শামসুন্নাহার মাহমুদ (১৯০৮-১৯৬৪)

49

শামসুন্নাহার মাহমুদ শিক্ষাবিদ, লেখক ছিলেন। ১৯০৮ সালে ফেনী (বৃহত্তর নোয়াখালী) জেলার গুথুমা গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতা মুহম্মদ নুরুল্লাহ ছিলেন মুন্সেফ। খানবাহাদুর আব্দুল আজিজ তাঁর মাতামহ এবং হবীবুল্লাহ্ বাহার চৌধুরী ছিলেন সহোদর ভ্রাতা। শিক্ষাজীবনের শুরুতে শামসুন্নাহার চট্টগ্রামের খাস্তগীর গার্লস হাইস্কুলে ভর্তি হন, কিন্তু সামাজিক অনুশাসনের কারণে তাঁর স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। পরে নিজ চেষ্টায় তিনি প্রাইভেট পরীক্ষা দিয়ে ম্যাট্রিক (১৯২৬) পাস করেন। পরে ডাক্তার ওয়াহিদউদ্দীন মাহমুদের সঙ্গে বিবাহ হওয়ায় (১৯২৭) তিনি উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পান। তিনি ডায়েসিমন কলেজ থেকে আই এ (১৯২৮), প্রাইভেটে ডিস্টিংকশনসহ বিএ (১৯৩২) এবং এমএ (১৯৪২) পাস করেন। বিএ পাস করার পর বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত মেমোরিয়াল হাইস্কুল থেকে তাঁকে সম্বর্ধনা দেওয়া হয়। পরে তিনি বেগম রোকেয়ার নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি আন্দোলনের অংশীদার হন। শামসুন্নাহার লেডি ব্রাবোর্ন কলেজে বাংলা বিভাগের অধ্যাপকরূপে কর্মজীবন শুরু করেন। কলকাতায় থাকাকালে কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে তাঁর বহুবার সাক্ষাৎ হয়। নজরুল তাঁকে সাহিত্য চর্চায় উদ্বুদ্ধ করেন। শামসুন্নাহার নিয়মিত বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সম্মেলনে যোগ দিতেন।
শামসুন্নাহার কিছুদিন নিখিল বঙ্গ মুসলিম মহিলা সমিতির সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫২ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের পক্ষ থেকে তুরস্ক ও মধ্যপ্রাচ্য সফর করেন। তিনি কলম্বোতে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব উইমেন দলের নেতৃত্ব দেন এবং সমগ্র এশিয়ার জন্য এই আন্তর্জাতিক মৈত্রী সংঘের আঞ্চলিক ডিরেক্টর পদে নিয়োজিত হন। এ ধরনের কাজের প্রয়োজনে শামসুন্নাহার বিভিন্ন সময়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, রোম, প্যারিস প্রভৃতি দেশ ও নগরী ভ্রমণ করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় ১৯৬১ সালে পঙ্গু শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপিত হয়। ১৯৬২ সালে তিনি জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
শামসুন্নাহারের প্রথম লেখা কবিতা প্রকাশিত হয় কিশোরদের আঙ্গুর নামক মাসিক পত্রিকায়। আই.এ পড়ার সময় তিনি নওরোজ ও আত্মশক্তি পত্রিকার মহিলা বিভাগ সম্পাদনা করতেন। কলকাতা থেকে প্রকাশিত বুলবুল (১৯৩৩) পত্রিকা হবীবুল্লাহ্ বাহার ও শামসুন্নাহার যুগ্মভাবে সম্পাদনা করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ হলো: পুণ্যময়ী (১৯২৫), ফুলবাগিচা (১৯৩৫), বেগম মহল (১৯৩৬), রোকেয়া জীবনী (১৯৩৭), শিশুর শিক্ষা (১৯৩৯), আমার দেখা তুরষ্ক (১৯৫৫), নজরুলকে যেমন দেখেছি (১৯৫৮) ইত্যাদি। তাঁর লেখায় সমাজ ও সংস্কৃতি-প্রীতির প্রকাশ ঘটেছে। নজরুল তাঁর সিন্ধু-হিন্দোল (১৯২৭) কাব্যখানি ‘বাহার-নাহার’কে উৎসর্গ করেন। ১৯৬৪ সালের ১০ এপ্রিল ঢাকায় তাঁর মৃত্যু হয়। সূত্র : ইন্টারনেট