শামছুলের বাড়িতে ফের চাঁদাদাবি, হত্যার হুমকি

21

নগরীর চান্দগাঁও থানার খাজা রোড হাবিলদার বাড়ির মৃত শামছুল আলমের বাড়িতে চাঁদা না দেওয়ায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এ কারণে পুনরায় চাঁদা দাবি ও পুরো পরিবারকে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করেন স্থানীয় আলমগীর, জসিম ও বখতেয়ারের নেতৃত্বে একটি সন্ত্রাসী গ্রূপ।
গতকাল শনিবার বিকেলে মরহুম শামছুল আলমের স্ত্রী শাহেদা বেগম জানান, গত ১৩ ডিসেম্বর ‘চান্দগাঁওয়ে চাঁদা না দেয়ায় বাড়ি ভাঙচুর’ শিরোনামে পূর্বদেশ পত্রিকায় একটি খবর প্রকাশিত হয়। এ খবর প্রকাশকে কেন্দ্র করে ওই পরিবারকে আবারও হুমকি-ধমকি প্রদান করেন সন্ত্রাসীরা।
এ নিয়ে চান্দগাঁও থানায় মামলা করেন শাহেদা বেগম। মামলার আসামিরা হলেন- ‘হাবিলদার বাড়ির নুর মোহাম্মদের ছেলে জসিম উদ্দিন (৩৫) ও মো. বখতেয়ার (৪২), নুরুল ইসলামের ছেলে আলাউদ্দিন (৩৮), মৃত মোহাম্মদ মিয়ার ছেলে মো. আলমগীর (৫৫) ও মো. ফেরদৌস (৫০)।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, আসামিরা ভূমিদস্যু এবং চাঁদাবাজ প্রকৃতির লোক। তারা আমার আত্মীয়-স্বজন এবং প্রতিবেশী হলেও ন্যায়-নীতি এবং আইন মান্য না করে দীর্ঘদিন ধরে আমার স্বামীর খরিদা সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করতে চায়। এছাড়া ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। তারই ধারাবাহিকতায় গায়ের জোরে সম্পত্তি দখল নিতে হুমকি প্রদর্শন করে। এ নিয়ে গত ২৭ নভেম্বর সকাল ১১টায় চান্দগাঁও থানায় অভিযোগ করি। অভিযোগের বিষয়ে কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় আমি আমার ছেলে ওয়াহিদুল আলমের মাধ্যমে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গত ৩ ডিসেম্বর ১৪৫ ধারায় মামলা করি। এতে এসব সন্ত্রাসী আরও বেপরোয়া হয়ে পড়ে। এরপর ৪ ডিসেম্বর প্রকাশ্যে দিবালোকে আরও কিছু ভাড়াটে ও অজ্ঞাত সন্ত্রাসী নিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় আমার বাড়ি ভাঙচুর করে। এছাড়া ঘরের মূল্যবান আসবাবপত্র ও স্বর্ণালংকার লুটসহ প্রায় ২০ লাখ টাকার ক্ষতি করে। পরবর্তীতে এ খবর বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর আমার দুই ছেলে এবং এক মেয়েকে প্রাণে মেরে ফেলার এবং ১০ লাখ টাকা না দিলে আমার সম্পত্তি ও স্থাপনা ভেঙে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হবে বলে হুমকি দেয়। এতে আমি ও আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
মামলার বাদি শাহেদা বেগম পূর্বদেশকে বলেন, এ পর্যন্ত তারা (সন্ত্রাসী) চার বার আমার বাড়িতে হামলা চালালেও পুলিশ কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। প্রথমবার হামলা হওয়ার পর থানায় জানালে তারা বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। পরবর্তীতে আরও তিনবার হামলা হয় এবং হুমকি-ধমকি প্রদান করে।
তিনি বলেন, গত ২৭ ও ২৮ নভেম্বর এবং ৪ ও ১০ ডিসেম্বর হামলা করে সন্ত্রাসীরা। সর্বশেষ হামলার পরই দৈনিক পূর্বদেশে সংবাদ ছাপানোর পর তারা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে। এখন আমি প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা চাই।
শাহেদা বেগমের ছেলে মোহাম্মদ ওয়াহিদুল আলম জানান, আমার কাছে ফেরদৌস ও বখতেয়ারের গ্রæপ এসে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। আমি তাদেরকে কোন টাকা-পয়সা দিবো না বললে, গত ২৮ নভেম্বর আমার বাড়িতে হামলা চালান তারা। সর্বশেষ গত ১০ ডিসেম্বর হামলা করে আমাদের যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেন। এ সম্পত্তি আমার বাবার কেনা। যার সব দলিল এবং প্রমাণ আমাদের হাতে রয়েছে। আমি এবং আমার ভাইবোনের জন্ম এ বাড়িতেই। জন্ম থেকে এখানে অবস্থান করছি। হামলাকারীরা টাকা না পেয়ে অবৈধভাবে আমাদের এ জায়গাটা দখল করার এবং প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করছে। প্রশাসনের কাছে এর একটি সুষ্ঠু বিচার কামনা করছি।
তিনি আরও বলেন, এই এলাকায় আলমগীর, ফেরদৌস এবং বখতেয়ার চিহ্নিত ভূমিদস্যু। তারা বিভিন্ন জায়গায় ভূমি নিয়ে দালালি করেন এবং কোন সমস্যা মনে হলে ঘর-বাড়িতে হামলা চালান। এর আগেও এদের নামে বেশ কয়েকটি সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। তারপরও তারা এমন কর্মকাÐ অব্যাহত রেখেছেন। কিছু বললেই তারা বলেন- আইন আদালত তাদের হাতের মুঠোয়।
এ ব্যাপারে চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কমকর্তার (ওসি) সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. আব্দুর রহিম জানান, ওসি স্যার ছুটিতে আছেন।
মামলার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. আব্দুর রহিম জানান, মামলা তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।