শামসুদ্দীন আবুল কালাম (১৯২৬-১৯৯৭)

65

কথাসাহিত্যিক। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে বরিশালের নলছিটি থানার কামদেবপুর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম ‘আবুল কালাম শামসুদ্দীন’; ১৯৫৫ সাল থেকে তিনি বর্তমান নামে পরিচিত হন। শামসুদ্দীন বরিশাল জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক (১৯৪১), ব্রজমোহন কলেজ থেকে আই.এ (১৯৪৩) এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ (১৯৪৬) পাস করেন। এরপর তিনি এমএ শ্রেণিতে ভর্তি হন, কিন্তু পাঠ অসমাপ্ত রেখে বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করেন। কলেজ-জীবনে তিনি নিখিল বঙ্গ ছাত্র কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন এবং আরএসপি পার্টির সঙ্গে যুক্ত থেকে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন।
দেশভাগের পর ১৯৫০ সালে শামসুদ্দীন ঢাকায় এসে প্রথমে পূর্বপাকিস্তান সরকারের প্রচার ও তথ্য দপ্তরে সহকারী পরিচালক পদে যোগদান করেন। পরে ওই অফিসেই মাহে নও পত্রিকার সম্পাদক হন। ষাটের দশকে তিনি রোম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি.লিট উপাধি এবং রোমের এক্সপেরিমেন্টাল সেন্টার অব সিনেমাটোগ্রাফি থেকে চলচ্চিত্র বিষয়ক ডিপ্লোমা লাভ করেন। শামসুদ্দীন ১৯৫৯ সালের পর কয়েকটি দেশ ভ্রমণ করে শেষে ইতালির রোমে স্থায়িভাবে অবস্থান করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে মুজিবনগর সরকারের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন লাভে তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।
শামসুদ্দীনের মুখ্য পরিচয় একজন কথাশিল্পী হিসেবে। তিনি অনেক গল্প ও উপন্যাস রচনা করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি রচনা হলো: গল্পগ্রন্থ অনেক দিনের আশা (১৯৫২), ঢেউ (১৯৫৩), পথ জানা নাই (১৯৫৩), দুই হৃদয়ের তীর (১৯৫৫), শাহের বানু (১৯৫৭), পুঁই ডালিমের কাব্য (১৯৮৭); উপন্যাস আলমনগরের উপকথা (১৯৫৪), কাশবনের কন্যা (১৯৫৪), কাঞ্চনমালা (১৯৬১), জায়মঙ্গল (১৯৭৮) ও কাঞ্চনগ্রাম (১৯৯৮)। এছাড়াও গল্প-উপন্যাস-আত্মজীবনী মিলিয়ে তাঁর বেশসংখ্যক অপ্রকাশিত পান্ডুলিপি রয়েছে।
জীবনের শেষদিকে শামসুদ্দীন ইউনেস্কোর কিছু ডকুমেন্টারি ফিল্ম তৈরি করেন। তিনি চলচ্চিত্র পরিচালক ভিক্টর ডি সিফার সহযোগী ছিলেন। সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৪ সালে ‘বাংলা একাডেমী পুরস্কার’ লাভ করেন। ১৯৯৭ সালের ১০ জানুয়ারি রোমে তাঁর মৃত্যু হয় এবং ঢাকায় তিনি সমাহিত হন। সূত্র : বাংলাপিডিয়া