শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু, আজ ষষ্ঠী

2

নিজস্ব প্রতিবেদক

শ্রীশ্রী দুর্গাষষ্ঠী, বোধনের দিন আজ শুক্রবার। দেবীপক্ষে ষষ্ঠী তিথিতে মা দুর্গাকে বোধনের মাধ্যমে পূজা করেন শ্রীরামচন্দ্র-ত্রেতাযুগে। সেভাবেই শাস্ত্রীয় আচার মেনে পারিবারিকভাবে এবং মন্ডপে সন্ধ্যায় হবে দেবীর বোধন। এর মধ্য দিয়েই শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গোৎসব।
বোধন শব্দের অর্থ জাগ্রত করা। মর্ত্যে মা দুর্গাকে আবাহনের জন্যই বোধনের রীতি। এদিন কল্পারম্ভ দিয়ে শুরু হয় বোধন পর্ব। উন্মোচিত হয় প্রতিমার আবরণ। ঘট ও জলপূর্ণ তামার পাত্র মন্ডপের কোণে স্থাপন করে মায়ের পূজা করা হয়। তারপর অধিবাস, আমন্ত্রণ পর্ব। বোধনের পর বিল্বশাখায় দেবীকে আহবান জানানো হয়। অশুভ শক্তি দূর করতে ঘটের চারপাশে তীর-কাঠিতে সুতো জড়িয়ে আমন্ত্রণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রতিমার মধ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘প্রাণ’।
আজ ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে খুলে যাবে মা দুর্গার স্নিগ্ধ শান্ত চোখ। জেগে উঠবেন দশভুজা। আশীর্বাদ দেবেন মনোবাঞ্ছা নিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীদের। দেবী দুর্গার সঙ্গে এ সময়ে ধরাধামে আসেন শ্রীশ্রী লক্ষী, শ্রীশ্রী সরস্বতী, শ্রীশ্রী কার্তিক ও শ্রীশ্রী গণেশ। এই চালচিত্রে দেবাদিদেব মহাদেবও আছেন। লক্ষী সমৃদ্ধি ও সরস্বতী জ্ঞানের প্রতীক। কার্তিক দেবসেনাপতি, শত্রুবিনাশকারী। আর গণেশ সর্বসিদ্ধিদাতা অর্থাৎ মানুষের কামনা পূরণকারী।
পুরাণে আছে, অসুর শক্তির কাছে পরাভূত দেবতারা স্বর্গলোকচ্যুত হয়েছিলেন। এই অশুভ শক্তিকে বিনাশ করতে একত্র হন দেবতারা। অসুর শক্তির বিনাশে অনুভূত হলো এক মহাশক্তির আবির্ভাব। দেবতাদের তেজরশ্মি থেকে আবির্ভূত হলেন অসুরবিনাশী দেবী দুর্গা।
২১ অক্টোবর সপ্তমী, ২২ অক্টোবর মহাষ্টমী, ২৩ অক্টোবর মহানবমী এবং ২৪ অক্টোবর বিজয়া দশমী। দেবীর আগমন ও গমন ঘোড়ায়। মহানগরের জেএমসেন হলসহ ১৬টি থানায় ব্যক্তিগত/ঘট পূজাসহ ২৯৩টি পূজামÐপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া জেলার ১৫ উপজেলায় ২ হাজার ১৭৫ মন্ডপে দুর্গাপূজা হচ্ছে। এর মধ্যে সর্বজনীন প্রতিমা পূজা ১ হাজার ৬৫১টি, ঘটপূজা ৫২৪টি।
চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল বলেন, বিভিন্ন স্থানে জবরদখল, মন্দিরে হামলা, প্রতিমা ভাঙচুরের মত ন্যাক্কারজনক ঘটনা এখনও ঘটছে। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সংখ্যালঘু আইন প্রণয়ন ও জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, বৈষম্য বিলোপ আইন এবং দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণ আইন প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি দিলেও তার কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। আগামীতেও এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন নিয়ে আমরা সন্ধিহান। তবুও প্রত্যাশা রাখি, বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের সার্বিক সহযোগিতা ও বলিষ্ঠ ভূমিকায় এবারের দুর্গাপূজা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে।
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুগ্রীব মজুমদার দোলন বলেন, সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল, জনপ্রতিনিধি ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করলে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা শূন্যের কোটায় নেমে আসবে।