শারদীয় দুর্গোৎসব ষষ্ঠী উদযাপন আজ সপ্তমী

54

পঞ্চমীর সন্ধ্যায় দেবীর বোধন এবং নবরাত্রির ষষ্ঠ দিন গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ষষ্ঠী তিথিতে কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজা আর সন্ধ্যায় বিল্ববৃক্ষতলে আবাহন ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। মলমাসের বিঘ্ন এবার হেমন্তে নিয়ে আসা শরতের দুর্গাপূজার আজ মহাসপ্তমী।
করোনাকালের বিধি-নিষেধের সাথে সাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবজনিত হালকা থেকে মাঝারী বৃষ্টিপাতের মধ্যেই নগরীর পূজামন্ডপগুলোতে নির্ঘন্টে নির্ধারিত দিন-ক্ষণ ও তিথির সময় মেনে ষোড়শ উপাচারে দেবী দুর্গাকে মর্ত্যলোকে আবাহন করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ষষ্ঠ্যাদি কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজার মাধ্যমে শুরু হয় ষষ্ঠী পূজার মূল আচার। হিন্দু পূরাণ মতে, বিল্ববৃক্ষ বা বেলগাছ দেবাদিদেব মহাদেবের ভীষণ প্রিয়। আর ত্রি- দেবের অন্যতম পদ্মযোনী ব্রহ্মাও বিল্ববৃক্ষে দেবীকে প্রথম দর্শন করেন। তাই ভক্তরাও দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে বিল্ববৃক্ষ তলেই আবাহন করেন। সন্ধ্যায় সম্পন্ন হয়েছে বিল্ববৃক্ষতলে দেবীর আবাহন ও অধিবাস। গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকায় আজ শুক্রবার বারবেলানুরোধে সকাল আটটা ৩০ মিনিট ২৮ সেকেন্ডের মধ্যে দুর্গাদেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ, স্থাপন, সপ্তম্যাদিকল্পারাম্ভ ও সপ্তমীবিহিত পূজা সম্পন্ন করার কথা উল্লেখ রয়েছে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, আশ্বিনে দেবীপক্ষের শুরু হয় যে অমাবস্যায় সেদিনই শুভ মহালয়া। আর ত্রিলোকের মহাপরাক্রমশালী মহিষাসুরকে বধ করার জন্য মহালয়ার প্রাক সন্ধ্যায় হিমালয়ে মহর্ষি কাত্যায়নের আশ্রমেই ‘কাত্যায়নী মুনির কন্যা’ রূপে দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে। দশভূজা দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করে ত্রিলোকে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতি শরতে কৈলাস ছেড়ে আদ্যাশক্তি মহামায়ারূপে মর্ত্যলোকে আসেন। মহালয়া থেকে পক্ষকাল সন্তানদের নিয়ে পিতা মহর্ষি কাত্যায়নের গৃহে কাটিয়ে মহিষাসুরমর্দিনী দেবী দুর্গা ফিরে যান কৈলাসের দেবালয়ে। মর্ত্যলোকে ভক্তরা তাই এই পক্ষকালজুড়েই উৎসব উদযাপন করে। কিন্তু পঞ্জিকার পাতায় এবার আশ্বিনকে ‘মল মাস’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যার মানে অশুভ। সেই কারণে গত ১৭ সেপ্টেম্বর শুভ মহালয়া উদযাপিত হলেও মর্ত্যলোকে দেবী পৌঁছেছেন মহালয়ার ৩৫ দিন পরে শরত পেরিয়ে হেমন্তে। মহালয়া থেকে দেবীপক্ষের যে শুরু, তার সমাপ্তি হয় কোজাগরী পূর্ণিমায় লক্ষীপূজার মধ্যে দিয়ে। পক্ষকালের মধ্যে ষষ্ঠীপূজা ও বিল্ববৃক্ষতলে দেবীর আবাহন থেকে শুরু হয়ে বিজয়া দশমীতে প্রতিমা নিরঞ্জন পর্যন্ত এই পাঁচদিনই চলে বাঙালির সবচেয়ে বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা।
হিন্দু ধর্মীয় শাস্ত্র মতে, তিন অবতারের আবির্ভাবকাল ত্রেতাযুগে যুগাবতার রামচন্দ্র তার স্ত্রী সীতাকে উদ্ধার করতে দেবী দুর্গার অকালবোধন করেন। ব্রহ্মার নির্দেশ অনুযায়ী দুর্গার সাহায্যে লঙ্কার শিরোমণি রাবণকে বধ করে সীতাকে উদ্ধার করেন তিনি। দেবীর সেই আগমনের সময়ই দুর্গোৎসব। আর রামচন্দ্র শরৎকালে দেবীকে আবাহন করেছিলেন বলে এটা শারদীয় দুর্গাপূজা নামেও পরিচিত। আর মর্ত্যলোকে আসতে পঞ্চমীতে দেবীর সেই ঘুম ভাঙানোকে বলা হয় অকালবোধন। আগামী সোমবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের দুর্গোৎসবের। একটি বছরের জন্য ‘দুর্গতিনাশিনী’ দেবী ফিরে যাবেন কৈলাসে দেবালয়ে।