লেখক, পাঠকসহ বইপ্রেমীদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে

55

বাংলা একাডেমি পদকপ্রাপ্ত , সাহিত্যিক দৈনিক আজাদীর সহযোগী সম্পাদক রাশেদ রউফ বলেছেন, সামগ্রিকভাবে বইমেলার আয়োজন অত্যন্ত সফল হয়েছে। চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক কর্মী, লেখক, পাঠকসহ বইপ্রেমীদের স্বপ্ন অনেকাংশে পূরণ হয়েছে।
বইমেলার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে শিশু সাহিত্যের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত এ কবি বলেন, ব্যবস্থাপনায় অনেক ত্রুটি ছিলো। অনেকে দায়িত্ব ঠিকমতো মেনটেইন করতে পারেনি। আশা করছি, আগামীতে সমস্যাগুলো থেকে উত্তরণ হওয়া যাবে। তবে সামগ্রিকভাবে ইচ্ছেটা মহৎ ছিলো। মেলা অনেক সুন্দর হয়েছে।
আগামীতে আরো সমৃদ্ধ মেলা করার বিষয়ে কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক রাশেদ রউফ বলেন, মেলাকে আরো প্রসারিত করার জন্য চট্টগ্রামের যে রত্নগুলো আছে তাদের সম্মিলন ঘটানো প্রয়োজন। চট্টগ্রামে কবি, সাহিত্যিক, পন্ডিত এমন অনেক রত্ন আছেন। তাদেরকে এক জায়গায় করা দরকার। মেলার অনুষ্ঠানগুলো যথেষ্ট অগোছালো ছিলো। মেলার সম্মেলন মঞ্চের অনুষ্ঠান গোছানো দরকার। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো থেকে উত্তরণ ঘটাতে হবে।
তিনি বলেন, প্রতিদিন আমি মেলায় গেছি। আমার দশটি বই প্রকাশিত হয়েছে। সেগুলো নিয়ে পাঠকদের সাথে নিয়মিত আড্ডায় মিলিত হয়েছি। আমি নিজেও অনেক বই কিনেছি। বইমেলার সময়গুলো পরম আনন্দেই কেটেছে।

পাঠক ও লেখকদের
গন্তব্য নির্ধারিত
হয়েছে
বিশ্বজিৎ চৌধুরী

কবি ও সাংবাদিক, দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেছেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে লেখক-সংস্কৃতিকর্মীরা অভিন্ন বইমেলার কথা বলে আসছিলাম।
অভিন্ন বইমেলা বলতে একটা নির্ধারিত তারিখ ও ভেন্যু চেয়েছিলাম। পাঠক ও লেখকের একটা নির্ধারিত গন্তব্য চেয়েছিলাম। আগে যে বইমেলাগুলো হয়েছিল, সেগুলো একেক জায়গায় হয়েছে, একেক সময়ে হয়েছে। পাঠক-লেখক কেউ বুঝতে পারেনি বইমেলা কখন। এবার সিটি মেয়র সে দাবি মেনে নিয়েছেন। সিটি কর্পোরেশন নির্ধারিত সময় ও স্থানে বইমেলা করবে বলেছে। এর মাধ্যমে পাঠক ও লেখকদের গন্তব্য নির্ধারিত হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রথমবারের মতো বইমেলা অন্য সময়ের চেয়ে ভালো হয়েছে। এর মাঝেও মেলায় কিছু অসঙ্গতি ছিল। অনেকে সুন্দর করে স্টল সাজায়নি। কয়েকটি স্টল আসেনি। তারা হয়তো শঙ্কিত ছিল। আশা করছি, আমাগীতে আরও অনেক প্রকাশক মেলায় আসবে। আরও সুন্দর বইমেলা হবে।
বইমেলার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে লেখক ও সাংবাদিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, ব্যবস্থাপনার উদ্যোগী তরুণদের আরও বেশি সম্পৃক্ত করা দরকার ছিল। আমরা দেখেছি, তরুণরা বেশি উদ্যোগী হয়। তাছাড়া চিন্তা-ভাবনায়ও তারা এগিয়ে থাকে। নানাভাবে তারা প্রচারণা চালাতে পারে। তরুণদের সম্পৃক্ততা আরও বাড়নো দরকার। তাছাড়া মেলার মঞ্চের অনুষ্ঠান আরও ভালো হতে পারে। এবার ভালো একটা মেলার মাধ্যমে ধারণা পাওয়া গেছে। সেটা থেকে সামনে আরও ভালো বইমেলা হবে। এবার সফল বইমেলা হয়েছে। সামনে এটা উদাহরণ রেখে আরও ভালো বইমেলা হবে। আরও সুন্দর হবে, অবশ্যই সুন্দর পথ দেখাবে।
তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারির ২৫ তারিখ পর্যন্ত আমি নিয়মিত বইমেলায় গেছি। কিছু বইও কিনেছি। বইমেলায় অনেক সময় নিয়ে ঘুরেছি। বই কেনার পাশাপাশি কিছু বই পছন্দও করে রেখেছি। তরুণ কবিদের কিছু বই কিনেছি।

