লোহাগাড়ার আলমগীর হত্যার মূল আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে

39

পার্বত্য বান্দরবানের লামা উপজেলায় নির্মমভাবে হত্যার শিকার হয়েছেন লোহাগাড়ার যুবক মোহাম্মদ আলমগীর সিকদার (৪৩)। এ হত্যার ৬ সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও লোহাগাড়ার গৌড়স্থান গ্রামের বাড়িতে থামছে না স্বজনদের কান্না। আলমগীরের মা-বাবা, স্ত্রী, ৩ সন্তান ও ভাই-বোনসহ স্বজনদের আহাজারির শেষ নেই। আলমগীরের কথা বলেই কেঁদে উঠেন সবাই। বিশেষ করে তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে তাদের আব্বার কথা বলে নীরবে অশ্রু ফেলছে। মনের অজান্তে খুঁজছে তাদের আদরের বাবাকে।
হত্যাকান্ডের শিকার মোহাম্মদ আলমগীর লোহাগাড়া উপজেলার পুটিবিলা ইউনিয়নের গৌড়স্থান গ্রামের মোহাম্মদ আলীর প্রথম ছেলে। আলমগীরের হত্যকান্ডের সময় বাবা মোহাম্মদ আলী ও মা বেগম মোহাম্মদ হজ করতে যান মক্কায়। হজ থেকে গত ৩১ আগস্ট ফেরেন তারা গৌড়স্থান গ্রামের নিজ বাড়িতে এসে পৌঁছেন।
মোহাম্মদ আলী বলেন, মক্কায় ছেলে হত্যার সংবাদ পেয়ে বেগম মোহাম্মদ আলীসহ তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের মুখে কোন রা ছিল না। পুত্র হত্যার যন্ত্রনা বুকে চেপে হজ পালন করেছি। তিনি আরো বলেন, প্রতি মুহূর্তে মনে পড়েছে ছেলে আলমগীরের কথা। মনে বার বার ভেসে উঠছে ছেলের স্মৃতিগুলো। মোহাম্মদ আলীর দাবী তার ছেলের হত্যাকারীদের যেন যথাযথ বিচার হয়, সর্বোচ্চ শাস্তি হয়। বেগম মোহাম্মদ আলী পুত্র শোকে মুহ্যমান। বার বার বলছেন ছেলে আলমগীর কই? সে তো মা-বাবাকে হজ করতে পাঠিয়েছিল। ছেলে এখন মা বলে ডাকছে না কেন। কাছে আসছে না কেন সে।
নৃশংস হত্যার শিকার লোহাগাড়ার এ যুবক মোহাম্মদ আলমগীর পার্বত্য লামা উপজেলার সরই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি ছিলেন। তার বাবা মোহাম্মদ আলীও সরই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন দু’বার। তাদের জায়গা-জমি ও ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে সরই ইউনিয়নে। সরই ইউনিয়নে পারিবারিকভাবে তাদের খ্যাতি রয়েছে।
মোহাম্মদ আলমগীরকে দুর্বৃত্তরা নির্মমভাবে হত্যা করে গত ২৩ জুলাই, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টায়। লোহাগাড়া উপজেলার পুটিবিলা ইউনিয়নের গৌড়স্থান গ্রাম সংলগ্ন হাছনা ভিটা এলাকায় ঘটেছে এ হত্যাকান্ড। ঘটনাস্থলটি পার্বত্য লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের অংশ। আলমগীর হাছনা ভিটা এলাকায় নিজের খামার বাড়ি থেকে গৌড়স্থান গ্রামের বসতঘরে ফেরার পথে পূর্ব থেকে পাহাড়ের পাশে ওঁৎপেতে থাকা দুর্বৃত্তরা তাকে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। ঘটনাস্থলেই তিনি প্রাণ হারান। ঘটনার পর হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে প্রথমে সায়মন ত্রিপুরা ও পরে বীর বাহাদুর ত্রিপুরাকে আটক হয়। তারা এখন বান্দরবানের কারাগারে। স্থানীয় সূত্র ও লামা থানা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম এসব তথ্য জানিয়েছেন। এছাড়াও এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে লোহাগাড়ার পোল্ট্রি ব্যবসায়ী তৈয়ব তাহেরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহত আলমগীর সিকদারের ছোট ভাই মানিক সিকদার বাদী হয়ে পার্বত্য লামা থানায় মামলা দায়ের করেন।
সূত্র মতে, আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে গিয়ে আসামী বীর বাহাদুর ত্রিপুরা লোহাগাড়ার সাংবাদিক সেলিম উদ্দিন আলমগীর হত্যাকান্ডে জড়িত ও মূল পরিকল্পনাকারী বলে প্রকাশ করেছে। তবে এ হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত সাংবাদিক সেলিম উদ্দিন এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। গ্রেপ্তার এড়াতে সে আত্মগোপনে রয়েছেন বলে জানা গেছে। এ হত্যাকান্ডে সহযোগী ছিল আরও ৪/৫ জন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।