লোহাগাড়ায় ফাঁকা রাস্তাঘাট বিপাকে শ্রমজীবী মানুষ

64

লোহাগাড়ায় করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের নেয়া পদক্ষেপে ফাঁকা হয়ে পড়েছে রাস্তাঘাট। বন্ধ হয়ে গেছে দোকানপাঠ, হোটেল-রেস্তোরাঁ ও অফিস-আদালত। ওষুধের দোকান আর কাঁচাবাজার সীমিত আকারে খোলা থাকলেও জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। এছাড়াও গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ফাঁকা হয়ে পড়েছে রাস্তাঘাট। শহর ও গ্রামের রাস্তায় কিছু কিছু ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলতে দেখা গেলেও যাত্রী পাচ্ছেন না চালকেরা। এ অবস্থায় কাজ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা। গতকাল শনিবার বিকেল ৪টার দিকে লোহাগাড়া উপজেলা সদর বটতলী মোটর স্টেশনে দেখা মেলে এমন একজন শ্রমজীবী রিকশাচালক আলী আহমদের। তার বাড়ি উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের খাঁন সাহেব পাড়ায়। তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৬ জন। তার মধ্যে ১ মেয়ে ২ ছেলে স্ত্রীসহ আলাদা করে থাকেন। এসময় বিস্তারিত কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, একদিন রিকশা নিয়ে বের না হলে খাবার জোটে না। তাই জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে রিকশা নিয়ে সকাল থেকে বের হয়েছি। কিন্তু রাস্তায় কোন লোকজন নেই, তাই যাত্রীও নেই কোথাও। এভাবে আয়-রোজগার করতে না পারলে পরিবারের খাবার জুটবে কেমনে বুঝতেছি না। এ অবস্থা চলতে থাকলে বউ-বাচ্চা নিয়ে অনাহারে থাকতে হবে দিনের পর দিন। কিছুক্ষণ পর দেখা হয় বটতলী মোটর স্টেশনে ভ্যানের ওপর বসে বসে অলস সময় কাটানো অপর শ্রমজীবী ভ্যানচালক শাহ আলমের। লোহাগাড়া উপজেলা সদরের কাজীর পুকুর পাড় এলাকায় তার বাড়ি। এসময় কথা হয় তার সাথে। তিনি জানান, দীর্ঘ এক যুগ ধরে এলাকায় ভ্যান গাড়ি চালান তিনি। আগে প্রতিদিন যেখানে ছয়-সাতশ টাকা রোজগার করতেন। এখন সারাদিন মিলে ১০ টাকাও ইনকাম হয় না। তিনি আরো জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে সব দোকান-পাট বন্ধ। রাস্তায় ভাড়াও নেই। এমন পরিস্থিতি হলে সংসার কিভাবে চালাবো ভাবতে পারছি না। ঘরে জমানো কোন টাকাও নেই যে তা দিয়ে সংসার চালাবো। এখন একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোন ভরসা নেই। করোনা ভাইরাস বিস্তার রোধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে বন্ধ রয়েছে লোহাগাড়ার প্রায় সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। শুধুমাত্র কাঁচাবাজার, ওষুধ ও নিত্যপণ্যের দোকান খোলা রাখার অনুমতি রয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের। এদিকে, করোনার প্রভাবে শুধু শ্রমজীবী মানুষ নয় রিকশাচালক, টমটম চালক এমনকি ভ্রাম্যমাণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও নিম্ন আয়ের মানুষেরাও অর্থ সঙ্কটে পড়েছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৌছিফ আহমেদ বলেন, শ্রমজীবী, খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষদের বিষয়টি বিবেচনা করে সরকার বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। শ্রমজীবী মানুষদের জন্য সরকার শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করেছে। লোহাগাড়ায় এক হাজার শ্রমজীবী মানুষের কাছে এসব খাবার পৌঁছে দেয়া হবে। আজ রাতে (শনিবার) বিতরণ শুরু করা হবে। এসব শুকনো খাবার হিসেবে চাল, ডাল, তৈল, লবণ, বিস্কুট রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে ইউএনও তৌছিফ আহমদ বলেন, যারা শ্রমজীবী মানুষ বর্তমানে বেকার এবং সরকার কর্তৃক অন্য কোন সুবিধাভোগী নয় এমন ব্যক্তিরাই এসব খাবার পাবেন। তবে, স্ব স্ব এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানগণ এসব খাবার বিতরণ করবেন।