শাহাদাতের পক্ষে একাট্টা অনুসারী বিরোধী সবাই

76

জাতীয় সংসদ নির্বচনে চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী) আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনের পক্ষে মাঠে নেমেছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের সব নেতা-কর্মী। এতোদিন দলীয় গ্রুপিংয়ের মধ্যে থাকলেও এবার গ্রুপিং বাদ দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন কোতোয়ালীর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। দীর্ঘদিন ধরে যারা শাহাদাতবিরোধী গ্রুপে ছিলেন, তারা এখন নিয়মিত তার পক্ষে প্রচারণায় সক্রিয় রয়েছেন। অন্যদিকে নিরব প্রচারণায় নেমেছেন ডা. শাহাদাতের মা, ভাই ও দুই বোন। ডা. শাহাদাত বর্তমানে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন।
এদিকে দলীয় প্রার্থীকে জয়ী করতে কাজ করার জন্য বিএনপির হাইকমান্ড থেকে দল ও দলের অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ নির্দেশনা মানতে ভেদাভেদ ভুলে প্রার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন সকল নেতাকর্মী।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের প্রচারণা শুরু হয়েছে গত ১০ ডিসেম্বর থেকে। ওইদিনই ডা. শাহাদাতের পক্ষে আনুষ্ঠানিক প্রচারণায় নামেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বিএনপির দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবনের সামনে থেকে বিশাল র‌্যালি নিয়ে শোডাউন করা হয়। এতিকে দলীয় প্রচারণার বাইরে গিয়ে ভিন্ন আঙ্গিকে প্রচারণা চলাচ্ছেন ডা. শাহাদাতের পরিবারের সদস্যরা। মাঠে সক্রিয় প্রচারণায় রয়েছেন তার মা। তিনি বাকলিয়াসহ প্রতিটি এলাকায় ঘুরে ঘুরে ধানের শীষে ভোট দেওয়ার আহবান জানাচ্ছেন ভোটারদেরকে। বিলি করছেন নির্বাচনী প্রচারপত্র। এছাড়া শাহাদাতের দুই বোন ও বড় ভাইও রয়েছেন প্রচারণায়।
ডা. শাহাদাত হোসেনের অনুসারীদের মধ্যে সবচেয়ে ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত নগর বিএনপির সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আলী, সবুক্তিগীন সিদ্দিকী মক্কী, নুরুল আলম রাজু, যুগ্ম সম্পাদক গাজী সিরাজ উল্লাহ, নগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু। মামলার কারণে প্রথম দিকে তারা অনেকটা নিষ্ক্রিয় থাকলেও এখন সবাই নেমেছেন প্রচারণায়।
অন্যদিকে শাহাদাত বিরোধী হিসেবে পরিচিত নগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এএসএম সাইফুল আলম, যুগ্ম সম্পাদক ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, আবদুল মান্নান, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বদরুল আনোয়ার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকরামুল করিম ও সহ-দপ্তর সম্পাদক মো. ইদ্রিস আলী সক্রিয় রয়েছেন প্রচারণায়।
এদের মধ্যে সাইফুল আলম আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর অনুসারী, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম বক্করের অনুসারী, আবদুল মান্নান সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমানের অনুসারী এবং ইদ্রিস আলী নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম বক্কর ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবু সুফিয়ানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
বর্তমানে প্রতিদিনই তারা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সরব রয়েছেন। দলীয় কোন্দলের ঊর্ধ্বে উঠে সবাই এক কাতারে মিলিত হয়েছেন। এমনকি দলীয় মনোনয়ন পাওয়া আরেক প্রার্থী বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য শামসুল আলমও নেমেছেন এ কাতারে। তিনি দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। তার সঙ্গে কথা বলার জন্য মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার কল করা হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
