বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে শুরু হওয়া সরকারি ছুটি ও অঘোষিত লকডাউনের মধ্যে এক মাসের অধিক সময়ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের শপিংমল ও সাধারণ মার্কেটগুলো। শুধুমাত্র কাঁচাবাজার, মুদির দোকান, ঔষধের দোকান ও কাঁচাবাজার সমেত শপিংমলগুলো এসময়ে একটি নির্দিষ্ট সময়ে খোলা ছিল। দেশে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির খুব একটি উন্নতি না হলেও সরকার জীবন ও জীবিকা রক্ষার পরিকল্পনা নিয়ে পোশাক শিল্পসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের শর্তে খোলার অনুমতি দিয়েছে। এরমধ্যে মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরও সমাগত। রমজানের অর্ধমাসজুড়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমান অনেকটা ঘরে বসে রোজা পালন ও নামাজ আদায় করলেও সরকার গত বৃহস্পতিবার থেকে মসজিদগুলোতে মুসল্লিদের সমাগম অবারিত করেছে। এরসাথে বেশ কয়েকটি শর্ত মেনে আগামীকাল ১০ মে থেকে প্রতিদিন বিকেল ৪টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে সরকার। ঈদ সামনে রেখে দোকান খোলার সিদ্ধান্ত এলেও এ অবস্থার মধ্যে দোকান খোলার ঝুঁকি নেবেন কি না সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। কারণ দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কয়েক দিন ধরে দ্রুত বাড়ছে। ইতোমধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রামের বেশকয়েকটি শপিংমল ও মার্কেট কর্তৃপক্ষ ঈদের আগে মার্কেট তাদের শপিংমল ও মার্কেট খুরবেনা বলে জানিয়ে দিয়েছেন। আমরা জানি, দেশের ৬৪ জেলাতেই এখন ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার দুটোই। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকানপাট খোলা আদৌ কি সম্ভব? প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, রাজধানী ঢাকা এবং চট্টগ্রামসহ দেশের বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোর বেশির ভাগ মার্কেটে করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার সক্ষমতা নেই। ছোট ছোট দোকানের কারণে সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করাও সম্ভব হবে না। এতে কেনাকাটা করতে আসা মানুষের ভিড়ে ব্যবসায়ী ও ক্রেতা উভয়ই পড়বেন করোনাঝুঁকিতে। শপিংমল খুলে দেওয়ার ঘোষণায় স্বাস্থ্য খাতসহ অন্য সব পর্যায়ের বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগ আরো বেড়েছে। একই সঙ্গে গনমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বিভিন্ন মহল থেকে শুরু হয়েছে সমালোচনা। কেউ কেউ এই সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতী বলেও অভিহিত করেছেন। করোনা সংক্রমণের বড় ক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে শপিং মলগুলো। সরকারের নির্দেশনায় দোকান খোলার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা দিয়ে সীমিত পরিসরে খোলার অনুমতি দিয়েছে সরকার। কেউ যদি মনে করেন স্বাস্থ্যবিধি মানতে পারবেন না, তিনি দোকান না-ও খুলতে পারেন। অন্যদিকে সচেতন মহল বলছে, করোনাকালে শপিং মলের বিকল্প হতে পারে অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো। এতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করেই মানুষ নিজের প্রয়োজন মেটাতে পারে। আর মানুষের দোরগোড়ায় প্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দিয়ে সেই কাজটি করছে ই-কমার্স কম্পোনিগুলো।
সুপার মার্কেট ও দোকানপাট খোলার সরকারি ঘোষণায় ইতোমধ্যে ফুটপাতের দোকানিরাও দোকান সাজিয়ে বসার চিন্তা করছেন বলে খবরে প্রকাশ। তাঁরা বলছেন, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান চালু করবেন। কিন্তু ফুটপাতের দোকানে আদৌ নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা কি সম্ভব? সম্প্রতি নগরীর মুদির দোকান, কাঁচাবাজার, সড়ক ও ফুটপাতে বসা কাঁচাবাজার ও ফলমুলের ভাসমান দোকানগুলো দেখলে সহজেই অনুমান করা যায়, আদৌ ফুটপাত কতটুকু নিরাপদ থাকবে? সুতরাং শপিংমল কিংবা দোকানপাট কিংবা ফুটপাত যেটাই খোলা হোক করোনা বাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি অবশ্যই রয়েছে। আমরা মনে করি, এখনও সময় আছে, এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ তাঁদের নেয়া সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা যায় কিনা- ভেবে দেখতে পারেন। আমরা আশা করি, করোনা ভাইরাসা সংক্রমণ রোধে সবাই দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখবেন।