শপথ বাক্য পাঠ করালেন ওসি নেজাম উদ্দিন

160

বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্ব নিয়েই মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন। তিনি মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার করে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দেন। বাকলিয়াকে মাদকমুক্ত করতে তিনি থানার আওতাধীন ৩৮টি মসজিদে কঠোর বার্তা পাঠান। তাতে মাদক ব্যবসায়ীদের তিনটি শর্ত দেন। এসব বার্তা মসজিদের ইমামরা মুসল্লিাদের পড়ে শোনান, ওসি নিজেও জুমার নামাজে এসব বিষয় নিয়ে বক্তব্য রাখেন।
এসব পদক্ষেপের মুখে গতকাল শুক্রবার বাকলিয়ার বজ্রঘোনা এলাকার মাদানী মসজিদে ওসির কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন ৭ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী। ওসি নেজাম উদ্দিন তাদেরকে মসজিদের ভেতরে রেখে ‘আর কখনো মাদক ব্যবসা না করা এবং মাদকের সাথে জড়িত না হওয়ার’ শপথ বাক্য পাঠ করান।
আত্মসমর্পণ করা ইয়াবা ব্যবসায়ীরা হলেন- মো. আবু বক্কর (৪৫), মো. আব্দুল মাবুদ (৩৮), মো. শাহজাহান (৪৫), মো. শামসু (৪০), এসকান্দর মির্জা (৫৬), ওছিউর রহমান (৪৫) ও মো. ইছাহাক (৫০)।
মুসল্লিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বজ্রঘোনা এলাকার মাদানী মসজিদে জুমার নামাজের আগে খুতবা চলাকালে ওসির দেওয়া শর্তানুযায়ী ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণ করার আহব্বান জানান মসজিদের খতিব। এ সময় ওসি নেজাম উদ্দিনও জুমার নামাজে উপস্থিত ছিলেন। খুতবার আহব্বানে সাড়া দিয়ে সেখানে থাকা চার ইয়াবা ব্যবসায়ী স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করতে রাজি হন। এ সময় মসজিদে প্রায় দুই হাজার মুসল্লি উপস্থিত ছিলেন।
৪ ইয়াবা ব্যবসায়ীর আত্মসমর্পণের পর ওসি নেজাম উদ্দিন দাঁড়িয়ে মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন। বক্তব্যে তিনি মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘এখন স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, এখনই আত্মসর্মপণ করুন। অন্যথায় পুলিশের অভিযানে পড়লে পরিণতি হয়ে ভয়াবহ।’ ওসির এমন বক্তব্যের পর সেখানে আর তিন মাদক ব্যবসায়ী আত্ম সমর্পণের ঘোষণা দেন। পরে মসজিদের ভেতর ৭ ইয়াবা ব্যবসায়ীকে মাদক ব্যবসা ছেড়ে ভালো মানুষ হওয়ার শপথ পড়ান ওসি।
ওসি মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন গতকাল রাতে পূর্বদেশকে বলেন, মাদকে আক্রান্ত বাকলিয়া এলাকা মাদকমুক্ত করার জন্য দৃঢ় প্রতিঙ্গা নিয়েই আমরা কাজ করছি। ইতোমধ্যে এ এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তিনি জানান, গত ২ মে থেকে থানার আওতাধীন বিভিন্ন এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। গত ১৫ দিনে ৬৪টি মামলায় ৮৪ জনকে আটক করে আদালতে সোর্পদ করেছে বাকলিয়া থানা পুলিশ।
ওসি নেজাম বলেন, বাকরিয়া এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের প্রতি আমরা তিনটি শর্ত দিয়েছিলাম। ‘আত্মসমর্পণ করতে হবে, নয়তো বাকলিয়া থানা এলাকা ছাড়তে হবে, অন্যথায় গ্রেপ্তার হয়ে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে।’ গত ১০ মে থেকে থানার ৩৮টি মসজিদের খতিবরা জুমার খুতবার সময় ওসির অনুরোধে এ তিনটি বার্তা প্রচার করেন। তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এইভাবেই দেশের প্রতিটি মসজিদ-মন্দির-গীর্জাকে সাক্ষী রেখে মাদক ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণ অন্যদেরও মাদক সংশ্লিষ্টতা থেকে দূরে রাখবে এবং একদিন এই দেশ মাদকমুক্ত হবে। এ জন্য তিনি সমাজের মান্যগণ্য ব্যক্তিবর্গ এবং গণমাধ্যমেরও ইতিবাচক ভূমিকা আশা করেন।