লোকাল বাসে যাত্রীর বেশে ম্যাজিস্ট্রেট

99

শাহ আমানত (নতুন) ব্রিজ সংলগ্ন মোড়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন এক যাত্রী। মুখে মাস্ক পরা এই যাত্রী দক্ষিণ চট্টগ্রামের কোথাও যেতে চান। এক বাস থেকে আরেক বাসে ঘুরছেন তিনি ভাড়া জানার জন্য। কিন্তু সব পথেই দাবি করা হচ্ছে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত টাকা। অবশেষে সাতকানিয়া রুটের একটি বাসে উঠলেন তিনি। দোহাজারী যাওয়ার জন্য বাসের কন্ট্রাক্টরের সাথে ভাড়া নিয়ে দরকষাকষি করলেন। ৮০ টাকা ভাড়া দিয়ে দোহাজারী যাওয়ার জন্য রাজী হলেন এই যাত্রী। বাসটি গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। শাহ আমানত সেতু পার হাওয়ার পর একদল পুলিশ সদস্য বাসটিকে দাঁড় করালেন। তখন দোহাজারী যাওয়ার জন্য ওঠা ওই যাত্রীর পরিচয় জানা গেল। তিনি বিআরটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসএম মনজুরুল হক। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানির অভিযোগে বাসটিকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন তিনি।
কথা হলে নির্র্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসএম মনজুরুল হক বলেন, এর আগেও আমি নতুন ব্রিজ (শাহ আমানত ব্রিজ) এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেছি। এবার ভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নিলাম। অভিযানের আগে পুলিশ ফোর্সসহ সবাইকে আমি ব্রিজের দক্ষিণ পাশে পাঠিয়ে দিই। মুখে মাক্স পরে আমি বাসগুলোতে বিভিন্ন এলাকায় যাওয়ার জন্য ভাড়া জিজ্ঞেস করি। তারা অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করে। শেষে আমি দোহাজারী যাওয়ার জন্য সাতকানিয়ার একটি বাসে উঠি। ওই বাসের সহকারী দোহাজারী যাওয়ার জন্য ৮০ টাকা ভাড়া দাবি করেন। এমনিতে সেখানে ভাড়া হওয়ার কথা ৩৫/৪০ টাকা। দ্বিগুণ ভাড়া দাবি করেন তারা। যাত্রী বেশে নদীর দক্ষিণ পাশে গিয়ে গাড়িটিকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সেখানে আরো কয়েকটি বাসে অভিযান করে আবার উত্তর প্রান্তে চলে আসি।
চট্টগ্রাম শহর থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রামে যাতায়াতের অন্যতম পথ শাহ আমানত সেতু (নতুন ব্রিজ)। এই পথই হয়েই পাবর্ত্য এলাকা বান্দরবান ও কক্সবাজার যেতে হয়। বাস টার্মিনাল না হলেও অস্থায়ী টার্মিনালে পরিণত হয়েছে নতুন ব্রিজ মোড়। এখান থেকেই প্রায় যাত্রী দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিভিন্ন রুটে যাতায়াত করে। দীর্ঘদিন থেকেই এ রুটের যাত্রীদের অভিযোগ সপ্তাহিক বন্ধের আগের দিন ও বিভিন্ন দিবসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে চালকরা-মালিকরা। সন্ধ্যা হলেই বেড়ে যায় গাড়ির ভাড়া। কখনো কখনো সেটা দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়। বিশেষ করে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, পটিয়া, বাঁশখালীর যাত্রীদের গুনতে হয় অতিরিক্ত ভাড়া। প্রতিবাদ করলে বাসের চালক ও সহকারীরা দুর্ব্যবহার করেন। অনেক সময় শারীরিকভাবেও লাঞ্ছিত করেন যাত্রীদের। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি নতুন ব্রিজ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসএম মনজুরুল হক। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে জরিমানাও করেন তিনি। ধারাবাহিক অভিযানের পর দৃশ্যপটের কোনো পরিবর্তন হয়েছে কিনা সেটা দেখার জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার যাত্রীর বেশ নেন তিনি। এসময় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানির দৃশ্য নিজ চোখেই দেখেন। ম্যাজিস্ট্রেট বাসে উঠে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া কথার জিজ্ঞেস করলে যাত্রীরা সবকিছু জানিয়ে দেন। যাত্রীরা জানান, লোকালে পটিয়ার ভাড়া যেখানে ২০ টাকা করে নেয়ার কথা সেখানে রিজার্ভ নাম দিয়ে ৬০ টাকা করে নিচ্ছে। একইভাবে দোহাজারীর ভাড়া ৫০ টাকা কিন্তু নেয়া হচ্ছে ৮০ টাকা আর কেরানীহাটের ভাড়া যেখানে ৬০ টাকা সেখানে নেয়া হচ্ছে ১০০ টাকারও অধিক। ম্যাজিস্ট্রেট প্রত্যেক গাড়িকে বিভিন্ন অংকের জরিমানা করেন। আবার যেসব গাড়িতে ট্যাক্স টোকেন, রুট পারমিট মেয়াদোত্তীর্ণ সে সব গাড়ির কাগজপত্র জব্দ করেন। অভিযানে ১০টি মামলায় ৭৫ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করেন। জব্দ করেন ৬টি গাড়ির কাগজ।
মনজুরুল হক বলেন, অভিযানে যাত্রী হয়রানি, ফিটনেস ও লাইসেন্স না থাকাসহ বিভিন্ন অপরাধে দশটি মামলায় ৭৫ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। জব্দ করা হয় ৬টি গাড়ির কাগজ। সাধারণ মানুষকে সচেতন করার উদ্দেশে হ্যান্ড মাইকিং করি। চালক, হেলফার ও গাড়ির মালিকদের সতর্ক করা হয়।
এদিকে গতকাল নগরীর সিনেমা প্যালেস এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াউল হক মীর।
অভিযানে ৭টি মামলায় ৩৪ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। তিনটি গাড়ির ডকুমেন্ট জব্দ করে ডাম্পিংয়ে পাঠানো হয়।