‘শহীদ হামজা ব্রিগেডের’ ৬১ জনের বিচার শুরু

63

র‌্যাবের অভিযানে চিহ্নিত হওয়ার চার বছর পর জঙ্গি সংগঠন ‘শহীদ হামজা ব্রিগেডের’ তৎপরতার সাথে সম্পৃক্ত ৬১ জনের বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম শুরুর আদেশ দিয়েছেন আদালত। নাশকতার জন্য অর্থায়ন এবং জঙ্গি প্রশিক্ষণের অভিযোগে জেলার হাটহাজারী ও বাঁশখালী থানায় মামলা দুটি করেছিল র‌্যাব। একইসঙ্গে মামলার অন্যতম অভিযুক্ত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানাসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের জন্য সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে আগেই আবেদন করেছিলেন অতিরিক্ত মহানগর পিপি মনোরঞ্জন দাশ। গতকাল মঙ্গলবার আবেদনের ওপর শুনানি শেষে বিচারক মোহাম্মদ আবদুল হালীম এই আদেশ দিয়েছেন। বিভাগীয় দ্রæতবিচার ট্রাইব্যুনালের পিপি আইয়ূব খানও রাষ্ট্রপক্ষে আবেদনের ওপর শুনানিতে অংশ নেন। আগামী ৮ সেপ্টেম্বর থেকে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের দিনও ধার্য করা হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী আবুল হাসনাত জানান, মামলার আসামিদের মধ্যে শাকিলা ফারজানা ও নাছির হোসেন নামে দু’জন চার্জ গঠনের শুনানিতে গরহাজির ছিলেন। আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। এছাড়া, চার্জশিটভুক্ত আরও ৭ জন শুরু থেকেই পলাতক রয়েছেন। আগে থেকেই তাদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি আছে।
মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলা সদরের ‘মাদ্রাসাতুল আবু বকর’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তাদের দেয়া তথ্যে ওই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি বাঁশখালীর গহীন লটমণি পাহাড়ে পৃথক অভিযান পরিচালনা করা হয়। র‌্যাবের ভাষ্যমতে, সেটা ছিল জঙ্গিদের সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। সেখান থেকে বিপুল অস্ত্র-বিস্ফোরক ও প্রশিক্ষণ সরঞ্জামসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে হাটহাজারী ও বাঁশখালী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে পৃথক দু’টি মামলা দায়ের হয়। আরও অনুসন্ধান শেষে ওই বছরের ১৩ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করে র‌্যাব জানিয়েছিল, হাটহাজারী ও বাঁশখালী থেকে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা সকলেই চট্টগ্রামভিত্তিক নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘শহীদ হামজা ব্রিগেডের’ সদস্য। ওই বছরের ১৮ আগস্ট হামজা ব্রিগেডকে অর্থায়নের অভিযোগে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আইনজীবী ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানাসহ তিনজনকে। ২০১৭ সালের মার্চে শাকিলা ফারজানাকে দুই মামলায় প্রধান আসামি করে মোট ৬১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করে র‌্যাব। শাকিলা জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ প্রয়াত সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, দেশে নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালিয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির জন্য বাহরাইনের নাগরিক আল্লামা লিবদির নির্দেশে সশস্ত্র জঙ্গি সংগঠন ‘শহীদ হামজা ব্রিগেড’ গড়ে তোলা হয়। জুনায়েদ নামে এক ব্যক্তির নেতৃত্বে পরিচালিত এই সংঠনের তিনটি বিভাগ আছে। এগুলো হল, সামরিক, দাওয়া ও মিডিয়া। অভিযোগপত্রে সামরিক বিভাগের প্রধান হিসেবে মনিরুজ্জামান ডন, দাওয়া বিভাগের প্রধান নাছির হোসেন, মিডিয়া বিভাগের প্রধান মো. আবদুল্লা বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া, মনিরুজ্জামান ডনের তিনটি হিসাব নম্বরে দুই দফায় ৫২ লাখ টাকা লেনদেন করে জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগে আসামি হয়েছেন আইনজীবী শাকিলা ফারজানা। একইভাবে ঢাকার এক পোশাক কারখানা মালিকসহ আরও দু’জনের বিরুদ্ধে অর্থায়নের অভিযোগ আনা হয়েছে।