একই বিষয়ে কথা হলে নগর বিএনপির সহসভাপতি ও সাবেক কোতোয়ালী থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হারুন জামান বলেন, এখন দলের দুঃসময়। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার সময়। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। তবে প্রশাসনের প্রচুর হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। যার কারণে আমাদের নেতাকর্মীদেরও কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে।
১০ ডিসেম্বর থেকে প্রচারণার মাঠে নেমেছেন ডা. শাহাদাতের প্রচারণা টিম। ইতিমধ্যে এ প্রচারণায় চট্টগ্রামের শীর্ষ দুই নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী অংশ নিয়েছেন। গতকাল থেকে মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীনও যোগ দিয়েছেন শাহাদাতের পক্ষে প্রচারণায়। তারা বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণা চালিয়েছেন। তারা নিজ নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণার পাশপাশি কোতোয়ালী আসনেও প্রচারণা চালাচ্ছেন।
কথা হলে নগর বিএনপির সহসভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, আমাদেরকে এলাকা ছাড়া করা হয়েছে। শাহাদাত ভাইয়ের বাসায়ও ভিড়তে দিচ্ছে না। নোমান ভাই, খসরু ভাই প্রচারণা চালাচ্ছেন। আমরাও প্রচারণায় থাকবো।
একই বিষয়ে জানতে চাইলে নগর বিএনপির সহ সভাপতি সবুক্তিগীন সিদ্দিকী মক্কী বলেন, একটু পুলিশি ঝামেলায় আছি। ওটা মাথায় রেখে কাজ করতে হচ্ছে। সবাই কাজ করছে। শুক্রবারও দুইটা ছেলেকে পুলিশ তুলে নিয়েছে। আমরা সক্রিয় আছি, আমাদের কর্মীরাও সক্রিয়। শুধু নির্বাচনের পরিবেশের অপেক্ষা।
নগর বিএনপির আরেক সহ সভাপতি নুরুল আলম রাজু বলেন, আমরা তো আছি। নিয়মিত প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। গত শুক্রবারও সমন্বয় কমিটির সাথে মিটিং করেছি। জামালখানে শোডাউন করেছি।
একই বিষয়ে কথা হলে ডা. শাহাদাত হোসেনের একান্ত সচিব মারুফ চৌধুরী বলেন, গাজী সিরাজ ভাই মামলায় জামিনের অপেক্ষায় আছেন। বেলায়েত হোসেন বুলু ভাইয়েরও একই অবস্থা। সবক্তিগীন মক্কী ভাই শনিবার চকবাজারে বিশাল শোডাউনে নামেন। সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করছেন। কোন বিরোধ নেই। শামসু ভাইও প্রচারণা চালিয়েছেন।
শাহাদাতের পরিবারের প্রচারণার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্যারের মা, বড় ভাই ও দুই বোন প্রচারণায় আছেন। তারা প্রতিটি এলাকায় গিয়ে প্রচারপত্র বিলি করছেন। শুরু থেকেই উনারা সক্রিয়ভাবে মাঠে আছেন।
এদিকে মামলা ও গ্রেপ্তারের ভয় থাকলেও মাঠ ছাড়েনি বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলসহ অঙ্গসংগঠনের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য মাঠে নেমেছেন তারা। এছাড়া চট্টগ্রামের শীর্ষ তিন নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সক্রিয়। এছাড়া নেতা-কর্মীরা নিয়মিত প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন।
শাহাদাতের পক্ষে কোতোয়ালী আসনের ২০০৮ সালের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী শামসুল আলম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নসুরুল কদির, নগর বিএনপির উপদেষ্টা সাংবাদিক জাহেদুল করিম কচি, নগর মহিলা দলের সভানেত্রী মনোয়ারা বেগম মনি, সিনিয়র সহ-সভাপতি ফাতেমা বাদশা, নগর বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. সারওয়ার আলম, ড্যাব নেতা ডা. ঈসা চৌধুরী, ডা. হাসানুল বান্নাহ, ডা. শাকিরুর রশিদসহ অনেক নেতা নিয়মিত প্রচারণায় রয়েছেন।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন ডা. শাহাদাত হোসেন। গত ৭ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার আগের দিন নাশকতার একটি মামলায় ঢাকা আদালত প্রাঙ্গণ থেকে গ্রেপ্তার হন তিনি। এরপর ২৬ নভেম্বর ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আনা হয় তাকে। নাশকতার আরেকটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।