শাসক দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জলাবদ্ধতা প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বিত

89

কার পাপে জলাবদ্ধতার প্রতিকার হলো না? আগে টাকা ছিলো না, প্রকল্প ছিলো না; এবার টাকাও ছিলো, প্রকল্পও ছিলো। তবুও জলাবদ্ধতা দূর করা গেল না। কেন গেলো না? কাকে দুষবো বুঝতে পারছিনা।
চট্টগ্রাম-দরদী মাননীয় নেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫৬১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিলেন চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানের জন্য। তার মধ্য থেকে ১০০০ কোটি টাকা দেয়া হয়েছিলো ২০১৮-১৯ অর্থবছরে। আমরা এতই কর্মবীর যে সেই টাকাটাও খরচ করা সম্ভব হলো না। ফলে আবার সরকারের কাছে ফেরত গেছে ৪২৫ কোটি টাকা। ভাবুন, কেমন করিৎকর্মা আমরা !
মানুষ এখন বলাবলি করছে, নগরের দুই প্রধান সংস্থার শীর্ষদেশে আসীন শাসক গোষ্ঠীর দুই নেতার অভ্যন্তরীণ কোন্দলেই জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের গতি মন্থর হয়ে গেছে। নেত্রী টাকা দিচ্ছেন, কিন্তু কে নেবেন টাকা, জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব কে পাবেন, এ নিয়ে রেষারেষি, ঠেলাঠেলি করতে করতে মূল্যবান সময় হাত থেকে চলে যায়। ভাবা গিয়েছিলো সিটি কর্পোরেশনকে দায়িত্বটা দেয়া হবে। বরাবর তাই তো হয়ে থাকে। তদুপরি তারা নগরের অভিভাবক সংস্থা। সেজন্য সিটি কর্পোরেশনও বিভিন্ন জরিপ টরিপ করেছিলো। দুটি সম্ভাব্যতা জরিপ রিপোর্ট তাদের হাতে ছিলো বলে জানা যায়। আরো একটা জরিপ চালাচ্ছিলো, কিন্তু সেটা শেষ হবার পূর্বেই জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ কিভাবে যেন সিডিএ হাতিয়ে নিয়ে আসে। এ নিয়ে কিছুদিন তর্কবিতর্ক বিভ্রান্তিতে মূল্যবান সময় পেরিয়ে যাবার পর সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয়া হয় প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব। ভালোই হয়েছিলো, সেনাবাহিনী করলে কাজে কোন রকমের ঢিলেমী বা শৈথিল্য আসতে পারবে না। আর চুরি চামারিও হবে না। কিন্তু সেনাবাহিনীর হাতে তো আলাদীদের আশ্চর্য প্রদীপ নেই। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চাই সম্ভাব্যতা জরিপ, সেটাই তাদের হাতে ছিলো না। তা’ সত্তে¡ও সেনাবাহিনী বলেই সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে কাজে অনেকদূর অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে। এই বৃষ্টির মধ্যেও সেনা টিম শহরে ঘুরে ঘুরে যেখানে পানি চলাচলে মারাত্মক বিঘœ ঘটছে সেরকম পাঁচটি পয়েন্টে পাঁচটি ব্রিজ তারা ভেঙে দিয়ে পানি চলাচলের পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছে। এসব হচ্ছে। কিন্তু যে প্রকল্প সেনা টিম হাতে নিয়েছে সেটা যদি তারা আরো আগে পেত অর্থাৎ সময় পেত, তাহলে হয়তো জলাবদ্ধতা প্রকল্প বাস্তবায়নে অনেকদূর এগিযে যেতে পারতো। তবে এটা তো চযধংব ভিত্তিক কাজ, প্রকল্প বাস্তবায়নের মোট সময়সীমার মধ্যে প্রতিবছর অর্থ ছাড় দেয়া হবে।
যা-ই হোক। সেনাবাহিনী আন্তরিকভাবে কাজ করছে তাদের সামর্থ্য উজাড় করে দিয়ে। কিন্তু কথা হচ্ছে ওই সিডিএ-চসিক খেয়াখেয়িটা যদি না হতো, তাহলে এতদিনে অনেক কাজ হয়ে যেত। আর সিটি কর্পোরেশনকে প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব না দেয়াও সম্ভবত একটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো। মানুষের মুখে তো আর হাত চাপা দেয়া যাচ্ছে না। মানুষ প্রকাশ্যেই বলছে, শাসকদলের নেতৃত্বের কোন্দলই শহরের উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা, সদচ্ছিা নিয়ে কারো মনে কোন সন্দেহ নেই। তাঁর আন্তরিকতা না থাকলে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প কিভাবে পাস হলো।