সামনের আয়োজনে
দুর্বলতাগুলো
কাটিয়ে উঠবে
কামরুল হাসান বাদল

দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশের সহযোগী সম্পাদক, বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক কামরুল হাসান বাদল বলেছেন, এবারের বইমেলা খুব ভালো হয়েছে, এতে কোন সন্দেহ নেই।
চট্টগ্রামের লেখক-প্রকাশক, যারা বই পড়তে ভালোবাসেন, তাদের একটাই দাবি ও প্রত্যাশা ছিল বিচ্ছিন্নভাবে না হয়ে বৃহৎ পরিসরে বইমেলা আয়োজন করার। কয়েক বছর ধরেই সেটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। এবার মেয়র উদ্যোগ নিয়েছেন। সবকিছু তিনি মেনে নিয়েছেন। যে জায়গা ঠিক করা হয়েছে সেটাও সবদিক থেকে ঠিক আছে। বইমেলা সফলভাবে শেষ হচ্ছে।
মেলার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে তিনি বলেন, সব ব্যবস্থাপনায় কিছু ত্রুটি থাকে। এবারের মেলার ব্যবস্থাপনায়ও তেমনি কিছু ত্রুটি ছিল। তবে এবারের অভিজ্ঞতা থেকে সামনের আয়োজনে দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে উঠবে। শব্দ দূষণের ব্যাপার ছিলো। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শব্দ মেলায় যেন না আসে সেটার ব্যবস্থা করা দরকার ছিল। এতে পাঠক-লেখকদের মেলা প্রাঙ্গণে কথা বলতে বেগ পেতে হয়েছিল। আগামীতে সেটা আশা করি থাকবে না।
কামরুল হাসান বাদল বলেন, ১০ তারিখ থেকে মেলা করার প্রস্তাব আমরা করেছিলাম। মনে করেছিলাম, ঢাকার বইমেলা যেহেতু এক তারিখ থেকে হয় ঢাকার প্রকাশকরা একই সময়ে চট্টগ্রামে স্টল করার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়বেন। কিন্তু এবার অনেকেই এক তারিখ থেকে মাসব্যাপী বইমেলা করার দাবি করেছেন। সেটা চিন্তা করা যায়। মাসব্যাপী বইমেলা হলে খারাপ হবে না।
তিনি বলেন, বইমেলায় আমি প্রতিদিন গিয়েছিলাম। অসুস্থতার জন্য শেষের দু-চারদিন যেতে পারিনি। অনেক বই কিনেছি। পছন্দও করা আছে কয়েকটি বই। শনিবার শেষ দিনে গিয়ে পছন্দের বইগুলোও কিনে নিব।

ঢাকার তুলনায় 
ব্যবস্থাপনা 
ভালো ছিলো
নাজিমুদ্দীন শ্যামল

চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সভাপতি, বিশিষ্ট লেখক ও কবি নাজিমুদ্দীন শ্যামল বলেছেন, প্রথমবারের মতো বৃহৎ আকারের বইমেলা হিসেবে চট্টগ্রামের অমর একুশে বইমেলা অনেক ভালো হয়েছে। কিছু ত্রুটি ছিলো। তবে ঢাকার তুলনায় এখানকার ব্যবস্থাপনা ভালো ছিলো। তিনি বলেন, এবারের বইমেলায় আমার তিনটি বই প্রকাশিত হয়েছে। ভালো সাড়া পেয়েছি। প্রায় প্রতিদিন আমি বইমেলায় উপস্থিত ছিলাম। বই কিনেছি অনেক।
বইমেলার আয়োজন সম্পর্কে নাজিমুদ্দীন শ্যামল বলেন, মেলায় প্রচুর বইপ্রেমীর সমাগম ছিলো। পাঠক-লেখকের আগমন ছিলো। বই বিক্রিও ভালো হয়েছে। তবে মেলার অনুষ্ঠান আরো মানসম্পন্ন হওয়ার দরকার ছিলো। বিষয়ভিত্তিক অনুষ্ঠান হলে ভালো হতো।
সফল বইমেলার জন্য করণীয় সম্পর্কে কবি ও সাংবাদিক নাজিমুদ্দীন শ্যামল বলেন, আগামীতে বইমেলাকে আরো পাঠকমুখী করতে স্টল সংখ্যা বাড়ানো দরকার। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন যেহেতু এই মেলার পৃষ্ঠপোষকতা করছে, চট্টগ্রামের লেখক-প্রকাশকদের পৃষ্ঠপোষকতাও দরকার। সিটি কর্পোরেশন থেকে ১০টি বই প্রকাশ করা যেতে পারে। পাঠক-লেখকদের মেলার সাথে আরো সম্পৃক্ততা বাড়ানো দরকার। লেখকদের প্রত্যেকের সম্পৃক্ততা থাকা দরকার।