‘অগ্রপথিক’র নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। ১৯৮৫ সালে নজরুল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হলে ইনস্টিটিউশনের ট্রাস্ট্রি বোর্ডের অন্যতম সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি সর্বশেষ ‘আল মুজাদ্দেদ’ পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জীবদ্দশায় অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ‘নজরুল সাহিত্য বিচার’ বইয়ের জন্য ‘সুফী মোতাহার হোসেন পুরস্কার’ (১৯৭৮), কলকাতার নজরুল পরিষদের ‘নজরুল পুরস্কার’ (১৯৯৪), ‘চুরুলিয়া নজরুল একাডেমি পুরস্কার’ (১৯৮৮) ও বাংলাদেশ ইসলামিক ইংলিশ স্কুল দুবাই থেকে ‘সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৪)। ১৯৬৩ সালে তিনি নুরজাহান বেগমকে বিয়ে করেন। এই দম্পতির দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। শাহাবুদ্দীন আহমদ ২০০৭ সালের ১৬ মে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। সূত্র : ইন্টারনেট