নারী শিক্ষা নিয়ে হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফীর বক্তব্যে ‘হতবাক’ হয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল রবিবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, “তিনি (শফি) নারীবিরোধী যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা অনাকাক্সিক্ষত, অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক।”
গত শুক্রবার হাটহাজারি দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারি মাদ্রাসার ১১৮তম বার্ষিক মাহফিলে মাদ্রাসার পরিচালক শফী মেয়েদের পড়ালেখা না করানোর ওয়াদা করান।
শফী বলেন, “আপনাদের মেয়েরা আপনাদের মেয়েরা.. ইশকুল-কলেজে দিবেন না। বেশির থেকে বেশি ক্লাস ফোর ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়াইতে পারবেন। বিবাহ দিলে স্বামী স্বামীর টাকা পয়সা, এগুলা হিসাব রাইখতে হবে, উনার কাছে চিঠি লিখতে হবে, স্বামীর কাছে। আর বেশি যদি পড়ান, পত্রপত্রিকায় দেখতেছেন আপনারা ওই মাইয়া, ক্লাস এইট, নাইন, টেন, এমএ, বিএ এইগুলা পইড়লে, ওইটা কিছুদিন পরে আপনার মেয়ে থেইকবে না। অন্য কেহ নিয়ে যাবে।”
অবশ্য শফী দাবি করেছেন, তার বক্তব্য গণমাধ্যমে ‘ভুলভাবে’ প্রচার করা হচ্ছে। তিনি নারী শিক্ষার বিরোধিতা করেননি, আপত্তি করছেন ছেলে-মেয়ের একসঙ্গে লেখাপড়া নিয়ে।
হেফাজতের আমির শফী কওমি মাদ্রসার ছয় বোর্ডের সমন্বিত সংস্থা আল-হাইয়াতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়্যাহ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান। এর আগেও তিনি এবং তার সহযোগীরা নারী প্রগতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সমালোচিত হয়েছেন।
হেফাজতে ইসলামের পরামর্শেই পাঠ্যপুস্তকে ‘পাকিস্তানি চেতনার’ প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে অভিযোগ করে শহীদ জায়া বেগম মুশতারি শফী শনিবার বলেছেন, এতে শিক্ষা ব্যবস্থা সাম্প্রদায়িকতার বিষে আক্রান্ত হয়েছে।
অবশ্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা ও সরকারের শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল হেফাজত আমিরের ‘রাষ্ট্রীয় নীতি-বিরুদ্ধ’ ওই বক্তব্যকে তার ‘ব্যক্তিগত’ মতামত বলেছেন।
এক সময় হেফাজতের কর্মকাÐে সমর্থন দিয়ে আসা বিএনপির মহাসচিব তার বিবৃতিতে বলেন, মেয়েদেরকে স্কুল-কলেজে না পাঠানোর জন্য হেফাজতের আমিরের বক্তব্যে আমি হতবাক ও বিস্মিত হয়েছি। আমরা মনে করি, একবিংশ শতাব্দিতে এই ধরনের বক্তব্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশিদের বিব্রত করবে।
নারী শিক্ষার বিষয়ে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরে ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর অর্ধেকই নারী। প্রাচীন প্রথা ও কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে এসে জাতি গঠনমূলক ও জাতীয় অর্থনীতিতে তাদের যথার্থ ভূমিকা পালনের প্রধান শর্ত হচ্ছে নারী শিক্ষা।
শফীর বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নারী শিক্ষার সাথে ধর্মের কোনো বিরোধ নেই। সন্তানের প্রাথমিক শিক্ষালাভ ঘটে মায়ের কাছ থেকেই। নৈতিক ও অক্ষর পরিচয়ের প্রথম পাঠশালাই হল মায়ের সাহচর্য। মা সুশিক্ষিত না হলে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানটি ঐক্যবদ্ধ ও সুসংহত হয় না। সামাজিক অন্যায় ও বৈষম্য দূর করার জন্য অবশ্যই নারীর শিক্ষা অপরিহার্য।
তিনি বলেন, নারীরা শিক্ষিত না হলে তারা সমাজে অমানবিক নষ্টবুদ্ধির মানুষদের প্রতারণা, লাঞ্ছনা ও শোষণ-বঞ্চনা থেকে রক্ষা পাবে না। নিগ্রহ ও অসন্মানের হাত থেকে বাঁচতে বাংলাদেশের অক্ষরহীন নারীদের অবশ্যই পড়ালেখা করতে হবে।
